শিরোনাম
বুধবার, ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা
অষ্টম কলাম

শিক্ষক একজন শিক্ষার্থী ২০০

বাগেরহাট প্রতিনিধি

বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলায় রাজাপুর ইয়াছিন মেমোরিয়াল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টিতে দুই শতাধিক শিক্ষার্থী থাকলেও শিক্ষক আছেন নামে মাত্র একজন। ফলে লেখাপড়া মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। ভেস্তে যেতে বসছে সরকারের ‘সবার জন্য প্রাথমিক শিক্ষা’ কর্মসূচি। বিদ্যালয়টিতে প্রায় দুই বছর ধরে প্রাক-প্রাথমিক থেকে পঞ্চম পর্যন্ত ছয়টি ক্লাসের শিক্ষার্থীদের মাঝেমধ্যে দু-একটি ক্লাস হলেও অধিকাংশ সময়ই কোনো ক্লাস হয় না। ১৯৭২ সালে ভোলা নদীর তীরে ওই স্কুলটি স্থাপিত হলেও সুন্দরবনসংলগ্ন এলাকার পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠীর ছেলেমেয়েদের এখন বিদ্যালয়টি কোনো উপকারে আসছে না। অভিভাবকরা তাদের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া করার জন্য স্কুলে পাঠালেও অধিকাংশ সময় ক্লাস না করেই বাড়ি ফিরতে হচ্ছে তাদের। উপজেলা সদর থেকে একটু দুর্গম এলাকায় স্কুলটির অবস্থান হওয়ায় উপজেলা শিক্ষা দফতর কর্তৃপক্ষের কোনো নজরদারিও নেই। পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর শিশুদের শিক্ষার মান উন্নয়নের জন্য উপজেলা শিক্ষা দফতরকে বার বার অনুরোধ করা হলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তা আমলে নিচ্ছে না বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। জানা গেছে, রাজাপুর ইয়াছিন মেমোরিয়াল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টির ছয়টি শ্রেণিতে ভর্তি থাকা শিক্ষার্থীর অধিকাংশেরই অভিভাবকদের পেশা সুন্দরবনের কাঠ কাটা ও মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ। তাদের পক্ষে ছেলেমেয়েদের নামিদামি বিদ্যাপীঠে লেখাপড়া করানো সম্ভব নয়। মানসম্মত ভবন, ক্লাসরুম, উপবৃত্তি, টিফিন ব্যবস্থাসহ নানা সুযোগ-সুবিধা থাকলেও কেবল চরম সংকট রয়েছে শিক্ষকের। বিদ্যালয়টির পরিচালনা পরিষদের সভাপতি প্রভাষক মো. কামাল হোসেন তালুকদার বলেন, ‘স্কুলের শিক্ষক সংকটের বিষয়টি উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে অবহিত করা হয়েছে। রহস্যজনক কারণে কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় পড়ালেখা দুই বছর ধরে এক প্রকার বন্ধ আছে। এ ছাড়া মাঝেমধ্যে দু-এক জন শিক্ষক বিদ্যালয়টিতে যোগদান করলেও কিছুদিন পর শিক্ষা অফিসের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে অন্য স্কুলে বদলি হয়ে যান।’ বিদ্যালয়টির ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. আবদুল আউয়াল জানান, তার একার পক্ষে সব শ্রেণির দুই শতাধিক শিক্ষার্থী ম্যানেজ করে পাঠদান করা সম্ভব নয়। এ ছাড়া শিক্ষা অফিসের মাসিক সভাসহ প্রশাসনিক কর্মকান্ডের জন্য সপ্তাহে তিন-চার দিন স্কুলের বাইরে ব্যস্ত থাকতে হয়। ফলে ওই দিনগুলো শিক্ষকশূন্য হয়ে পড়ে। শিক্ষক সংকটের কারণে শিক্ষার্থীদের পাঠদান ব্যাহত হওয়ার বিষয়সহ শিক্ষক চেয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেও কোনো প্রতিকার মেলেনি। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘দুর্গম ওই স্কুলটিতে মহিলা শিক্ষক পাঠানো যাচ্ছে না। ডেপুটেশনে স্কুলটিতে একজন পুরুষ শিক্ষককে পাঠানোর জন্য জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।’

সর্বশেষ খবর