রবিবার, ৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

পাখির কিচিরমিচিরে মুখর পাহাড়

ফাতেমা জান্নাত মুমু, রাঙামাটি

পাখির কিচিরমিচিরে মুখর পাহাড়

রাঙামাটির হ্রদ-পাহাড় এখন মুখরিত অতিথি পাখির কিচির-মিচির কলতানে। শীতপ্রধান দেশগুলো থেকে এসেছে রং-বেরঙের নানা প্রজাতির পাখি। আর এসব পাখির ভিড় জমেছে সবুজ পাহাড়ে। ভোর হলে কুয়াশার বুক চিরে ডুবো চরে বসে দেশি-বিদেশি পাখির মিলন হাট। শুরু হয় কাপ্তাই হ্রদের স্বচ্ছ জলে পাখিদের খুনসুটি। কখনো হ্রদের বুকে ডুব সাঁতার, কখনো আবার ঝাঁক বেঁধে আকাশের নীলে ওড়াওড়ি। আর যখন সন্ধ্যার আকাশে গোধূলির সোনালি রঙ ছড়িয়ে পড়ে, তখনি শুরু হয় পাখিদের মিছিল- কিচির-মিচির ছন্দের তালে সারি বেঁধে ফিরে যায় পাহাড়, বন ও বাঁশঝাড়ের অস্থায়ী নিড়ে।

পাহাড়ে দল বেঁধে আসছে ঝাঁকে ঝাঁকে অতিথি পাখি। আর এসব পাখি ঠিকানা গড়ছে রাঙামাটি কাপ্তাই হ্রদ ঘেঁষে বেড়ে ওঠা বৃক্ষগুলোয়। শীতের মৌসুমি পাখি আর দেশীয় শালিক-টিয়া ও বাদুরের জন্য শহরের ডিসি বাংলো এলাকার বৃক্ষগুলো যেন অভয়াশ্রম। বাংলোর পেছনে হ্রদের ওপর গাছগুলোতে শত শত অতিথি পাখির কলতানে মনোমুগ্ধকর প্রকৃতি একাকার হয়ে মিশে গেছে। প্রায় প্রতিদিন ওরা আসছে প্রকৃতির টানে দূর-দূরান্ত থেকে। পাহাড়, বন আর স্বচ্ছ জলধারা অতিথি পাখিদের বেশি আকর্ষণ করে।

শীত এলেই রাঙামাটি ডিসি বাংলো এলাকার গাছগুলোতে দেখা মেলে হাজারো অতিথি পাখি। সুদূর সাইবেরিয়াসহ বিভিন্ন শীতপ্রধান দেশ থেকে পাহাড়ে এসেছে ফ্লাইফেচার, জলকুট, পর্চাড, জলপিপি, পাতারী, গার্নিগি, পাস্তামুখী, নর্দানপিন্টেলসহ নানা প্রজাতির পাখি। অতিথি পাখির সঙ্গে যোগ দিয়েছে দেশীয় সরালি, ডাহুক, পানকৌরি, বক, বালিহাঁসসহ নানা প্রজাতির পাখি। পাখির কলকাকলিতে মুখর এই অভূতপূর্ব সৌন্দর্য উপভোগ করতে ডিসি বাংলো এলাকায় ছুটে যাচ্ছেন প্রকৃতিপ্রেমিরা। তথ্য সূত্রে জানা গেছে, শুধু রাঙামাটি শহর এলাকা নয়, অতিথি পাখির দেখা মিলছে জেলার সুবলং, লংগদু, কাট্টলী, মাইনিমুখ, সাজেক, বাঘাইছড়ি, হরিণা, বিলাইছড়ি ও বরকলে। বিভিন্ন দেশ থেকে আসা এসব পাখির কলরবে কানায় কানায় ভরে গেছে নদীর তীর ও জলেভাসা চরগুলো। তাছাড়া প্রত্যন্ত পাহাড়ি এলাকার ডুবচর ও নদীর পাড়ে যেসব পাখি বেশি দেখা যায় এর মধ্যে রয়েছে- পাতিহাস, ডাহুক, কালাম, বক, ছোট সরালি, বড় সরালি, টিকি হাঁস, মাথা মোটা টিটি, চোখাচোখি, গাং চিল, গাং কবুতর, চ্যাগা ও জল মোরগ, বইধরসহ নাম না জানা অনেক পাখি। অতিথি পাখির কলতানে মুখরিত পাহাড়ি অঞ্চল।

এ ব্যাপারে রাঙামাটি জেলা প্রশাসক এ কে এম মামুনুর রশিদ বলেন, প্রতি বছর শীত মৌসুমে সাইবেরিয়া ও হিমালয়ের উত্তরে প্রচন্ড  শীত ও তুষারপাত হয়। এ সময় শীতপ্রধান সাইবেরিয়া, মঙ্গোলিয়া ও নেপাল থেকে নিজেদের বাঁচাতে পাখিরা ডানায় ভর করে হাজার হাজার মাইল পথ পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশসহ সংলগ্ন নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে চলে আসে। দেশের হাতেগোনা যে কয়েকটি এলাকায় অতিথি পাখিরা ক্ষণস্থায়ী আবাস গড়ে তার মধ্যে অন্যতম পার্বত্যাঞ্চল। মূলত অক্টোবরের শেষ ও নভেম্বরের প্রথম দিকেই রাঙামাটি ডিসি বাংলোর গাছগুলোতে তাদের আসতে দেখা যায়। আবার মার্চের শেষদিকে এরা ফিরে যায় আপন ঠিকানায়।

সর্বশেষ খবর