শুক্রবার, ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

নিঃস্ব হওয়ার কাহিনী

মির্জা মেহেদী তমাল

নিঃস্ব হওয়ার কাহিনী

ইউনিভার্সিটি অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ডের ছাত্র ইউনুস মুন্না বায়রা ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের চাকরির বিজ্ঞাপন দেখে হিসাবরক্ষক পদে আবেদন

করেন। তিনি মিরপুর অফিসে পরীক্ষা দেন। সেদিনই ফরম পূরণের জন্য তার কাছ থেকে ৫০০ টাকা জমা রাখেন। পরদিন তাকে যোগদান করতে বলা হয়। কিন্তু তিনি যেয়ে আর সেই অফিসের অস্তিত্ব খুঁজে পাননি। ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গার এ কে এম তৈয়াবুর রহমান। সম্মানজনক একটি চাকরি থেকে অবসরে গিয়ে বেকার হয়ে পড়েন। তার কাছে পেনশনের কিছু টাকা ছিল। ২০১৬ সালের প্রথম দিকে একটি জাতীয় দৈনিকে সানলাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের ইসলামী একক বীমা (তাকাফুল) প্রকল্পে কিছু লোক নেওয়া হবে। কর্মস্থল হলে রাজধানীর আবদুল্লাহপুরে। পরে সেখানে জেইডি (উন্নয়ন) পদের জন্য আবেদন করেন। চাকরির জন্য আবদুল্লাহপুর শাখায় ডাক পড়ে তার। সেখানে গেলে বিভিন্ন বিষয় বুঝিয়ে ইসলামী একক বীমা (তাকাফুল) প্রকল্পের সদস্য হতে বলে। বার্ষিক প্রিমিয়াম প্রদান পদ্ধতি বা জামানত বাবদ তিন লাখ টাকা নেওয়া হয়। পরে লাইসেন্স ফি বাবদ ২২০ টাকা নেওয়া হয়। সেখানে এফএ কোড নং ৫৭৯৮ এবং জেইডি কোড ২১৩ উল্লেখ রয়েছে। এরপর ২৪ এপ্রিল জেইডি (উন্নয়ন) হিসেবে নিয়োগপত্র দেওয়া হয়। যাতে সিনিয়র সহকারী ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. আ ই ম নেছার উদ্দিনের স্বাক্ষর রয়েছে। কিন্তু চাকরিতে যোগদান করতে গেলে আজ না কাল বলে প্রতারণা শুরু করে। একপর্যায়ে জোর করেই তিনি অফিসে যাতায়াত করতে থাকেন। কয়েকদিন অফিস করার পর সেখান থেকে (আবদুল্লাহপুর শাখা) এক লোক পালিয়ে যায়। পরে বলা হয়, ওই লোকটি তার টাকা নিয়ে পালিয়ে গেছে। জানা গেছে, সারা দেশে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠেছে ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি। এ সবের কোনো কোনো কোম্পানি চাকরি দেওয়ার নামে প্রতারণার ফাঁদ পেতে বসেছে। ৭০০ থেকে ১০ হাজার টাকা হারে ফরম পূরণ বা জামানতের নামে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে তারা।

এমনই একটি চক্রের সন্ধানও পেয়েছে র‌্যাব। বায়রা লাইফ ইন্স্যুরেন্সে চাকরি দেওয়ার নাম করে অর্থ আত্মসাৎকারী প্রতারক চক্রের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে পাঁচজনকে আটক করে র‌্যাব-৪। বুধবার রাজধানীর মিরপুরের অরিজিনাল ১০ নম্বর এলাকায় বেনারশী পল্লীর দুই নম্বর গেট সংলগ্ন একটি অফিসে এ অভিযান চালানো হয়। এরা হলেন- চক্রের মূল হোতা আতাউর রহমান সুমন, রোকন হোসেন, মনোয়ারা বৈগম, মো. রুবেল ও মো. শাহেদ।

র‌্যাব জানায়, তারা দুই বছর ধরে একাধিক লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির নামের আড়ালে প্রতারক চক্রের ৮-৯ জন সদস্যের একটি দল মিরপুর বেনারশী পল্লীতে অফিস স্থাপন করে হাজার হাজার বেকার তরুণ-তরুণী ও ছাত্র-ছাত্রীদের ফুলটাইম এবং পার্ট টাইম চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণা করে বিশাল অঙ্কের টাকা আত্মসাৎ করে আসছে।

র‌্যাব-৪-এর সিপিসি-১-এর কমান্ডার মেজর কাজী সাইফুদ্দিন আহমেদ জানান, প্রতারণার শিকার কয়েকজন চাকরিপ্রার্থীর অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযানটি চালানো হয়। আটককৃতদের কাছ থেকে কয়েক হাজার সিভি, ভুয়া রেজিস্ট্রার, মানি রিসিপ্ট, চাকরি প্রার্থীদের কাছে পাঠানো চক্রের ভুয়া এসএমএসের কন্টেন্টসহ মোবাইল ফোনসেট, প্রচুর চেকবই, ইন্স্যুরেন্সের ভুয়া ফাইল ফর্ম জব্দ করা হয়েছে।

মেজর কাজী সাইফুদ্দিন আহমেদ জানান, বিভিন্ন স্থানে সাঁটানো বিজ্ঞাপন দেখে চাকরিপ্রার্থীরা চক্রের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে টাকা দিয়ে ইন্স্যুরেন্স খোলার কথা জানানো হয়। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই প্রতারণার বিষয়টি বুঝতে পেরে টাকা ফেরত বা অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটার চাইলে চাকরিপ্রার্থীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে ভয়ভীতি দেখিয়ে তাড়িয়ে দেয় চক্রের সদস্যরা।

র‌্যাবের এ কর্মকর্তা বলেন, অভিযানকালে নুর ই নুর ইসলাম ওরফে মনির, মোখলেস ও হাবিব নামের চক্রের অপর তিন সদস্যকে না পাওয়ায় আটক করা সম্ভব হয়নি। তবে আটকের চেষ্টা চলছে। এ ঘটনায় প্রতারিত এক তরুণ বাদী হয়ে মামলা করেছেন।

কাজী সাইফুদ্দিন বলেন, চক্রটি ট্রাস্ট ইসলামিক লাইফ ইন্স্যুরেন্স, বায়রা লাইফ ইন্স্যুরেন্স, বেস্ট ইন্স্যুরেন্স, এন আর বি লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির নাম ব্যবহার করে ভুয়া চাকরির বিজ্ঞাপন দিয়ে ইন্টারভিউয়ের জন্য প্রত্যেক প্রার্থীর কাছ থেকে ৫২০ টাকা রেজিস্ট্রেশন ফি নিয়ে ১০ হাজার টাকা দিলে কনফার্মেশন লেটার ও অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটার নাম করে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করে আসছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর