শনিবার, ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা
জনভোগান্তির প্রতিকারে নতুন উদ্যোগ

ভূমি নামজারি হয়ে যাবে ২৮ দিনেই

নিজস্ব প্রতিবেদক

সেবাগ্রহীতাদের হয়রানি কমাতে ২৮ দিনের মধ্যেই ভূমি নামজারি করার উদ্যোগ নিয়েছে ভূমি মন্ত্রণালয়। এ জন্য ভূমি নামজারি পদ্ধতিকে সহজ করা হচ্ছে। বর্তমানে নামজারি করতে কমপক্ষে ৪৫ দিন লাগে। আর ভোগান্তির তো শেষ নেই। তাই, সম্প্রতি ভূমি মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় নামজারির পদ্ধতিকে সহজ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

সূত্র জানায়, নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২৮ দিনের মধ্যে নামজারি সম্পন্ন করবেন সহকারী কমিশনার ভূমি (এসিল্যান্ড)। দলিল নিবন্ধনের সঙ্গে জমির নামজারি ফি জমা দেওয়া হবে। একই সঙ্গে দলিল গ্রহীতা দলিলের তিনটি কপি সাবরেজিস্ট্রি অফিসে জমা দেবেন। এর মধ্যে এক কপি থাকবে সাবরেজিস্ট্রি অফিসে। এক কপি পাবেন দলিল গ্রহীতা। অন্য কপিটি যাবে এসিল্যান্ডের কাছে। এসিল্যান্ডের কাছে পাঠানো কপির সঙ্গে ভূমি রেজিস্ট্রেশনের সময় নামজারি ফি বাবদ জমা দেওয়া টাকার রশিদ সংযুক্ত থাকবে। একই সঙ্গে ল্যান্ড ট্রান্সফার নোটিস (এলটি) জেলা প্রশাসকরা এসিল্যান্ডের কাছ থেকে সংগ্রহ করে তা প্রতিমাসে প্রতিবেদন আকারে ভূমি মন্ত্রণালয়ে পাঠাবেন। সাধারণ মানুষের ভোগান্তি কমাতেই নামজারির সময়সীমা কমিয়ে আনা হয়েছে। এতে করে হয়রানিরও সুযোগ থাকবে না। মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, নামজারি ভূমি ব্যবস্থাপনায় একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। এসিল্যান্ড, কানুনগো, তহসিলদার, নাজির এবং অন্যান্য কর্মকর্তা এর সঙ্গে সম্পৃক্ত। দীর্ঘদিন নামজারি ফি কম থাকলেও ২০১০ সালে সাবেক ভূমি সচিব আতাহারুল ইসলাম ৫৪০ টাকা নির্ধারণ করেন। পরবর্তীতে তা বাড়িয়ে করা হয় এক হাজার ১৫০ টাকা। বর্তমানে এটাই বহাল রয়েছে। সঙ্গে বিশ টাকার কোর্ট ফিও জমা দিতে হয়। নামজারির আবেদন করতে হয় এসিল্যান্ডের দফতরে। সঙ্গে দলিলের কপি, জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি এবং ভূমি মালিক কিংবা মালিকদের ছবি জমা দিতে হয়। সহকারী কমিশনারের দফতরে আবেদনের কপিটি যাচাই-বাছাইয়ের জন্য পাঠানো হয় সংশ্লিষ্ট তহসিল অফিসে। তহসিল অফিসে জমির মালিকানা সংক্রান্ত বিষয়গুলো নিশ্চিত করার সময় ভূমি মালিককে দলিলের মূল কপিসহ নির্ধারিত তারিখে উপস্থিত থাকতে হয়। তহসিলদার জমির মালিকানাসহ যাবতীয় বিষয় যাচাই-বাছাই করে এসিল্যান্ডকে নির্ধারিত ফরম ও ছকে লিখিত নামজারি প্রস্তাব পাঠান। পরবর্তীতে আবেদনটি নামজারি প্রস্তাব আকারে এসিল্যান্ড অফিসে পাঠানো হয় এবং অনুমোদনের জন্য কানুনগোর মাধ্যমে এসিল্যান্ডের কাছে উপস্থাপন করা হয়। এসিল্যান্ডের অনুমোদনের সময়ও ভূমি মালিককে দলিলের মূল কপিসহ এসিল্যান্ড অফিসে উপস্থিত থাকতে হয়। এসিল্যান্ড অনুমোদন দেওয়ার পর প্রস্তাবের শিটটি আবার তহসিল অফিসে পাঠানো হয়। ওই সময় ভূমি মালিককে নামজারি সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য সংক্রান্ত নামজারি প্রস্তাবের মূল শিটটি দেওয়া হয়। ওই নামজারি প্রস্তাবের শিটে জমির মালিকানা সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্যাদি থাকে এবং ভূমি মালিক ওই শিটটি সংরক্ষণ করবেন। ওই শিটের একটি ফটোকপি ভূমি মালিক পৌঁছে দেন তহসিল অফিসে, তারপর তহসিলদার অনুমোদিত নামজারি প্রস্তাবের শিটের ভিত্তিতে খতিয়ান খোলেন। খতিয়ানে যার কাছ থেকে জমিটি কেনা হলো, যতটুকু কেনা হলো তা বর্তমান মালিকের নামে খারিজ করা হয়। একই সঙ্গে বর্তমান মালিক ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ করে নিজের নামে দাখিলা সংগ্রহ করেন। এর পর ওই খতিয়ানের কপিটি নিয়ে আবার এসিল্যান্ড অফিসে আসতে হয়। নির্ধারিত ফরম পূরণ করে এক হাজার ১৫০ টাকা নামজারি ফি জমা নেন নাজির। ফি জমা দেওয়ার সময় খতিয়ানের কপি নাজিরের কাছে জমা দিতে হয়। এরপর আবার ভূমি মালিককে গিয়ে খতিয়ানের মূলকপি নাজিরের কাছ থেকে সংগ্রহ করতে হয়। নামজারির এই পুরো প্রক্রিয়ার প্রতিটি ধাপেই আর্থিক লেনদেন করতে হয় ভূমি মালিককে। সঙ্গে নানারকম ভোগান্তি তো আছেই। ভূমি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নামজারি সহজ করতে নতুন যে ব্যবস্থা আসছে তাতে নিবন্ধনের জন্য জমা দিতে হবে দুই কপি দলিল নয়, তিন কপি দলিল। এক কপি সাবরেজিস্ট্রার অনুমোদন করে রেকর্ড রুমে সংরক্ষণের জন্য পাঠাবেন। একটি কপি নতুন করে ভূমির যিনি মালিক হবেন তাকে অনুমোদন করে দেওয়া হবে। আর অপর কপিটি এলটি নোটিসসহ নামজারি ফি আদায়ের রসিদসহ এসিল্যান্ডের কাছে নামজারির জন্য পাঠানো হবে। ২৮ দিনের মধ্যে নামজারি সম্পন্ন করে তা ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে। ভূমি মালিকরা ওয়েবসাইট থেকে ডাউনলোড করে খতিয়ানের কপি সংগ্রহ করবেন। সূত্র জানায়, প্রবাসী বাংলাদেশিদের নামজারির আবেদন দ্রুততম সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করা হবে। প্রতিমাসে নতুন এই প্রক্রিয়ায় কতগুলো নামজারি কেস নিষ্পত্তি করা হয়েছে জেলা প্রশাসকরা সে তথ্য এসিল্যান্ডের কাছ থেকে সংগ্রহ করবেন এবং ভূমি মন্ত্রণালয়কে প্রতিবেদন আকারে অবহিত করবেন। এ ছাড়া ভূমির শ্রেণি সংখ্যা ১৫৩ থেকে নামিয়ে ১০টিতে আনা হবে। এদিকে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নামজারিতে ভোগান্তি কমানোর উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রশংসাযোগ্য। তবে নামজারির যে অভিন্ন ফি তা একটি সমস্যা। কারণ চরাঞ্চলের জমির বিঘা মাত্র কয়েক হাজার টাকা। অথচ ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন বিভাগীয়, জেলা ও উপজেলা শহরে জমির মূল্য ভিন্ন ভিন্ন। রাজধানীতে এলাকা ভেদে  জমির কাঠা প্রতি মূল্য কোটি কোটি টাকা। রেজিস্ট্রেশন ফিও অনেক বেশি। কিন্তু নামজারি ফি থাকছে মাত্র এক হাজার ১৫০ টাকা। এতে করে সরকার কোটি কোটি টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

সর্বশেষ খবর