শনিবার, ২ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা

আসেন ব্যবসা করি

মির্জা মেহেদী তমাল

আসেন ব্যবসা করি

শুকুর আলী শেখ। দুই যুগ ছিলেন কাতারে। বিদেশে কঠোর পরিশ্রমের টাকায় ঢাকার শ্যামপুরে ১৯৯০ সালে চারতলা একটি বাড়ি করেন। পরিবার নিয়ে ভালোই চলছিল তার সংসার। ১৯৯৫ সালে ওই বাড়ির তৃতীয় তলা মিলন চন্দ্র ঘোষকে ভাড়া দেন। গড়ে ওঠে মালিক-ভাড়াটিয়ার সঙ্গে মধুর সম্পর্ক।

বিদেশ থেকে একবারে চলে আসেন শুকুর আলী। চালের ব্যবসা শুরু করেন। নিজ বাড়ির নিচে গড়ে তোলা তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নাম মেসার্স এসএম ট্রেডিং। ব্যবসা ভালোই চলছিল। ভাড়াটিয়া মিলনের ছিল গদির ব্যবসা। মেসার্স বিএম ইন্টারন্যাশনাল নামে তার প্রতিষ্ঠানের অবস্থান ছিল ঢাকার কোতয়ালি থানার শ্যামবাজারে। মিলনের ব্যবসাও ভালোই চলছিল।

মিলন-শুকুর আলী সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ থেকে ঘনিষ্ঠ হতে থাকে। সম্পর্কের জের ধরে মিলন একদিন শুকুরকে ব্যবসা নিয়ে নানা ধরনের পরামর্শ দিতে থাকেন। বলেন, একজন বাড়িওয়ালা চালের ব্যবসা করলে হয় না। চলেন, দুজনে বড় ব্যবসা করি। লাখ লাখ টাকা আসবে। আর এভাবে কিছুদিন বলতে থাকলে এক সময় মিলনের কথায় রাজি হন শুকুর। মিলনের কথামতো নিজের চারতলা বাড়ি বন্ধক রেখে দুই কোটি টাকা ঋণ নেন শুকুর।

২০১১ সালে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের সদরঘাট শাখা থেকে মিলনকে দুই কোটি টাকা তুলে দেন শুকুর। পরে মিলন এই টাকা বাবদ শুকুরকে প্রতি মাসে ২০ হাজার টাকা এবং এক বস্তা চাল দিতেন। মিলনের ওপর আস্থা বাড়ে শুকুরের। মিলন শুকুরকে বলে, ব্যবসা ভালো হচ্ছে। আসছে লভ্যাংশ। আপনাকে লভ্যাংশ দেওয়া হচ্ছে।

ঘরভাড়াও মিলনের কাছ থেকে নিয়মিত পেতেন শুকুর। আর এতেই শুকুর সন্তুষ্ট। মিলন ব্যাংকের কিস্তি দিচ্ছে কিনা তার খোঁজ নিতেও ভুলে যান শুকুর। ২০১৭ সালের শেষের দিকে মিলনের কাছে বাড়ির দলিল চান শুকুর। পরে তাকে শ্যামবাজারের অফিসে যেতে বলেন মিলন। শুকুর মিলনের অফিসে যান। তিনটি চেকে তাকে ১ কোটি ৬২ লাখ টাকা দেন মিলন। তিনটি চেকেই ২০১৮ সালের বিভিন্ন তারিখ উল্লেখ করা হয়। মিলন বলেন, এই টাকা উঠিয়ে ব্যাংকে জমা দিলেই আপনার দলিল পেয়ে যাবেন। ব্যস এতেই সন্তুষ্ট থাকেন শুকুর। কখনো অবিশ্বাস করেননি। ডিসেম্বরের শেষ দিকে গ্রামের বাড়ি যান মিলন। কথা ছিল দুই দিন পরই ফিরবেন। কিন্তু ফেরেননি। দুই দিন, দুই সপ্তাহ এবং দুই মাসও পার হয়। ফেরেন না মিলন। শুকুর আলী এই দুই মাস তার গ্রামের বাড়ি থেকে শুরু করে বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ নেন। কোথাও নেই মিলন। গ্রামের কথা বলে লাপাত্তা মিলন।

মোবাইল নম্বর বন্ধ। বন্ধ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। উদ্বেগ বাড়তে থাকে শুকুরের। চেক নিয়ে ব্যাংকে গেলে ডিজঅনার হয়। শুকুর তখন বুঝতে পরেন, প্রতারণার শিকার হয়েছেন তিনি। শুকুরের স্ত্রী স্ট্রোক করেন। শুকুরের দুই মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। একমাত্র ছেলে বিয়ের পর বাড়ি ছেড়েছে। স্ট্রোক করা স্ত্রীকে নিয়ে ওই বাড়িতে থাকেন অসহায় শুকুর আলী শেখ। আদালতে চেক ডিজঅনারের মামলা করেন শুকুর। এরই মধ্যে ২০১৮ সালের ১২ আগস্ট একটি জাতীয় দৈনিক ‘নিলামে বন্ধকী সম্পত্তি বিক্রয় বিজ্ঞপ্তি’ দেয় ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের সদরঘাট শাখা। শুকুর আলী শেখের চোখে এখন কেবলই অন্ধকার। দিশেহারা। বিদেশে কঠোর পরিশ্রম করে চারতলা বাড়ি গড়েছিল, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সবই তার কঠোর পরিশ্রমের ফল। কিন্তু ‘আসেন ব্যবসা করি’Ñ বিশ্বাস করে পরিচিত মানুষের এমন আহ্বানে সাড়া দিয়ে শুকুর আলী এখন রাস্তায় পড়েছেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর