সোমবার, ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

উন্নয়ন তাকিয়ে দেখবে বিশ্ব : প্রধানমন্ত্রী

চট্টগ্রামে বঙ্গবন্ধু টানেল এলিভেটেড এক্সপ্রেস ওয়ে নির্মাণ শুরু

বিশেষ প্রতিনিধি

উন্নয়ন তাকিয়ে দেখবে বিশ্ব : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশকে এমনভাবে গড়ে তোলা হবে যেন সারা বিশ্ব বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকে। এটাই আমার চাওয়া। আর কোনো চাওয়া নেই।

গতকাল পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে সুধী সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশে চীনের শতভাগ ঋণ সহায়তায় ‘বঙ্গবন্ধু কর্ণফুলী টানেলের’ খনন কাজের উদ্বোধনসহ প্রায় ১৩ হাজার কোটি টাকার দুটি প্রকল্প কাজের তিনি উদ্বোধন করেন। ২০১৭ সালের     ১৪ অক্টোবর চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিং পিং এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একত্রে এই টানেল নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন। গতকাল পতেঙ্গায় নামফলক উন্মোচনের মাধ্যমে টানেলের বোরিং কাজ উদ্বোধন করেন তিনি। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ৩ দশমিক ৫ কিলোমিটার এই টানেলটি বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে প্রথম। চার লেন বিশিষ্ট এই টানেল নির্মাণে ব্যয় হবে প্রায় ৯ হাজার ৮৮১ কোটি টাকা। এপ্রোচ রোড হবে ৪ শমিক ৮৯ কিলোমিটার। এর সঙ্গে ৭৪০ মিটার ব্রিজ চট্টগ্রাম শহরকে কর্ণফূলী নদীর পশ্চিম পাশের সঙ্গে সংযুক্ত করবে। অন্যদিকে চট্টগ্রাম শহরের লালখান বাজার থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত এলিভেটর এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে তিন হাজার ২৫০ কোটি টাকা। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু কর্ণফুলী টানেল ও এক্সপ্রেসওয়েটি নির্মিত হলে চট্টগ্রামে আর যানজট থাকবে না। ঢাকা থেকে ফোর লেন সংযুক্ত হয়ে চট্টগ্রামের মেরিন ড্রাইভ ওয়ে ও টানেল হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত সড়ক যোগাযোগে নতুন মাত্রা পাবে। তিনি ২০২০-২১ সালে ‘মুজিব বর্ষ’ পালনের আহ্বান জানিয়ে বলেন, আমরা ‘বাংলাদেশ ব-দ্বীপ পরিকল্পনা-২১০০’ নামে শতবর্ষের পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছি। ২০২০ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং ২০২১ সালে মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করব। মুজিব বর্ষ ঘোষণা করেছি। তিনি বলেন, ২০৭১ সালে স্বাধীনতার শতবর্ষ। আমাদের প্রজন্ম উন্নত, সমৃদ্ধশালী দেশে তা উদযাপন করবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, চীন বাংলাদেশের জন্য এ প্রকল্পে শতভাগ ঋণ সহায়তা দিয়েছে। ২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর এ টানেলের নির্মাণকাজের উদ্বোধন করা হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন চীনের প্রেসিডেন্ট। এ টানেল আনোয়ারা উপজেলাকে চট্টগ্রাম শহরের সঙ্গে যুক্ত করবে। ১০ কিলোমিটার সড়ক করা গেলে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার চার লেন সড়কের সঙ্গে যুক্ত করা যাবে। পদ্মা সেতুর কথিত দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুর্নীতির মামলায় বিশ্বব্যাংক কোনো প্রমাণ দিতে পারেনি। বিশ্বব্যাংক যা যা বলেছে সব ভুয়া, বানোয়াট। আজ পদ্মা সেতু দৃশ্যমান। জীবনে কোনো কিছু চাওয়া-পাওয়ার নেই। তিনি বলেন, চট্টগ্রামে প্রথম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর আওয়ামী লীগ সরকার করে দিয়েছে। আরেকটি কাজ করে দিচ্ছি লালখান বাজার থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। শহরে যানজট কমানোর জন্য বাইপাস করে দিচ্ছি। টানেল নির্মাণ হলে চট্টগ্রামে যোগাযোগ, ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্পায়ন হবে। শেখ হাসিনা বলেন, কোনো নামও চাই না, কোনো ধন-সম্পদও চাই না। বাংলাদেশের জনগণ বিশ্বে মাথা উঁচু করে চলবে, এটাই আমার চাওয়া। সে কারণেই চেষ্টা করি নতুন নতুন কিছু করার যেন বাংলাদেশের মানুষ সম্মানের সঙ্গে চলতে পারে। বাংলাদেশকে ঈর্র্ষণীয় করে তুলতে মানুষের ভাগ্য ও মর্যাদার উন্নয়ন আমার জীবনের লক্ষ্য।’ ওবায়দুল কাদের তার বক্তৃতায় পদ্মা সেতু ‘শেখ হাসিনা পদ্মা সেতু’ করার যে প্রস্তাব দেন সে প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পদ্মা সেতু নিয়ে যখন এত কিছু হয়ে গেছে, তাই এটার সঙ্গে আর কোনো নাম যুক্ত হওয়ার দরকার নাই।’ আমি আমার মন্ত্রীকে বলব, এখানে রাগ, ক্ষোভের কিছু নেই। আমি কোনো নামও চাই না। আমি কিছুই চাই না। জীবনে কোনো কিছু আমার চাওয়া-পাওয়ার নেই। অনুষ্ঠানে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সেতু বিভাগের সিনিয়র সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম এবং চীনের রাষ্ট্রদূত জ্যাং জোউ বক্তৃতা করেন।

টানেলের নির্মাণ কাজের কনসালটেন্ট হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত চায়না কমিউনিকেশন কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেডের (সিসিসিসি) পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে টানেলের একটি রেপ্লিকা উপহার দেওয়া হয়।

 

সর্বশেষ খবর