শনিবার, ২ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা
সাঈদীকে চাঁদে দেখার গুজব

বগুড়ায় জামায়াতের তাণ্ডবের দিন কাল

নিজস্ব প্রতিবেদক, বগুড়া

২০১৩ সালের ৩ মার্চ জামায়াত নেতা মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে চাঁদে দেখার গুজব ছড়িয়ে জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মীরা বগুড়ায় তাণ্ডব চালিয়েছিলেন। সেই দাগ এখনো বগুড়ায় রয়েছে। সরকারি অফিসগুলো নতুন করে সাজিয়ে উঠলেও ক্ষত আর সেরে ওঠেনি। জামায়াত-শিবিরের তাণ্ডবের ঘটনায় দায়ের করা অর্ধশত মামলা আজও শেষ হয়নি। অভিযোগপত্র দাখিল হয়েছে ৪৪টির। ওই দিন জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মীরা ধর্মীয় অনুভূতি কাজে  লাগিয়ে পরিকল্পিতভাবে গুজব ছড়িয়ে জেলায় নারকীয় তাণ্ডব চালান। জামায়াত-শিবিরের আগুন, লুটপাট ও ধ্বংসযজ্ঞ থেকে সাধারণ মানুষ, দোকানপাট, সরকারি অফিস, থানা, পুলিশ ফাঁড়ি কিছুই রক্ষা পায়নি। যেখানে যে অবস্থায় পেয়েছেন তারা আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছেন। জেলাজুড়ে এসব ঘটনায় ১৩ জন নিহত হন, আহত হন শতাধিক। এ ঘটনায় প্রায় ৩ হাজার জমায়াত-শিবির নেতা-কর্মীকে অভিযুক্ত করে জেলা পুলিশ। বগুড়া জেলা পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভূঞা জানান, পুলিশের পক্ষ থেকে এসব ঘটনায় প্রায় ৫০টি মামলা করার পর তদন্ত শেষে ৪৪টির অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে। এসব মামলায় অভিযুক্ত রয়েছেন জামায়াত-শিবিরের প্রায় ৩ হাজার নেতা-কর্মী। সে সময় ২ সহস্রাধিক জামায়াত-শিবির নেতা-কর্মী গ্রেফতার হন। ঘটনার ৬ বছর পরও কোনো মামলারই বিচারকাজ শেষ হয়নি। তিনি আরও জানান, মামলা চলমান আছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিচারকাজ সম্পন্ন হবে।

২০১৩ সালের ৩ মার্চ জামায়াত নেতা সাঈদীকে চাঁদে দেখার গুজব ছড়িয়ে ১২ উপজেলা এলাকায় জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মীরা তা ব চালান। এ তা বে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় বগুড়া সদর, শাজাহানপুর, শেরপুর, ধুনট, নন্দীগ্রাম, শিবগঞ্জ, কাহালু ও গাবতলী উপজেলা। এ ৭ উপজেলার বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি অফিস, আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষের বাড়িঘরে হামলা হয়। তারা সরকারি স্থাপনা, অফিস, পুলিশ ফাঁড়িতে অগ্নিসংযোগ করেন। দফায় দফায় তা বে নন্দীগ্রামে ১৬টি অফিসে অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। এতে সে সময় পৌর এলাকা বিধ্বস্ত নগরীতে পরিণত হয়। উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্সে থাকা দোতলা ভবনের প্রতিটি কক্ষের আসবাব আর নথিপত্র পুড়ে ছাইয়ের স্তূপ হয়েছিল। বিভিন্ন কক্ষের টেবিল, টেলিভিশন, কম্পিউটার, টেলিফোন সেট, ফ্যাক্স মেশিন, সরকারি সব নথিপত্র পুড়ে ছাই হয়ে যায়। ছাই হয়ে যায় উপজেলার সব উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক কর্মকাে র গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র, কর্মচারীদের চাকরিসংক্রান্ত রেকর্ড বই, বিভিন্ন সরকারি মামলা, ঋণ, নকশা, ভাউচারসহ সবকিছু। তখন থমকে যায় অফিসের সব কার্যক্রম। সেই সঙ্গে নেমে আসে স্থবিরতা। সেই তা বে প্রায় ১০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল বলে উপজেলা পরিষদ সূত্রে জানা যায়। এ ছাড়া হামলা চালানো হয় থানাসহ তৎকালীন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রেজাউল আশরাফ জিন্নাহর বাড়িসহ রাজনৈতিক নেতাদের বাড়ি ও অফিসে। এসব ঘটনায় থানায় পৃথকভাবে ৪টি মামলা হয়। সেসব মামলায় শুধু নন্দীগ্রামে উপজেলা জামায়াতের আমির উপজেলা চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম ম ল, সেক্রেটারি মঞ্জুরুল ইসলামসহ ৬৪৪ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া বগুড়ায় ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কজুড়ে রাস্তায় গাছ ফেলে বিভিন্ন সড়ক অবরোধ করেন জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মীরা।

 ৬টি পুলিশ ফাঁড়ি, সরকারি-বেসরকারি অফিস, প্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট চালান তারা। সেদিন অগ্নিসংযোগ করেছিলেন বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আলহাজ মমতাজ উদ্দিনের বাড়িতে।

প্রতিবেশীদের সহযোগিতায় প্রাণ বাঁচাতে পারলেও সম্পদ পুড়ে ছাই হয়ে যায় তার। বগুড়া-১ আসনের সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল মান্নানের বাসভবনেও হামলা চালানো হয়। তার বাড়ি পুড়িয়ে ভস্মীভূত করা হয়। বগুড়ার মানুষ সেই বিভীষিকার কথা আজও ভুলতে পারেননি। ঘটনার পর জেলার ক্ষতিগ্রস্ত সব সরকারি প্রতিষ্ঠান নতুন করে সেজে উঠলেও মানুষের মন থেকে ভয়াল সেই রাতের কথা মুছে যায়নি।

সর্বশেষ খবর