শনিবার, ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

সুদিন ফিরেছে জাহাজভাঙা শিল্পে

মুহাম্মদ সেলিম, চট্টগ্রাম

সুদিন ফিরেছে জাহাজভাঙা শিল্পে

অস্থিরতা কাটিয়ে ধীরে ধীরে কর্ম চঞ্চল হয়ে উঠছে চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডের জাহাজ ভাঙা ইয়ার্ডগুলো। গত কয়েক মাসের ব্যবধানে ইয়ার্ডগুলোয় একের পর এক বাড়ছে স্ক্র্যাপ জাহাজ। এতদিন স্ক্র্যাপ জাহাজ আমদানি বন্ধ করে দেওয়া ব্যবসায়ীরাও ফিরছেন পুরনো ব্যবসায়। ফলে হারানো যৌবন ফিরে পাচ্ছে সীতাকুন্ড উপকূলের জাহাজ ভাঙা শিল্প। এতে সুদিন ফিরছে কয়েক বছর ধরে স্থবির হয়ে থাকা এই শিল্প খাত।  বাংলাদেশ শিপব্রেকিং অ্যান্ড রি-সাইক্লিং অ্যাসোসিয়েশনের নেতা মাস্টার আবুল কাসেম বলেন, ‘নানান প্রতিকূল পরিবেশের কারণে জাহাজ ভাঙা শিল্প এতদিন স্থবির ছিল। ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছিলেন অনেক ব্যবসায়ী। কিন্তু গত বছরের মাঝামাঝি সময় থেকে ফের চাঙ্গা হতে শুরু করেছে এ শিল্প। এখন অনেক ব্যবসায়ী ফের স্ক্র্যাপ জাহাজ আমদানি শুরু করেছে।’ সীতাকুন্ডে জাহাজ ভাঙা শিল্প ও রি-রোলিং ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যবসায়ী ফরিদ আহমেদ বলেন, ‘ব্যাংক আগের মতো অর্থায়ন শুরু করেছে। বর্তমানে ব্যবসার অনুকূল পরিবেশও রয়েছে। তাই স্ক্র্যাপ জাহাজ আমদানি বেড়েছে।’ জানা যায়, এক সময় সীতাকুন্ডের জাহাজ ভাঙা শিল্পকে ঘিরেই চাঙ্গা ছিল এ এলাকার অর্থনীতি। এ শিল্পকে কেন্দ্র করে সীতাকুন্ডে গড়ে ওঠে হাজার হাজার কোটি টাকার কর্ম কর্মতৎপরতা। কিন্তু ২০১৩ সালের পরবর্তী সময়ে হঠাৎ এ শিল্পের ধস শুরু হয়। ওই সময়ের সীতাকুন্ডে জ্বালাও-পোড়াও সম্পর্কিত রাজনীতিও এ শিল্পে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। দীর্ঘ জ্বালাও-পোড়াওয়ের কারণে দিনের পর দিন জমে  যেতে থাকে কাটা লোহার পরিমাণ। এতে দিন দিন কমে যায় লোহার দাম। একদিকে বেশি দামে স্ক্র্যাপ জাহাজ কেনা, অন্যদিকে কম দামে বিক্রির কারণে অনেকে লোকসানে পড়তে থাকেন। বাড়তে থাকে  লোকসানের পরিমাণ। ফলে একের পর এক বন্ধ হতে থাকে ইয়ার্ড। এক সময় ৯০টি ইয়ার্ডের মধ্যে ৬০টি ইয়ার্ডই বন্ধ হয়ে যায়। গত দেড় বছর ধরে অনেক মালিক জাহাজ আমদানিও বন্ধ করে দেন। এ ছাড়া কিছু অসাধু ব্যবসায়ী এ শিল্পকে ব্যবহার করে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে কোটি কোটি টাকা লোপাট করার অভিযোগ ওঠে। এসব কারণেই স্থবির হয়ে পড়ে জাহাজ ভাঙা শিল্প। কিন্তু ২০১৮ সালের মাঝামাঝি সময় থেকে ফের চাঙ্গা হতে থাকে জাহাজ ভাঙা শিল্প। ব্যবসায়ীরাও আগের মতো বিনিয়োগ করতে থাকে এ শিল্পে। গত এক বছরে শিপইয়ার্ড মালিকরা আমদানি করে প্রায় ২০০ স্ক্র্যাপ জাহাজ। যা ২০১৭ সালের প্রায় দ্বিগুণ। চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডের উপকূলে ৬০ দশকে জাহাজ ভাঙা শিল্পের গোড়াপত্তন হয়। সময়ের ব্যবধানে এ শিল্প লাভ জনক ব্যবসায় পরিণত হয়। ফলে বিভিন্ন ব্যাংকও ব্যবসায়ীদের শত শত কোটি টাকা ঋণ দিতে শুরু করে। ফলে একের পর এক বাড়তে থাকে ইয়ার্ড। সারা দেশে স্ক্র্যাপ জাহাজ ভাঙা লোহার ওপর নির্ভর করে এখানে গড়ে উঠে অসংখ্য রি-রোলিং মিলসসহ নানা কল-কারখানা। এ খাত থেকে সরকার প্রতি বছর এক হাজার কোটি টাকারও বেশি রাজস্ব আয় করে।

সর্বশেষ খবর