সোমবার, ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

কারও সমস্যা, কারও জীবিকা

মাহবুব মমতাজী

কারও সমস্যা, কারও জীবিকা

রাজধানী ঢাকার নিত্যদিনের এক সমস্যার নাম বর্জ্য। আবার বেশ কিছু মানুষের জীবিকা হচ্ছে বর্জ্য অপসারণ আর বর্জ্য ঘাঁটাঘাঁটি করে বিক্রয়যোগ্য ‘মাল’ উদ্ধার করা। যেমন আবদুল করিম। তিনি রোজ বিক্রি করেন গড়ে ১০০ টাকার প্লাস্টিক বোতল ও কাগজ। তার বাড়ি জামালপুরের মাদারগঞ্জে। ২০০১ সালে নদী ভাঙনে নিঃস্ব হয়ে ঢাকায় এসে বাসাবাড়ির ময়লা সংগ্রহের কাজ শুরু করেন। করিম জানান, বর্তমানে ঢাকা শহরে তাদেরই সংগ্রহ করা বর্জ্য নিয়ে কোটি টাকার বাণিজ্য হয়। ময়লার ভাগাড়েই সিটি করপোরেশনের নিবন্ধনের বাইরে থাকা হাজারো পরিচ্ছন্নতাকর্মীর সঙ্গে আছেন করিম, আলী ও রবিনরা। ময়লা আবর্জনাই তাদের রুজির উৎস। নগরীতে এরা পরিচিত মুখ। বেলা হতেই বাসাবাড়িতে এসে ভ্যান থামিয়ে বাঁশি বাজিয়ে হাঁক দেন ‘ময়লা নিবার আইছি, দিয়া যান।’ পরে ডাস্টবিন থেকে সিটি করপোরেশনের ট্রাক ময়লা অন্যত্র সরিয়ে নেয়। কেউ কেউ ডাস্টবিনে ফেলা ময়লা-আবর্জনার মাঝে নানা পরিত্যক্ত জিনিস সংগ্রহের পর তা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে। রামপুরা ঝিলকাননে ৬ বছর ধরে ময়লার সঙ্গে জড়িত ১৭ বছরের কিশোর আলী। সে বাসাবাড়ি থেকে ময়লা সংগ্রহ কাজের সহযোগী। এরপর ডাস্টবিন থেকে প্লাস্টিকের বোতল, পলিথিন, জুতা সংগ্রহ করে তা বিক্রি করে বাড়তি উপার্জন হয় তার। আলী জানায়, সকালে ঘুম থেকে ওঠে ময়লার ভ্যানের সঙ্গে বের হয় সে। বাসাবাড়ির ময়লার সঙ্গে থাকা পরিত্যক্ত প্লাস্টিকের বোতল ও কাগজ আলাদা করে রেখে বস্তায় ভরে তারা। এরপর সিটি করপোরেশনের নির্ধারিত ডাস্টবিনে ময়লা ফেলে আসে। সেখানেও কিছু জিনিস বাছাই করে বিক্রির জন্য নিয়ে যাওয়া হয় ভাঙাড়ির দোকানে। প্লাস্টিকের বোতল ২০ টাকা কেজি দরে, ভালো পলিথিন ৩০ টাকা, আর জুতা-স্যান্ডেল ১৫ টাকা। খোঁজ নিজে জানা যায়, এলাকাভিত্তিক ক্লাব কিংবা সমিতি গঠনের মাধ্যমে একচ্ছত্র ময়লার বাণিজ্যে মেতেছে প্রভাবশালী কিছু লোক। যারা সিটি করপোরেশনে পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে নিবন্ধিত, তাদের সুপারভাইজার বানিয়ে এরা বিভিন্ন এলাকার ময়লা সংগ্রহের কাজ নিয়ন্ত্রণ করছে। ফ্ল্যাট প্রতি মাসিক ১০০ টাকা চুক্তিতে বর্জ্য নিয়ে যায় সমিতির লোকেরা। আগে এমন কাজ ছিন্নমূল মানুষেরা করত। এখন ‘সাহেব’দের দিয়ে এ কাজ করানো হয়। মিরপুর, ধানমন্ডি, গুলশান, রামপুরা, মহানগর প্রজেক্ট, ওয়ারী, যাত্রাবাড়ী ও মোহাম্মদপুর এলাকায় এই সিস্টেমই বলবৎ আছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের তথ্যানুযায়ী- বিভিন্ন জায়গায় ৫০০-এর বেশি স্থানে ময়লার কনটেইনার আছে। একটি ভ্যান প্রতিদিন ১০০ ফ্ল্যাট থেকে ময়লা আনে। আর একটি কনটেইনারে কমপক্ষে ২০ ভ্যান ময়লা ফেলে। সেই হিসাবে ১০ হাজার ভ্যান ময়লা কনটেইনারগুলোতে ফেলছে। ময়লা নিয়ে যাওয়া বাবদ প্রতি ফ্ল্যাটের লোকজন গড়ে ১০০ টাকা করে দিলে মোট অঙ্ক দাঁড়াবে প্রায় ১০ কোটি টাকা। সিটি করপোরেশনের নিয়মানুযায়ী- কোথাও ময়লা সংগ্রহের ব্যবসা করতে হলে সিটি করপোরেশনের অনুমোদন নিতে হয়। কিন্তু রাজধানীর পাড়া-মহল্লায় ময়লা সংগ্রহকারী সমিতির কারও অনুমোদন নেই বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। জানা যায়, মাস শেষে ময়লা সংগ্রহ বাবদ ১০০ টাকা রসিদে সংগ্রহকারীর নাম, প্রতিষ্ঠান, মোবাইল নম্বর এবং ঠিকানা উল্লেখ করা হয় না। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৫৪ নম্বর ওয়ার্ডের বর্জ্য পরিদর্শক সিরাজুল ইসলাম এ প্রতিবেদককে জানান, যাদের ময়লা সংগ্রহের কাজে দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা রয়েছে তাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে নিবন্ধন করাই। এরপর বিভিন্ন এলাকা ভাগ করে দেওয়া হয় ময়লা সংগ্রহের জন্য। তাদের কোনো বেতন-ভাতা নেই। তবে প্রতি বাসা থেকে মাস শেষে ৩০-৪০ টাকা করে নিতে বলা হয়। কিন্তু কোনো ক্লাব বা সমিতির নামে ময়লা সংগ্রহের অনুমোদন নেই। বাসাবাড়ি থেকে ময়লা সংগ্রহ করা পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের একজন আবদুল করিম বলেন, তারা নির্দিষ্ট কিছু এলাকার বাড়ি থেকে ময়লা সংগ্রহ করেন। তারা একজন সুপারভাইজারের অধীনে এসব কাজ করেন। ওই সুপারভাইজারই মাস শেষে ময়লার বিল তোলেন আর তাদের ৫/৬ হাজার টাকা বেতন দেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর