রবিবার, ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

খেলাপি ঋণ আদায়ে পুরস্কার ব্যর্থ হলে তিরস্কার

জরিমানাও গুনতে হতে পারে ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগের শীর্ষ কর্মকর্তাদের

মানিক মুনতাসির

খেলাপি ঋণ আদায়ে সবচেয়ে সফলতা অর্জনকারী ব্যাংককে পুরস্কার দেওয়া হবে। একই সঙ্গে খেলাপি ঋণ আদায়ে ব্যর্থ হলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে তিরস্কার করা হবে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে জরিমানাও গুনতে হতে পারে ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগের শীর্ষ কর্মকর্তাদের। এ ছাড়া স্বেচ্ছা ঋণখেলাপিদের ব্যাংকিং সংক্রান্ত অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বাতিল করা হতে পারে। এমনকি স্বেচ্ছা খেলাপিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের পরিমাণ একটা নির্দিষ্ট মাত্রায় নামিয়ে আনাতে সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হচ্ছে। এ-সংক্রান্ত একটি বিশেষ কমিটিও গঠন করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। অর্থ বিভাগ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। সূত্র জানায়, ব্যাংকিং খাতের খেলাপি ঋণ আদায়কে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছে বর্তমান সরকার। এজন্য যে কোনো উপায়ে খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমিয়ে আনার এজেন্ডা নিয়ে কাজ করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তফসিলি ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের এ বিষয়ে ইতিমধ্যে নির্দেশনা দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। খেলাপি ঋণ আদায়ে যেসব ব্যাংক সবচেয়ে ভালো পারফরমেন্স দেখাতে পারবে, তাদের পুরস্কার দেওয়া হবে। কিন্তু যেসব ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী খেলাপি ঋণ আদায়ে পিছিয়ে পড়বে, সেসব ব্যাংককে তিরস্কার করা হবে। পাশাপাশি জরিমানাও করা হতে পারে। এ ধরনের নিয়ম শিগগিরই চালু করতে যাচ্ছে সরকার। জানা গেছে, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর বড় ধরনের দায় হয়ে দাঁড়িয়েছে মন্দ ঋণ বা খেলাপি ঋণ। এর মধ্যে যেসব ঋণ আদায়ের সম্ভাবনা কম, এমন ঋণের ক্ষতি মেনে নিয়ে ব্যাংকিং খাতে ঋণ অবলোপনের (রাইট অফ) ঘটনা বাড়ছে। ইতিমধ্যে ঋণ আদায় করতে না পারায় বাধ্য হয়ে ৫০ হাজার কোটি টাকা অবলোপন (রাইট অফ) করেছে ব্যাংকগুলো। তবে অবলোপন করা এসব ঋণ আবারও পর্যালোচনার উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। এসব ঋণ অবলোপন করার ক্ষেত্রে সঠিক নিয়ম-কানুন মানা হয়েছে কি না বা কোনো খেলাপিকে অবৈধভাবে সুবিধা দেওয়া হয়েছে কি না সেসব বিষয় পর্যালোচনা করা হবে। এজন্য ব্যাংকগুলোতে বিশেষ অডিট করার ঘোষণা দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। সূত্র জানিয়েছে, কাদের কারণে ঋণগুলো খেলাপি হয়েছে, এর সঙ্গে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সম্পৃক্ত কি না, সেটিও খুঁজে বের করা হবে। কারণ ঋণগ্রহীতা চেষ্টা করবে টাকা ফেরত না দিয়ে থাকার জন্য। তাকে সাহায্য-সহযোগিতা করা হয়েছে কি না, সরকারিভাবে কোনো ত্রুটি-বিচ্যুতি হয়েছে কি না, তাও খতিয়ে দেখা হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় এক লাখ কোটি টাকা। আর ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকগুলো ৪৯ হাজার ৭৪৫ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ অবলোপন করেছে। এর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোই অবলোপন করেছে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকার খেলাপি ঋণ। বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালার আলোকে ২০০৩ সাল থেকে ব্যাংকগুলো ঋণ অবলোপন করে আসছে। নীতিমালার আওতায় পাঁচ বছর বা এর বেশি সময় ধরে থাকা খেলাপি ঋণের বিপরীতে শতভাগ প্রভিশন রেখে এবং মামলা করে তা অবলোপন করতে হয়। মাত্র কয়েক দিন আগে সে নীতিমালাও শিথিল করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে খেলাপি ঋণ অবলোপনের সময়সীমা পাঁচ বছর থেকে নামিয়ে তিন বছর করা হয়েছে। যদিও এমন সিদ্ধান্তের কঠোর সমালোচনা করেছেন অর্থনীতিবিদরা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, মামলা ছাড়াই যেসব ঋণ অবলোপন হবে, তা যেন একেবারে মওকুফ না করা হয়। কারণ মামলা না থাকলে এসব ঋণের ব্যাপারে কেউ খোঁজ রাখবে না। এভাবে সুযোগ দিতে থাকলে ঋণখেলাপিরা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠবে। তারা আরও নতুন দাবি জানাবে। বাংলাদেশ ব্যাংককে শক্ত হাতে ব্যাংকিং খাত তদারক করতে হবে। এজন্য আগে প্রয়োজন সরকারের সদিচ্ছা ও রাজনৈতিক অঙ্গীকার।

সর্বশেষ খবর