শনিবার, ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

তৃণমূলে ঝিমিয়ে পড়েছে জাপা

মেয়াদোত্তীর্ণ ২৩ জেলায় নাজেহাল অবস্থা, উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে শঙ্কায় প্রার্থীরা

শফিকুল ইসলাম সোহাগ

জাতীয় সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির তৃণমূলের কার্যক্রম ঝিমিয়ে পড়েছে। এমন জেলাও রয়েছে যেখানে ১০ বছর ধরে সম্মেলন হয়নি। সাংগঠনিক ২৩টি জেলা কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগ মুহূর্তে পার্টি চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদের নির্দেশনায় ২১৩ জন প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাহারের পর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও মূল্যায়ন না করায় সারা দেশে নেতা-কর্মীদের মধ্যে হতাশা চলছে। তারা বলছেন, পার্টির চেয়ারম্যানের নির্দেশ অমান্য করে যারা দশম সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে এমপি হয়েছিলেন তাদেরই অধিকাংশকে আবার একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মহাজোটের মনোনয়ন দেওয়া হয়। এভাবে ঘুরেফিরে ২০ থেকে ২৫ জনকে মূল্যায়ন করা হলে সংগঠনকে শক্তিশালী করতে অন্যরা কেন কাজ করবে। এদিকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মহাজোটের বাইরে ১৪৭ জন উন্মুক্ত প্রার্থী ভোটের সময় কেন্দ্রের সহায়তা না পাওয়ায় আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে চাইছেন না।

জানতে চাইলে পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, নির্বাচনের পর দলের কোনো কর্মসূচি নেই। পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ দায়িত্ব দিলে এর মধ্যেই  তিনি চেষ্টা করবেন প্রতিটি অঙ্গ-সংগঠনকে কাউন্সিলের মাধ্যমে সক্রিয় করতে। তিনি বলেন, জাতীয় পার্টিতে যোগ দেওয়ার জন্য বিভিন্ন দল থেকে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। আমরা আশা করছি সংসদে বিরোধী দলের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি সংগঠনকে শক্তিশালী করে আগামীতে জাতীয় পার্টিকে ভালো একটি অবস্থানে নিয়ে যেতে পারব।

জাপা সূত্র জানায়, বৃহত্তর ঢাকার নারায়ণগঞ্জে ৫ বছর ও গাজীপুরে ৪ বছর ধরে সম্মেলনহীন কমিটি দিয়ে চলছে দল। প্রেসিডিয়াম সদস্য মজিবুল হক চুন্নুর কিশোরগঞ্জ জেলায় সম্মেলন হয় না প্রায় এক দশক। তিন বছর ধরে আহ্বায়ক কমিটি দিয়ে চলছে বরিশাল  জেলা। গত বছর পিরোজপুর জেলা জাপা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হলেও সেখানে পুরনোদের বাদ দিয়ে আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর  জেপি থেকে আসা নেতাদের দিয়ে কমিটি করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। বগুড়া ও মৌলভীবাজার জেলায় বছর দুই আগে সম্মেলন হলেও এখনো কমিটি ঘোষণা করা হয়নি। সিলেট জেলা ও মহানগরেও অভ্যন্তরীণ গ্রুপিংয়ের কারণে সংগঠনে গতিশীলতা আনতে পারছেন না বলে জানান জেলা নেতারা। ঠাকুরগাঁও জেলার সাধারণ সম্পাদক রেজাউর রাজী স্বপন বলেন, ভোটের পর আমরা অনেকটা অলস সময় পার করছি। উপজেলা নির্বাচন নিয়ে আমিসহ বিভিন্ন উপজেলা নেতারা প্রস্তুতি নিচ্ছি। আমাদের শেষ পর্যন্ত নির্বাচন করতে দেবে কিনা জানি না। তা ছাড়া জনগণ তাদের ভোট দিতে পারবে কিনা তা নিয়েও সংশয় আছে। জয়পুরহাট  জেলা জাপার সাধারণ সম্পাদক আ ক ম তিতাস মোস্তফা বলেন, গত সংসদ নির্বাচনে কেন্দ্র থেকে কোনো ধরনের খোঁজ নেয়নি। তাই জেলা পর্যায়ে হতাশা আছে। উপজেলা নির্বাচন নিয়েও শঙ্কায় আছি। মাঠে নামিয়ে যদি পর মুহূর্তে বলে প্রত্যাহার কর!

জানা যায়, একাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগ থেকেই সংকটে পড়েছে জাতীয় পার্টি। পার্টির সিনিয়র নেতা আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, রুহুল আমিন হাওলাদার, জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু, কাজী ফিরোজ রশীদ, প্রফেসর দেলোয়ার হোসেন খান, হাফিজউদ্দিন আহমদ, এম এ কাসেম, মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরীসহ দলের সিংহভাগ নেতারা এইচ এম এরশাদের  রোগমুক্তি কামনা করে বিভিন্ন দোয়া ও মিলাদ মাহফিলেও তাদের দেখা মেলেনি। এমনকি পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান বেগম রওশন এরশাদকেও দেখা যায়নি মিলাদ মাহফিলে। তবে গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর চায়ের আমন্ত্রণে তারা ঠিকই উপস্থিত ছিলেন।

গত বছরের ৩ ডিসেম্বর নিজের অসুস্থ অবস্থায় হঠাৎ করে এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদারকে সরিয়ে মসিউর রহমান রাঙ্গাকে মহাসচিব নিয়োগ করা হয়। নির্বাচনের আগে মনোনয়ন বাণিজ্যের অভিযোগ ওঠে হাওলাদারের বিরুদ্ধে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কেউ তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ দেননি। মসিউর রহমান রাঙ্গাকে মহাসচিব করায় নেতা-কর্মীরা প্রত্যাশা করেছিলেন জোটগতভাবে ৬০টি আসন বাগিয়ে আনবেন। রাঙ্গা দায়িত্ব পাওয়ার পর দলের একটি অংশ তাৎক্ষণিক খুশি হলেও পরবর্তীতে রাঙ্গার কর্মকাে র প্রতি তাদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেয়। জাপার একজন ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, রুহুল আমিন হাওলাদার যেখানে ৪৪টি আসন জোটগতভাবে পাওয়ার জন্য অনেকটা চূড়ান্ত করেছিলেন সেখানে রাঙ্গা পেলেন ২৪ আসন। অথচ জাতীয় পার্টির তখন এমপি ছিলেন ৩৭ জন।

দলটির যুগ্ম মহাসচিব জহিরুল আলম রুবেল বলেন, ‘আমাদের অনেক নেতাই মনে করেন, একবার এমপি হয়ে গেলাম তো সারা জীবনে আর নামব না।  প্রেসিডিয়াম মেম্বারদের তো সুখে-দুঃখে কর্মীদের পাশে থাকার কথা। যে কোনো পরিস্থিতি ট্যাকল দেওয়ার কথা। অথচ তারাই পার্টি অফিসে আসেন না।

সর্বশেষ খবর