বুধবার, ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

রাশিয়ার নেতৃত্বে ইউরেশিয়ান কাস্টমসে ঢুকছে বাংলাদেশ

সমঝোতা চুক্তি ২৬ মার্চ

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

চীনের পর বাংলাদেশ বিশ্বে দ্বিতীয় বৃহত্তম তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক দেশ। আর তৃতীয় বৃহত্তম পোশাকের বাজার রাশিয়া। আনুমানিক ২৩-৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের তৈরি পোশাকের বাজার রয়েছে দেশটিতে যার বার্ষিক প্রবৃদ্ধি প্রায় ২০ থেকে ৩০ শতাংশ। রাশিয়ার মাধ্যমে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নভুক্ত ১১ দেশের জোট- কমনওয়েলথ অব ইনডিপেনডেন্ট স্টেটস-এর বাজারে প্রবেশের সুযোগ রয়েছে বাংলাদেশের। প্রায় ১৪ হাজার কোটি ডলারের রপ্তানি বাজার রয়েছে এই সিআইএস জোটে। সুযোগ রয়েছে আরমেনিয়া, বেলারুশ, কাজাখস্তান, কিরঘিজিস্তানকে নিয়ে রাশিয়া নেতৃত্বাধীন ইউরেশিয়ান কাস্টমস ইউনিয়নেও রপ্তানি সম্প্রসারণের। সেই সুযোগটিই এবার নিতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে : রাশিয়া যেহেতু ইউরেশিয়ান কাস্টমস ইউনিয়নের নেতৃস্থানীয় সদস্য, সে কারণে বাংলাদেশ যাতে রাশিয়ার সঙ্গে ব্যাংকিং লেনদেনসহ ওই কাস্টমস ইউনিয়নের সদস্য দেশগুলোর সঙ্গে সরাসরি বাণিজ্য পরিচালনা করতে পারে সে লক্ষ্যে একটি চুক্তি করার। এই চুক্তির বিষয়ে সবুজ সংকেত দিয়েছে রাশিয়াও। প্রাথমিকভাবে এটি সমঝোতা চুক্তি হবে। এরই মধ্যে চুক্তির খসড়া চূড়ান্ত করে ভেটিংয়ের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। ভেটিং শেষে আগামী মার্চের মধ্যেই রাশিয়া নেতৃত্বাধীন ইউরেশিয়ান কাস্টমস ইউনিয়নের সঙ্গে এই সমঝোতা চুক্তিটি স্বাক্ষরের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, রাশিয়া যেহেতু স্বাধীনতা যুদ্ধে বাংলাদেশকে সহায়তা করেছে, সে কারণে মুক্তিযুদ্ধের এই বন্ধু রাষ্ট্রটির নেতৃত্বাধীন ইউরেশিয়ান কাস্টমস ইউনিয়নের সঙ্গে সমঝোতা চুক্তিটি স্বাধীনতা দিবস ‘২৬ মার্চ’ করার বিষয়ে সরকারের আগ্রহ রয়েছে। এই চুক্তিটি স্মরণীয় করে রাখতেই এমন একটি দিন বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে সরকার উৎসাহী হচ্ছে। কর্মকর্তারা আরও জানান, সমঝোতা চুক্তির ক্ষেত্রে যেহেতু মন্ত্রিসভার অনুমোদন লাগে না, সে কারণে মার্চের মধ্যেই চুক্তি করা সম্ভব। এ লক্ষ্যে ভেটিংয়ের পর দ্রুততম সময়ে এটি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হবে অনুমোদনের জন্য। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (এফটিএ) শফিকুল ইসলাম জানান, রাশিয়ার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যে ব্যাংকিং লেনদেন, দ্বৈতকরসহ বেশ কিছু সমস্যা রয়ে গেছে। কারণ রাশিয়া বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার সদস্য হলেও তাদের একটি পৃথক অর্থনৈতিক কমিশন রয়েছে। এটি অনেকটা ইউরোপীয় কমিশনের মতো। এই কমিশনের কোনো দেশের কাছ থেকে বাজার সুবিধা নিতে হলে ওই কমিশনের সঙ্গে চুক্তি করতে হয়। এ কারণে রাশিয়ায় বাজার সুবিধা পেতে ইউরেশিয়ান ইকোনমিক কমিশনের সঙ্গে যে সমঝোতা চুক্তির প্রয়োজন সেটি চূড়ান্ত করেছে বাংলাদেশ। এই চুক্তির বাড়তি সুবিধা হচ্ছে- রাশিয়া ছাড়াও অন্য চার সদস্য দেশ আরমেনিয়া, বেলারুশ, কাজাখস্তান ও কিরঘিজিস্তানেও রপ্তানি সম্প্রসারণের সুযোগ থাকবে বাংলাদেশের। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য বলছে, ২০১৭ সালে বাংলাদেশ-রাশিয়া দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ছিল ১৬০ কোটি ডলারের। এখন সমঝোতা চুক্তির মাধ্যমে রাশিয়াসহ ইউরেশিয়ান কাস্টমসে বাজার সুবিধা পেলে বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্য অনেক বৃদ্ধি পাবে। তৈরি পোশাক, হিমায়িত খাদ্য, চিংড়ি, চামড়া ও পাট পণ্যের প্রচুর চাহিদা রয়েছে রাশিয়ায়। বাংলাদেশ এগুলো স্বল্পমূল্যে রপ্তানি করতে সক্ষম হবে।

চুক্তির বিষয়ে বাণিজ্যমন্ত্রীর সঙ্গে রাশিয়ার রাষ্ট্রদূতের বৈঠক : এই সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরের বিষয়ে আলোচনা চূড়ান্ত করতে গতকাল সচিবালয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির সঙ্গে বৈঠক করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আলেক্সান্দার ইগনাতভ। বৈঠক শেষে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, আমাদের মুক্তিযুদ্ধে রাশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকলেও দেশটির সঙ্গে আমাদের বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে কিছু বাধা রয়েছে। পাঁচটি দেশ মিলে রাশিয়ায় ইউরেশিয়ান ইকোনমিক ইউনিয়ন রয়েছে। বাণিজ্য লেনদেন এককভাবে কোনো দেশ করতে পারে না। সে কারণেই বাংলাদেশ একটি এমওইউ স্বাক্ষরের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। আগামী মার্চ মাসের শেষ দিকে বাণিজ্য ক্ষেত্রে জটিলতা দূর করতে এ এমওইউ স্বাক্ষর করা হবে। এর মাধ্যমে দুই দেশের ব্যাংকিং চ্যানেল চালু হবে। বাণিজ্যের জন্য বাজার উন্মুক্ত হবে। তখন আর কোনো জটিলতা থাকবে না। আলেক্সান্দার ইগনাতভ বলেন, রাশিয়া বাংলাদেশের সঙ্গে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক বৃদ্ধি করতে আগ্রহী। রাশিয়ায় বাংলাদেশের তৈরি পোশাক, সি-ফুড, আলু, ওষুধসহ অনেক পণ্যের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। আমরা এসব পণ্য বাংলাদেশ থেকে আমদানি করতে আগ্রহী। এমওইউ স্বাক্ষর হলে বাংলাদেশের সঙ্গে রাশিয়ার অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক অনেক বৃদ্ধি পাবে।

সর্বশেষ খবর