সোমবার, ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা
ডাকসু নির্বাচন

ছাত্রলীগের পূর্ণ প্যানেল, বিক্ষোভ রিট ছাত্রদলের, বামদের ঐক্য

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক

ছাত্রলীগের পূর্ণ প্যানেল, বিক্ষোভ রিট  ছাত্রদলের, বামদের ঐক্য

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে প্যানেল ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। গতকাল বিকালে মধুর ক্যান্টিনে কেন্দ্রীয় ও হল সংসদের সহ-সভাপতি (ভিপি), সাধারণ সম্পাদক (জিএস) ও সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস)-সহ সব পদে নিজেদের প্রার্থী ঘোষণা করে তারা। তবে মনোনয়নপত্র সংগ্রহের আর একদিন অবশিষ্ট থাকলেও এখনো প্যানেল ঘোষণা করেনি                  ছাত্রদল, কোটা আন্দোলনকারী এবং বামপন্থি ছাত্র সংগঠনগুলো। এদিকে নির্বাচন পেছানোসহ সাত দফা দাবিতে গতকাল দুপুরে উপাচার্য কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে ছাত্রদল। একই দিন প্যানেল ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ছাত্রমৈত্রী। প্যানেল ঘোষণা করতে বিকালে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে ছাত্রলীগ। এতে ডাকসুর ভিপি পদপ্রার্থী হিসেবে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন, জিএস পদে সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী এবং এজিএস পদে ঢাবি শাখার সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেনের নাম ঘোষণা করা হয়। ছাত্রলীগের ঢাবি শাখার সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস সংগঠনটির ডাকসু নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সভাপতি হিসেবে এসব নাম ঘোষণা করেন। একই সঙ্গে তিনি ডাকসু কেন্দ্রীয় সংসদের অবশিষ্ট ৯টি সম্পাদক এবং ১৩টি সদস্য এবং ১৮টি হল সংসদের ভিপি ও জিএস পদপ্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন। এ সময় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় ও ঢাবি শাখার নেতারা উপস্থিত ছিলেন। ডাকসু কেন্দ্রীয় সংসদের মুক্তিযুদ্ধ সম্পাদক পদে সাদ বিন কাদের সাদী, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক পদে আরিফ ইবনে আলী, কমনরুম ও ক্যাফেটেরিয়া সম্পাদক পদে বিএম লিপি আক্তার, আন্তর্জাতিক সম্পাদক পদে শাহরিমা তানজিমা অর্নি, সাহিত্য সম্পাদক পদে মাজহারুল কবির শয়ন, সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে শমস-ই নোমান, ক্রীড়া সম্পাদক পদে শাকিল আহমেদ তানভীর, ছাত্র পরিবহন সম্পাদক পদে রাকিব হাওলাদার ও সমাজসেবা সম্পাদক পদে আজিজুল হক সরকার ছাত্রলীগের হয়ে লড়বেন। অন্যদিকে ছাত্রলীগ ঘোষিত কেন্দ্রীয় সংসদের ১৩টি সদস্য পদপ্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন চিবল সাংমা, নজরুল ইসলাম, রাকিবুল হাসান, রকিবুল ইসলাম ঐতিহ্য, তানভীর হাসান সৈকত, রাইসা নাসের, সাবরিনা ইতি, ইশরাত কাশফিয়া ইরা, নিপু ইসলাম তন্বী, হায়দার মোহাম্মদ জিতু, তিলোত্তমা সিকদার, জুলফিকার আলম রাসেল ও মাহমুদুল হাসান। এদিকে, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল সংসদের ভিপি পদে আকমল হোসেন ও জিএস পদে মেহেদী হাসান শান্ত, মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের ভিপি পদে আবদুল্লাহ আল সুবাইল ও জিএস পদে হাসিবুল হাসান শান্ত, বিজয় একাত্তর হলের ভিপি পদে সজিবুর রহমান সজিব ও জিএস পদে নাজমুল হাসান নিশান, মাস্টারদা সূর্য সেন হলের ভিপি পদে মারিয়ান জামান খান সোহান ও জিএস পদে সিয়াম রহমান, কবি জসীমউদ্দীন হলের ভিপি পদে ফরহাদ উদ্দিন ও জিএস পদে ইমাম হাসান, হাজী মুহাম্মদ মুহসীন হলের ভিপি পদে তৌহিদুল হক শিশির ও জিএস পদে হাসান মিজান, স্যার এ এফ রহমান হলের ভিপি পদে আবদুল আলিম খান ও জিএস পদে আবদুর রহিম, শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের ভিপি পদে সাইফুল্লাহ আব্বাসী অনন্ত ও জিএস পদে রিফাত উদ্দিন, স্যার সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের ভিপি পদে জুলিয়াস সিজার তালুকদার ও জিএস পদে কামাল উদ্দিন, জগন্নাথ হলের ভিপি পদে উৎপল বিশ্বাস ও জিএস পদে কাজল দাস ছাত্রলীগের হয়ে নির্বাচনে অংশ নেবেন। বিজ্ঞান অনুষদের হলগুলোর মধ্যে শহীদুল্লাহ হলের ভিপি পদে হোসেন আহমেদ সোহান ও জিএস পদে ইরফানুল হাই সৌরভ, ফজলুল হক মুসলিম হলের ভিপি পদে শাহরিয়ার সিদ্দিক শিশিম ও জিএস পদে মাহফুজুর রহমান, অমর একুশে হলের ভিপি পদে তামিম মৃধা ও জিএস পদে আহসান হাবিব ছাত্রলীগের প্যানেলে স্থান পেয়েছেন। অন্যদিকে, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব হলের ভিপি পদে কোহিনুর আক্তার রাখি ও জিএস পদে সারা বিনতে জামাল, রোকেয়া হলের ভিপি পদে ইশরাত জাহান তন্বী ও জিএস পদে সায়মা প্রমি, শামসুন্নাহার হলের ভিপি পদে জেসমিন শান্তা ও জিএস পদে উম্মে আরাফাত জাহান লাকী, সুফিয়া কামাল হলের ভিপি পদে ইসরাত জাহান ইভা ও জিএস পদে শাহরিয়ার সুলতানা নদী, বাংলাদেশ কুয়েত মৈত্রী হলের ভিপি পদে রাজিয়া সুলতানা কথা ও জিএস পদে শাওলীন জাহান সেঁজুতি ছাত্রলীগের মনোনয়ন পেয়েছেন। এদিকে ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতৃবৃন্দের ওপর ডাকসুর এই বাড়তি দায়িত্ব সংগঠনের কোনো ক্ষতি করবে কিনা এই প্রশ্নের জবাবে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী বলেন, ছাত্রলীগ সবসময় সাধারণ শিক্ষার্থীদের কথা বলে। এই দায়িত্ব পেলে তাদের পক্ষে আরও কাজ করতে পারব বলে আমরা বিশ^াস করি। এদিকে, ডাকসু নির্বাচন স্থগিতে আদালতের নির্দেশনা চেয়ে রিট করেছেন ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় ছাত্রীবিষয়ক সম্পাদক মজিদ। এটাকে শিক্ষার্থীদের অধিকার হরণের সঙ্গে তুলনা করে ছাত্রলীগের ঢাবি শাখার সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন বলেন, ছাত্রদলের পৃষ্ঠপোষকতায় আদালতের ঘাড়ে বন্দুক রেখে সাধারণ শিক্ষার্থীদের অধিকার ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। এর আগে আসন্ন ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে প্যানেল ঘোষণা করে বাংলাদেশ ছাত্রমৈত্রী। সংগঠনটির ঢাবি শাখার সভাপতি মো. রাসেল শেখকে ভিপি ও সহ-সভাপতি সনম সিদ্দিকী শিতিকে জিএস পদে প্রতিদ্বন্দ্বী করে ২৫ সদস্যের এ প্যানেল ঘোষণা করা হয়। গতকাল দুপুরে মধুর ক্যান্টিনে এক সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রমৈত্রীর কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক কাজী আবদুল মোতালেব জুয়েল প্যানেল ঘোষণা করেন। ডাকসুর  কেন্দ্রীয় সংসদ নির্বাচনে প্যানেল ঘোষণা করলেও হল সংসদে সংগঠনটি কোনো প্যানেল দেবে না বলেও সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়। এদিকে, ছাত্রদল, কোটা আন্দোলনকারীদের প্লাটফর্ম ‘বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ’ ও বামপন্থি ছাত্র সংগঠনগুলো দুই জোট ‘প্রগতিশীল ছাত্রজোট’ এবং ‘সাম্রাজ্যবাদবিরোদী ছাত্রঐক্য’-এর পক্ষ থেকে গতকাল প্যানেল ঘোষণার কথা নিশ্চিত করা হলেও তা করেনি। বিষয়টি নিয়ে প্রগতিশীল ছাত্রজোটের সমন্বয়ক সালমান সিদ্দিকী জানান, অন্য কিছু সংগঠনের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচনে যেতে পারি আমরা। তাদের সঙ্গে এ বিষয়টি আলোচনা চলছে। আলোচনা শেষে আগামীকাল (আজ) আনুষ্ঠানিকভাবে প্যানেল ঘোষণা করা হবে। তবে ‘বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ কেন গতকালও প্যানেল ঘোষণা করেনি’ বিষয়টি জানতে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কয়েকজন নেতার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তাদের সাড়া পাওয়া যায়নি।

উপাচার্য কার্যালয়ের সামনে ছাত্রদলের অবস্থান : এদিকে ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন তিন মাস পেছানো, ভোটকেন্দ্র হলের বাইরে করাসহ সাত দফা দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য কার্যালয়ের সামনে অবস্থান করেছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। গতকাল দুপুর ১২টার দিকে মধুর ক্যান্টিন থেকে ছাত্রদলের শতাধিক নেতা-কর্মী একটি মিছিল নিয়ে উপাচার্য কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেয়। এ সময় ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান বলেন, আমাদের দাবিগুলো প্রশাসনের কর্ণকুহরে প্রবেশ করেনি। তাই তারা তড়িঘড়ি করে নির্বাচন দিয়ে ছাত্রলীগের ডাকসু শাখা গঠনের পাঁয়তারা করছে। তারা হয়তো নির্বাচন করতে পারবে কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৩ হাজার শিক্ষার্থীর মনে স্থান করে নিতে পারবে না। ডাকসু নির্বাচন তিন মাস পেছানোর যৌক্তিকতা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘হলগুলোতে আমাদের সহাবস্থান নিশ্চিত করতে হবে। কারণ সেখানে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সন্ত্রাসীদের যে দখলদারিত্ব রয়েছে, তাতে সেখানে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। তাই সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য নির্বাচন তিন মাস পেছাতে হবে। অবস্থান কর্মসূচিতে ছাত্রদলের ঢাবি শাখা সভাপতি আল মেহেদী তালুকদার ও সাধারণ সম্পাদক আবুল বাশার সিদ্দিকী উপস্থিত ছিলেন।

ডাকসু নির্বাচনের তফসিল স্থগিত চেয়ে রিট : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) আসন্ন নির্বাচনের ঘোষিত তফসিল স্থগিত চেয়ে হাই কোর্টে একটি রিট আবেদন দায়ের করা হয়েছে। গতকাল ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির ছাত্রীবিষয়ক সম্পাদক এবং ঢাবির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক (আইআর) বিভাগের শিক্ষার্থী ফাহমিদা মজিদের পক্ষে হাই কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিট আবেদনটি করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল। পরে রুহুল কুদ্দুস কাজল বলেন, নির্বাচনে ভোটার হওয়ার যোগ্যতা থাকার পরও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের করা ভোটার তালিকায় নাম নেই ফাহমিদার। তিনি বলেন, ফাহমিদা এবারের ডাকসু নির্বাচনে ভিপি পদে নির্বাচন করতে আগ্রহী। কিন্তু ভোটার না হওয়ার কারণে তার প্রার্থী হওয়ার সুযোগ নেই।

বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ হয়ে রিট দায়ের করেন তিনি। রিটে এই শিক্ষার্থীকে নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ না দেওয়ার বিষয়টি কেন আইনবহির্ভূত হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে। সোমবার বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ ও মো. ইকবাল কবিরের সমন্বয়ে গঠিত হাই কোর্ট বেঞ্চে এই রিটের শুনানি হতে পারে বলে জানিয়েছেন রিটকারীর আইনজীবী ব্যারিস্টার কাজল। আগামী ১১ মার্চ ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা রয়েছে।

 

একাডেমিক ভবনে ভোটকেন্দ্রসহ ক্যাম্পাস ও হলে সহাবস্থান নিশ্চিতের দাবিতে উপাচার্য কার্যালয়ের সামনে গতকাল অবস্থান কর্মসূচি পালন করে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল            -বাংলাদেশ প্রতিদিন

 

সর্বশেষ খবর