বৃহস্পতিবার, ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

আসল পোশাক নকল পুলিশ

মির্জা মেহেদী তমাল

আসল পোশাক নকল পুলিশ

রাজধানীর নতুনবাজারে চেকপোস্টে পুলিশ লেখা স্টিকারযুক্ত একটি মাইক্রোবাস দাঁড় করান বাড্ডা বিভাগের একজন পুলিশ কর্মকর্তা।

মাইক্রোবাসে অবস্থানরত রফিকুল ইসলাম নিজেকে টাঙ্গাইল পুলিশ লাইনের পুলিশ সদস্য বলে পরিচয় দেন। রফিকুল ওই কর্মকর্তাকে পরিচয়পত্র দেখালে তার সন্দেহ হয়। এতে তিনি টাঙ্গাইল পুলিশ লাইনে ফোন করলে জানতে পারেন, ওই নাম ও ব্যাচ নম্বরে কোনো পুলিশ সদস্য নেই। তৎক্ষণাৎ রফিকুলকে আটক করা হয়। সঙ্গে পুলিশ লেখা রেইনকোর্ট, চাবিসহ একটি হ্যান্ডকাফ, চারটি পুলিশ আইডি কার্ডসহ অনেক সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়। রফিকুলের দাবি, সে আগে পুলিশে কর্মরত ছিল, প্রিজন ভ্যান চালাত। হয়তো চাকরি থাকাকালীন সে এসব জব্ধ করেছে, না হয় চাকরিচ্যুত হওয়ার পর সংগ্রহ করেছে। এতে বোঝা যায়, সে পুলিশ পরিচয় দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে প্রতারণা করে আসছিল। সর্বশেষ গতকাল র‌্যাব ধলপুরে অভিযান চালিয়ে পুলিশের বিপুলসংখ্যক পোশাক ও ওয়াকিটকিসহ একজনকে গ্রেফতার করেছে। পুলিশ কর্তাদের ভাষ্য, পুলিশের এসব রেইনকোর্ট, হাতকড়া খোলাবাজারে পাওয়া যায়। সেখান থেকে দুর্বৃত্তরা কিনে পুলিশ পরিচয়ে প্রতারণা করছে। অথচ খোলা বাজারে এসব বিক্রি করা সম্পূর্ণ নিষেধ। তা উপেক্ষা করেই অসাধু ব্যবসায়ীরা এসব বিক্রি করছে। পুলিশ সদর দফতরের (লজিস্টিক বিভাগ) সূত্রে জানা গেছে, পুলিশের সরঞ্জাম প্রস্তুতকারী, সরবরাহকারী ও বিক্রয়কারী ৫৬টি অনুমোদিত দোকান রয়েছে। এর বাইরেও অনেক দোকান রয়েছে যারা খুচরা সরঞ্জাম বিক্রি করে। রাজধানীর নয়াপল্টনের পলওয়েল সুপার মার্কেট, রাজারবাগ পুলিশ লাইনের তিন নম্বর গেটের বিপরীতে জেড আর টাওয়ার, জুরাইন, লালবাগ, খিলগাঁও, মোহাম্মদপুর, মিরপুর ও কচুক্ষেত এলাকার মার্কেটে প্রায় ৪৭টি দোকানে এসব সরঞ্জাম বিক্রি হয়। সম্প্রতি হাতকড়া, বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট, বুলেটপ্রুফ হেলমেট ও ¯িপ্রং ছড়ি বিক্রি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার পরও কোনো কোনো দোকানে এসব বিক্রি হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সরকার অনুমোদিত ব্যবসায়ীদের এসব বিক্রির অনুমতি থাকলেও অবৈধভাবে বসানো হয়েছে আরও কিছু দোকান। সূত্র জানিয়েছে, অনুমোদনপ্রাপ্ত ব্যবসায়ীরা একটি দোকানের অনুমোদন নিয়ে একাধিক শাখা গড়ে তুলছেন। ওইসব অবৈধ দোকান থেকে পুলিশের পোশাকসহ সরঞ্জাম দুর্বৃত্তদের হাতে পৌঁছানোর আশঙ্কা রয়েছে। বিষয়টি পুলিশ প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট বিভাগ অবগত। তারপরও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না ওইসব অবৈধ দোকান মালিকদের বিরুদ্ধে। যাত্রাবাড়ী এলাকায় ডাকাতির প্রস্তুতিকালে ১২ ভুয়া গোয়েন্দা পুলিশকে (ডিবি) আটক করা হয়। এদের কাছ থেকেও ডিবি জ্যাকেট, ওয়াকিটকি, হ্যান্ডকাফ, পিস্তল-গুলিসহ পুলিশের অনেক সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়। পলওয়েল সুপার মার্কেটে সরেজমিন দেখা যায়, পুলিশের পোশাক, লাইট ডিটেক্টর, ব্যাজ, বাঁশি, ক্যাপ, বেল্ট, জুতা, পিস্তল রাখার কভার, র‌্যাংকব্যাজ, নেমপ্লেট, লেন ইয়ার্ড, কনস্টেবল থেকে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা পদমর্যাদার ক্যাপ, রিপ্লোটিং ব্রেস্ট, পুলিশ লেখা টর্চলাইট, পুলিশের বিভিন্ন রেঞ্জের ও জেলার ডিপ সাইনসহ প্রায় সব সরঞ্জামই বিক্রি হচ্ছে। মার্কেটে ঢুকতেই নিচতলায় পুলিশের বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট টাঙানো রয়েছে। অথচ পুলিশের কাছে এসব জ্যাকেট জমা দেওয়ার নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু ব্যবসায়ীরা এখনো জমা দেননি। এ ছাড়া সেখানে পোশাক তৈরির ৮টি দর্জি দোকানও রয়েছে। পরিচয় গোপন রেখে সেখানকার একটি দোকানের এক কর্মচারীকে পুলিশের রেডিমেট পোশাক ও বুট আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আছে, কত স্যুট লাগবে? এসব কিনতে বাধ্যবাদকতা আছে কিনা- এমন প্রশ্নে ওই কর্মচারী বলেন, মূলত আইডি কার্ড দেখাতে হয়। সেটা সমস্যা নেই। কী লাগবে বলেই তিনি উঠে দাঁড়ালেন পোশাক ও বুট দেখাতে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর