শিরোনাম
বুধবার, ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা
তৃণমূলে স্বাস্থ্যসেবা

ভবন শয্যা রোগী বেড়েছে, বাড়েনি চিকিৎসক

দিনাজপুর হাসপাতাল

রিয়াজুল ইসলাম, দিনাজপুর

চিকিৎসকসহ জনবল সংকট, টেকনিক্যাল পার্সন সংকট, কোনো বিশেষজ্ঞ নেই, আধুনিক সরঞ্জাম সংকটসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত দিনাজপুর জেনারেল হাসপাতাল এবং ১২ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। বিল্ডিং বাড়ছে, বেড বাড়ছে কিন্তু চিকিৎসক বাড়েনি। ফলে সেই তুলনায় সেবা পাচ্ছে না রোগীরা। কোনো কোনো উপজেলা হাসপাতালে দুজন চিকিৎসক দিয়েই সেবা দিতে হচ্ছে। দিনাজপুর জেনারেল হাসপাতাল এবং ১২ উপজেলা হাসপাতালে কমপক্ষে দেড় শতাধিক চিকিৎসকের প্রয়োজন, সেখানে রয়েছে মাত্র ৬৫ জনের মতো। প্রয়োজনের তুলনায় এক চতুর্থাংশ চিকিৎসক দিয়ে কাক্সিক্ষত সেবা পাচ্ছে না রোগীরা। বিভিন্ন হাসপাতালে রোগীদের অভিযোগ, হাসপাতালে এলে সময় মতো চিকিৎসক পাওয়া যায় না। অনেক সময় দালালরা পাবলিক অন্য হাসপাতালে নিয়ে যায়। অনেক সময় বাইরে থেকে ওষুধ কিনতে বলা হয়। যদিও এ অভিযোগ অস্বীকার করেন চিকিৎসকরা। জেনারেল হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, প্রয়োজনীয় জনবল সংকটে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট দিনাজপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হচ্ছে। প্রয়োজনীয় ৫৮ জন চিকিৎসকের কাজ করছেন ২৫ জন। চারজন এনেসথেশিয়ার স্থলে একজন রয়েছে। ইনডোরে সাতজনের স্থলে একজন রয়েছে। ৩৩টি চিকিৎসকের পদ শূন্য থাকায় স্বল্প সংখ্যক চিকিৎসকের পক্ষে রোগীদের মানসম্মত চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। ফলে শহরসহ গ্রামগঞ্জ থেকে চিকিৎসা নিতে আসা গরিব ও অসহায় মানুষকে নানা সমস্যায় পড়তে হয়। হাসপাতালে প্রতিদিন বহির্বিভাগে ছয় শতাধিক রোগী চিকিৎসা নিতে আসেন। কিন্তু স্বল্প সংখ্যক চিকিৎসকের পক্ষে এত রোগীর চিকিৎসাসেবা দেওয়া কষ্টকর হয়ে পড়ে। দিনাজপুর জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. আহাদ আলী জানান, বর্তমানে সার্জারি, গাইনি, মেডিসিন বিভাগসহ কয়েক বিভাগের আটটি সহকারী রেজিস্ট্রারের পদ শূন্য থাকায় আন্তবিভাগে রোগীদের ২৪ ঘণ্টা সেবাদান কষ্টকর হচ্ছে। এ ছাড়া বহির্বিভাগের মেডিকেল অফিসারের তিনটি পদ ও জরুরি বিভাগের ইমারজেন্সি মেডিকেল অফিসারের একটি পদসহ ৩৩টি চিকিৎসকের পদ শূন্য থাকায় স্বল্প সংখ্যক চিকিৎসকের পক্ষে রোগীদের মানসম্মত চিকিৎসা দিতে বিরম্বনায় পড়তে হচ্ছে। ডেন্টাল চেয়ার না থাকায় দাঁত তোলা ছাড়া দাঁতের অন্য চিকিৎসা দেওয়া যাচ্ছে না। হাসপাতালে চুরিসহ দালাল রুখতে সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হয়েছে। কাহারোল উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. সফিউল আযম জানান, হাসপাতালে চিকিৎসক সংকট রয়েছে। আলট্রাসনোগ্রাম করা যায় না। আর অ্যাম্বুলেন্সটি মেরামতেরও অযোগ্য। বর্তমানে আমিসহ চারজন চিকিৎসক থাকলেও একজন নারী চিকিৎসক মাতৃত্বকালীন ছুটিতে। ফলে প্রতিদিন শতাধিক রোগীর চিকিৎসা সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। চিকিৎসক সংকট এবং অ্যাম্বুলেন্সের ব্যাপারটি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। বীরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসার ডা. মো. জাঙ্গাহীর কবির জানান, ৫০ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক মাত্র দুজন। ডা. সমরেশ দাশ এবং ডা. আফরোজ সুলতানা লুনা। কিন্তু বুধবার সড়ক দুর্ঘটনায় ডা. সমরেশ দাশ আহত হয় এবং ডা. আফরোজ সুলতানা লুনা সন্তানসম্ভবা হওয়ার কারণে মাঝে মাঝে শরীরের জটিলতা দেখা দিচ্ছে। কিন্তু দুজনের ছুটি নেওয়ার মতো পরিস্থিতি থাকলেও উপজেলার চার লাখ মানুষের কথা চিন্তা করে অসুস্থ শরীরে চিকিৎসা সেবা দিয়ে নজির স্থাপন করেছেন তারা। জেলা সিভিল সার্জন আবদুল কুদ্দুছ জানান, চিকিৎসক সংকটের কারণে পুরোপুরি সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। জেলার ১২টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে শতাধিক চিকিৎসকের জায়গায় মাত্র ৪০ জনের মতো রয়েছে। কোনো কোনো হাসপাতালে দুজন চিকিৎসক দিয়ে সেবা দিতে হচ্ছে। তবে অনেক হাসপাতালে এক্স-রে-ইসিজির যন্ত্রপাতি, অ্যাম্বুলেন্স, বিভিন্ন যন্ত্রপাতি নেই, আবার অনেক স্থানে থাকলেও এসব চালানোর টেকনিক্যাল পার্সন নেই। চিকিৎসকসহ জনবল সংকটের কথা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর