শুক্রবার, ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

বিকালে সাকিব সন্ধ্যায় জাফর ইকবালে মুগ্ধতা

মোস্তফা মতিহার

বিকালে সাকিব সন্ধ্যায় জাফর ইকবালে মুগ্ধতা

বই মেলায় গতকাল জাফর ইকবাল ছিলেন সব কিছুর কেন্দ্রে -বাংলাদেশ প্রতিদিন

মেলার প্রবেশদ্বার খোলার সময় বিকাল ৩টার দিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অনেকটা নির্জীব থাকে আর সন্ধ্যার দিকে লেখক-পাঠকের পদচারণে মুখর হয়ে ওঠে মেলাপ্রাঙ্গণ। তবে গতকাল সপ্তম দিনের  চিত্রটা ছিল একেবারেই ব্যতিক্রমী। মেলার প্রবেশদ্বার উন্মোচনের সঙ্গে সঙ্গে মেলাপ্রাঙ্গণে আসেন বিশ^সেরা ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান। সঙ্গে ছিলেন কমেন্ট্রি বক্স কাঁপানো ধারাভাষ্যকার চৌধুরী জাফরউল্লাহ শারাফাত। বর্ষাদুপুর থেকে প্রকাশিত এই ধারাভাষ্যকারের বই ‘চৌধুরী জাফরউল্লাহ শারাফাত বলছি’ সিরিজের এবারের বিষয় ‘নাম্বার ওয়ান সাকিব আল হাসান’-এর মোড়ক উন্মোচন করতেই মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান প্রাঙ্গণে এসেছিলেন নন্দিত এই ক্রিকেটার। ৩টার দিকে মেলার দ্বার উন্মোচনের পরপরই মোড়ক উন্মোচন মঞ্চে বইটির মোড়ক উন্মোচন করেন সাকিব। আর এই মঞ্চ থেকেই বাংলাদেশ ক্রীড়া ধারাভাষ্যকার সমিতির বর্ষসেরা ক্রীড়াবিদের পুরস্কার সাকিব আল হাসানের হাতে তুলে দেন সমিতির সভাপতি চৌধুরী জাফরউল্লাহ শারাফাত। পুরস্কার হিসেবে তিনি সাকিবের হাতে ক্রেস্ট ও ১ লাখ টাকার চেক তুলে দেন। এ সময় মোড়ক

উন্মোচন মঞ্চ থেকে সাকিবীয় উন্মাদনা ছড়িয়ে পড়ে সমগ্র সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। সেলফি ও অটোগ্রাফের জন্য বইপ্রেমীরা ভিড় জমান সাকিবের কাছে। ভক্তদের সঙ্গে সেলফি তোলেন বরেণ্য এই ক্রিকেটার। বইটির বিষয়ে লেখক চৌধুরী জাফরউল্লাহ শারাফাত বলেন, ছোট্ট ফয়সাল থেকে দেশসেরা ক্রিকেটার হওয়ার বিভিন্ন গল্প আমি বইটিতে তুলে ধরেছি। এতে পরিবার, বন্ধুবান্ধব ও অন্য খেলোয়াড়রা সাকিবের মূল্যায়ন করেছেন। এ ছাড়া টি-২০-তে সাকিবের অভিষেক, উইজডেনের বর্ষসেরা ক্রিকেটার ইত্যাদি নানা বিষয় বইটিতে তুলে ধরা হয়েছে বলেও জানালেন লেখক। সাড়ে ৩টার দিকে সাকিব চলে যাওয়ার পর ঘণ্টা দুয়েকের জন্য স্থবিরতা নেমে আসে মেলাপ্রাঙ্গণে। সন্ধ্যার দিকে জনপ্রিয় বিজ্ঞান লেখক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল মেলাপ্রাঙ্গণে আসার পর নীরব মেলা হঠাৎ করেই সরব হয়ে ওঠে। জাফর ইকবালের অটোগ্রাফ নিতে ও তার সঙ্গে সেলফি তুলতে এ সময় ভিড় জমান জনপ্রিয় এই লেখকের অগণিত ভক্ত। আজ ছুটির দিন মেলা খুলবে বেলা ১১টায়। আজ মেলার দ্বিতীয় শিশুপ্রহর। বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত শিশুপ্রহরে বাবা-মায়ের হাত ধরে ঘোরার পাশাপাশি সিসিমপুরে ইকরি, বিকরি, হালুমের সঙ্গে দুরন্তপনায় মেতে উঠবে ছোট্ট সোনামণিরা।

সাত দিনে ৮৩২ বই : বাংলা একাডেমির তথ্যানুযায়ী, মেলার প্রথম সপ্তাহে নতুন বই এসেছে ৮৩২টি। এর মধ্যে ২১৪টি কবিতার বই। ১৫০টি বই নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে উপন্যাস। আর ১২৮টি বই নিয়ে তৃতীয় অবস্থানে আছে গল্পের বই। এ ছাড়া সাত দিনে মোট প্রবন্ধ ৪৭, গবেষণা ১৫, ছড়া ২৪, শিশুসাহিত্য ২৩, জীবনী ২৩, রচনাবলি ৪, মুক্তিযুদ্ধ ৩০, নাটক ৮, বিজ্ঞান ১৭, ভ্রমণ ২৩, ইতিহাস ১৮, রাজনীতি ৬, স্বাস্থ্য ৬, রম্য/ধাঁধা ৮, ধর্মীয় ৪, অনুবাদ ৩, সায়েন্স ফিকশন ১৬ এবং অন্যান্য বিষয়ের ওপর এসেছে ৬৫টি নতুন বই।

নতুন বই : বাংলা একাডেমির জনসংযোগ উপবিভাগের তথ্যমতে, সপ্তম দিনে গতকাল মেলায় নতুন বই এসেছে ১৬১টি। এর মধ্যে গল্প ২১, উপন্যাস ২৮, প্রবন্ধ ২, ছড়া ১, কবিতা ৫৩, গবেষণা ৩, শিশুসাহিত্য ৭, জীবনী ৪, মুক্তিযুদ্ধ ৩, বিজ্ঞান ৪, ভ্রমণ ৮, ইতিহাস ৫, রাজনীতি ১, স্বাস্থ্য ১, রম্য ২, ধর্মীয় ৩, সায়েন্সফিকশন ৫ ও অন্যান্য ১০টি। ড. শেখ মেহেদী হাসানের বই ‘চাওয়া পাওয়ার গল্প’ গতকাল মেলায় এসেছে। প্রকাশ করেছে বেহুলা বাংলা। খন্দকার স্বনন শাহরিয়ার উপন্যাস ‘নক্ষত্রের নিচে’ বইমেলায় এসেছে। প্রকাশ করেছে ‘যুক্ত’।

বাংলা একাডেমির সংবাদ সম্মেলন : মেলার প্রথম সপ্তাহের শেষ দিন গতকাল একাডেমির শহীদ মুনীর চৌধুরী সভাকক্ষে সংবাদ সম্মেলন করে বাংলা একাডেমি। এতে মেলা নিয়ে কথা বলেন একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী ও মেলার সদস্যসচিব ড. জালাল আহমেদ। হাবীবুল্লাহ সিরাজী বলেন, মেলার জন্য একটি স্থায়ী মাঠের প্রয়োজন। যেটি হলে মেলাকে আরও সুন্দর করে আয়োজন করা সম্ভব। জালাল আহমেদ বলেন, এবার প্রকাশিত বইয়ের মান ও বিক্রি দুটিই ভালো। সজ্জার বিষয়ে আমরা খুবই সচেতন ছিলাম। যেমনটি চেয়েছি তার অনেকটাই কাছাকাছি যাওয়া সম্ভব হয়েছে। আগামীবার এবারের ভুলত্রুটি পুরোপুরি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে। এদিকে, মেলার ষষ্ঠ দিন ৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাংলা একাডেমি ২৫ লাখ ৩১ হাজার ১৭ টাকার বই বিক্রি করেছে। গতবার এই সময়ে বিক্রির পরিমাণ ছিল ১৮ লাখ ১৪ হাজার ৮৬১ টাকা।

মূল মঞ্চ : গতকাল বিকালে মেলার মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘ভাষাবিজ্ঞানী মুহম্মদ আবদুল হাই : জন্মশতবর্ষ শ্রদ্ধাঞ্জলি’ শীর্ষক আলোচনা। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ড. সৌমিত্র শেখর। আলোচনায় অংশ নেন অধ্যাপক মনিরুজ্জামান, শহীদ ইকবাল ও তারিক মনজুর। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা। সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিকণ্ঠে কবিতা পাঠ করেন রুবী রহমান ও শিহাব সরকার। আবৃত্তি পরিবেশন করেন মাহফুজ মাসুম ও কাজী বুশরা আহমেদ তিথি। সংগীত পরিবেশন করেন ইন্দ্রমোহন রাজবংশী, কান্তা নন্দী, সন্দীপন দাস, সাজেদ ফাতেমী, শান্তা সরকার ও মো. নূরুল ইসলাম।

আজ শিশু-কিশোর চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা : অমর একুশে উদ্যাপনের অংশ হিসেবে আজ সকাল সাড়ে ৮টায় গ্রন্থমেলা প্রাঙ্গণে হবে শিশু-কিশোর চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা। এর উদ্বোধন করবেন চিত্রশিল্পী আবুল বারক্ আল্ভী।

সর্বশেষ খবর