সোমবার, ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

৫ বছরের বেশি পুরনো মামলা সাড়ে ৫ লাখ

আরাফাত মুন্না

৫ বছরের বেশি পুরনো মামলা সাড়ে ৫ লাখ

নোয়াখালী সদরের গাংচিল গ্রামের বাসিন্দা মো. রাসেল। ১৩ বছর আগে র‌্যাবের অভিযানে রাজধানীর বিমানবন্দর   এলাকা থেকে ৯ বোতল ফেনসিডিলসহ গ্রেফতার হন। র‌্যাব-১-এর তৎকালীন উপসহকারী পরিচালক শহীদ কামাল বাদী হয়ে রাসেলের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে বিমানবন্দর থানায় মামলা করেন। ২১ দিন পরই ২০০৫ সালের ২৯ এপ্রিল আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। আসামির স্থায়ী ঠিকানা যাচাই না করেই অভিযোগপত্র জমা দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে থানার তৎকালীন এসআই শাহজাহান ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে। মাস তিনেকের মধ্যে বিচার শুরু হলেও দীর্ঘ ১৩ বছরে ৯ জন সাক্ষীর মধ্যে বাদী শহীদ কামাল ও করপোরাল হাবিবুর রহমান ও নায়েক গাজিউর রহমান সাক্ষ্য দিয়েছেন মাত্র। মানে বিচার শেষ হয়নি। শুধু মো. রাসেলের এই মামলাটিই নয়। সারা দেশের অধস্তন আদালতে পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে ঝুলে থাকা এমন প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ মামলা রয়েছে। এসব মামলা দ্রুত নিষ্পত্তিতে গত বছর থেকে বিশেষ নজর দিচ্ছে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন। পাঁচ বছরের বেশি পুরনো মামলাগুলোর মাসিক ভিত্তিতে পরিসংখ্যান তৈরি করছে অধস্তন আদলতের নিয়ন্ত্রক এই প্রতিষ্ঠানটি।

সুপ্রিম কোর্টের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত বছর ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত অধস্তন আদালতগুলোতে বিচারাধীন ৩০ লাখ ৩২ হাজার ৬৫৬টি মামলার মধ্যে শুধু দেওয়ানি ও ফৌজদারি পাঁচ লাখ ৪৬ হাজার ২৮টি মামলা রয়েছে ৫ বছরের বেশি পুরনো। এর মধ্যে ৩ লাখ ১৬ হাজার ২৫৪ দেওয়ানি ও ২ লাখ ২৯ হাজার ৭৭৪টি ফৌজদারি মামলা। পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, পাঁচ বছরের বেশি পুরনো মামলা থাকা জেলাগুলোর মধ্যে শীর্ষে ঢাকা। ঢাকা জেলার আদালতগুলোতে এ ধরনের মামলা রয়েছে ৫৯ হাজার ৭৪৩টি। এ ছাড়া ৫০ হাজার ৪৭০টি পাঁচ বছরের পুরনো মামলা রয়েছে চট্টগ্রামের আদালতে। দেশের আদালতগুলোর মধ্যে পাঁচ বছরের বেশি পুরনো সব চেয়ে কম মামলা রয়েছে পঞ্চগড়ে। এখানে এ ধরনের মামলা মাত্র ১ হাজার ৩৩২টি। পাঁচ বছরের বেশি পুরনো মামলা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নিষ্পত্তির লক্ষ্যে গত বছর ২০ ফেব্রুয়ারি প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নির্দেশে এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন। ওই আদেশে প্রতি মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে পুরনো মামলার তালিকা নির্ধারিত ছকে সুপ্রিম কোর্টে পাঠাতে বিচারকদের নির্দেশ দেওয়া হয়। সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল ড. মো. জাকির হোসেন স্বাক্ষরিত ওই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ‘দেশের অধস্তন আদালতসমূহে বর্তমানে ২৮ লাখেরও অধিক মামলা বিচারাধীন এবং ক্রমান্বয়ে মামলার জট বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিচারাধীন মামলার মধ্যে পাঁচ বছরের অধিক পুরনো মামলার সংখ্যাও কম নয়। কাক্সিক্ষত সময়ের মধ্যে মামলার নিষ্পত্তি বিচারপ্রার্থীদের প্রত্যাশা। ফলে মামলা নিষ্পত্তির হার বৃদ্ধিসহ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পাঁচ বছরের অধিক পুরনো মামলা নিষ্পত্তি করে ক্রমবর্ধমান মামলাজট নিরসনের বিকল্প নেই। এ অবস্থায় দেশের সব অধস্তন আদালত/ট্রাইব্যুনালকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পাঁচ বছরের অধিক পুরনো মামলা নিষ্পত্তির নির্দেশ প্রদান করা হলো।’ পাঁচ বছরের পুরনো মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের মুখপাত্র ও স্পেশাল অফিসার ব্যারিস্টার মোহাম্মদ সাইফুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, প্রধান বিচারপতির নির্দেশে পুরনো মামলা নিষ্পত্তিতে বিশেষ নজর দেওয়া হয়েছে। প্রতি মাসেই অধস্তন আদালতগুলো থেকে এসব মামলার তথ্য সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের কাছে আসছে। গুরুত্ব ও ধরন বিবেচনায় মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির লক্ষ্যে সুপ্রিম কোর্ট নানা ধরনের নির্দেশনাও দিয়ে থাকে বলে জানান উচ্চ আদালতের এই কর্মকর্তা। বছরের পর বছর মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া প্রসঙ্গে বিশিষ্ট আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, মূলত সরকারি কৌঁসুলি ও পুলিশের ব্যর্থতায় মামলা নিষ্পত্তিতে বিলম্ব হয়। পৃথিবীর সব দেশে মামলা পরিচালনাকারী আইনজীবীরা ক্যাডারভুক্ত হন। আমাদের দেশে ল’ ক্যাডার সার্ভিস আজও চালু হয়নি। এটা হলে একদিকে যেমন জবাবদিহিতা থাকে, অপরদিকে দক্ষতা-যোগ্যতাও থাকে। তিনি বলেন, আদালতে সাক্ষী হাজির ও জব্দ বস্তু প্রদর্শন করা পুলিশের দায়িত্ব। ভাসমানদের সাক্ষী করায় তাদের অনেক সময় খুঁজেও পায় না পুলিশ। মামলা নিয়ে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি নিরসন করতে হলে সামগ্রিক সিস্টেমেই পরিবর্তন আনতে হবে বলে মন্তব্য করেন সুপ্রিম কোর্টের এই আইনজীবী।

সর্বশেষ খবর