শুক্রবার, ১ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা
তৃণমূলে স্বাস্থ্যসেবা

দুর্ভোগ মাড়িয়েই সেবা চমেকে

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ২২ ফেব্রুয়ারি মেডিসিন বিভাগে ভর্তি করা হয় কর্ণফুলী উপজেলার শিকলবাহা ইউনিয়নের নুর নাহার বেগমকে। চিকিৎসকরা স্নায়ু রোগ বিষয়ে সমস্যা জানিয়ে কয়েকটি পরীক্ষা করাতে দেন। কিন্তু ওষুধ দেননি। এ নিয়ে রোগীর স্বজন অভিযোগ করে বলেন, ‘কর্তব্যরত চিকিৎসকের কাছে একাধিকবার গিয়েও কথা বলার সুযোগ হয়নি। এছাড়া অন্য রোগীর স্বজনদের সঙ্গে চিকিৎসক ক্ষোভ নিয়ে কথা বলতে দেখি।’ এভাবে বৃহত্তর চট্টগ্রামের অন্যতম এই সরকারি সেবাকেন্দ্রে নানামুখী দুর্ভোগ-সমস্যা মাড়িয়েই চিকিৎসাসেবা নিতে হচ্ছে রোগীদের। ফলে রোগীদের সঙ্গী হয় ভোগান্তি। আছে হুইল চেয়ার, ট্রলি, ছাড়পত্র নেওয়াসহ নানা ক্ষেত্রে টাকা নেওয়ার অভিযোগ। তবে দুর্ভোগ থাকলেও এটিই চট্টগ্রাম অঞ্চলের মানুষের চিকিৎসার শেষ ভরসা। বহুমাত্রিক ও জটিল নানা রোগের চিকিৎসাসেবা এখানেই পাওয়া যায়। চমেক হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. আখতারুল ইসলাম বলেন, ‘হাসপাতালের অন্যতম সংকট হল শয্যার তুলনায় তিনগুণ বেশি রোগী থাকা। রোগী দেখার ক্ষেত্রে আমরা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানও রক্ষা করতে পারছি না। একজন চিকিৎসক আর নার্সকে দৈনিক গড়ে কত রোগীকে সেবা দিতে হচ্ছে তার কোনো হিসাব নেই।’ তবে এ সমস্যা নিরসন হবে। এখানে নতুন ৫০০ শয্যার একটি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা হবে। তখন সমস্যা অনেকাংশে কমে যাবে।’ চমেক হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ১৯৫৭ সালে যাত্রা করা এ হাসপাতালে বর্তমানে ৪৫টি ওয়ার্ড, ৪৮টি বিভাগ এবং ১৫টি বহির্বিভাগ আছে। বর্তমানে শয্যা সংখ্যা এক হাজার ৩১৩টি। প্রতিনিয়তই এখানে ভর্তি থাকে গড়ে তিন হাজারের বেশি রোগী। এছাড়া প্রায় ১৫টি বহির্বিভাগে প্রতিদিন গড়ে রোগী দেখা হয় ২৫০ জন করে। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি হাসপাতালে রোগী ভর্তি ছিল ৩ হাজার ২৯ জন, ওই দিন নতুন রোগী ভর্তি হয় ৫০৯ জন। ১৬ ফেব্রুয়ারি রোগী ভর্তি ছিল ৩ হাজার ৭৯ জন, ওই দিন নতুন ভর্তি হয় ৬৭৯ জন। ১৭ ফেব্রুয়ারি ভর্তি ছিল ৩ হাজার ৯ জন, নতুন ভর্তি হয় ৬৪৯ জন। ১৮ ফেব্রুয়ারি ভর্তি ছিল ৩ হাজার ৮ জন, নতুন ভর্তি হয় ৬৪৯ জন। প্রতিদিন গড়ে ৩ হাজার ৩১ জনের বেশি রোগী ভর্তি থাকে এবং গড়ে নতুন ভর্তি হচ্ছে ৬২১ জনের বেশি। অথচ হাসপাতালে শয্যার সংখ্যা এক হাজার ৩১৩টি এবং জনবল হলো ৫০০ শয্যার।  রবিবার দুপুরে হাসপাতালের কয়েকটি ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, প্রায় প্রতিটি ওয়ার্ডে শয্যার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি রোগী ভর্তি রয়েছে। হাসপাতালে শিশু বিভাগের শিশুস্বাস্থ্য, নিউনেটাল, শিশু সার্জারি, শিশু আইসিইউসহ মোট ২০০টি শয্যা থাকলেও কেবল শিশুস্বাস্থ্য বিভাগেই গড়ে ভর্তি থাকে ৩৫০ থেকে ৪০০ শিশু রোগী। সার্জারি বিভাগে ৬০টি শয্যার বিপরীতে ভর্তি থাকে প্রায় ১০০ জন। অর্থোপেডিক ওয়ার্ডের শয্যা সংখ্যা ৮৮ হলেও প্রায়ই রোগী ভর্তি থাকে ২৩০ থেকে ২৫০ জন। এ ওয়ার্ডে সর্বোচ্চ ২৯০ জন রোগী ভর্তি থাকার রেকর্ড আছে। হৃদরোগ বিভাগের শয্যা সংখ্যা ৬০টি হলেও প্রতিনিয়তই রোগী ভর্তি থাকে ৩০০ থেকে ৩২০ জন। এ ওয়ার্ডে শয্যার অভাবে ছেলের পিঠে হেলান দিয়ে মায়ের চিকিৎসা করানোর দৃষ্টান্তও আছে। মেডিসিন ওয়ার্ডের তিনটি বিভাগের দুটিতে ৫৪টি করে এবং একটিতে ৩২টি শয্যা থাকলেও প্রতিদিন কয়েকগুণ বেশি রোগী ভর্তি থাকে। নিউরো মেডিসিন বিভাগে ৩০ শয্যার বিপরীতে থাকে ৬০ জনের বেশি।

সর্বশেষ খবর