রবিবার, ৩ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা

গলার কাঁটা বাংলাদেশ মিয়ানমার সীমান্ত

আনিস রহমান

বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে ২৭১ কিলোমিটার সীমান্ত আছে। এর মধ্যে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ হতে সাবরাং পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার সর্বাধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে বর্ডার সার্ভেইল্যান্স অ্যান্ড রেসপন্স সিস্টেম স্থাপনের কাজ শেষ হয়েছে। এ ছাড়া সাবরাং হতে তুমব্রু কোনাপাড়া পর্যন্ত আরও ৫০ কিলোমিটার সীমান্তে সার্ভেইল্যান্স সিস্টেম স্থাপনের কাজ চলমান রয়েছে। চলতি বছরের জুন মাসের মধ্যেই তা শেষ হওয়ার কথা।

বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ-বিজিবির পরিচালক (পরিকল্পনা) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবেদীন জানিয়েছেন বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের ২৭১ কিলোমিটারের মধ্যে ৬০ কিলোমিটার এলাকায় সার্ভেইল্যান্স সিস্টেম স্থাপন হলেও বাকি ২১১ কিলোমিটার এখন চিন্তার কারণ। তিনি জানান, অবশিষ্ট ২১১ সীমান্তে সার্ভেইল্যান্স সিস্টেম বাস্তবায়ন হলে মিয়ানমার হতে ইয়াবাসহ অন্যান্য মাদক পাচার প্রতিরোধ এবং অবৈধ অনুপ্রবেশ রোধ করা সম্ভব হবে। বিজিবি সূত্র জানায়, মিয়ানমারের ২১১ কিলোমিটার গলার কাঁটা হয়ে দেখা দিয়েছে। এই সীমান্ত দিয়েই প্রতিদিন বাংলাদেশে ঢুকছে ভয়ঙ্কর মাদক ইয়াবার বড় বড় চালান। পরবর্তীতে যা জালের মতো ছড়িয়ে পড়ছে সারা দেশে। মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক বন্ধুসুলভ নয়। মিয়ানমারের সহযোগিতা পাওয়া গেলে খুব সহজেই ইয়াবার অনুপ্রবেশ বন্ধ করা যেত। তাদের সহযোগিতা ছাড়াই এখন চেষ্টা করা হচ্ছে ইয়াবার অনুপ্রবেশ ঠেকানোর। এ জন্য গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ইয়াবা যেহেতু পার্শ্ববর্তী দেশ মিয়ানমার থেকে আসে তাই দেশের সীমান্ত পাহারার দায়িত্বে থাকা বিজিবির ব্যর্থতাকেই বড় করে দেখছে অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তবে বিজিবির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নাফ নদের একটি বড় অংশ দিয়ে পাচার হয়ে আসে ইয়াবা। এ পথ দিয়ে প্রতিদিন কয়েক হাজার ট্রলার চলাচল করে। বিজিবি কর্মকর্তারা জানান, বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত দিয়ে ইয়াবা প্রবেশ ঠেকাতে ডিজিটাল নিরাপত্তাবলয় তৈরির কাজ শুরু করা হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে ডিজিটাল নিরাপত্তা অর্থাৎ সর্বাধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে কার্যকর সীমান্ত ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে বর্ডার সার্ভেইল্যান্স অ্যান্ড রেসপন্স সিস্টেম স্থাপনের কাজ শুরু হয়েছে। কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্তের দমদমিয়া হতে উনচিলং, উনচিলং হতে পালংখালী, পালংখালী থেকে ব্যাইশফাঁড়ি পর্যন্ত ৪৫ কিলোমিটার এলাকায় সার্ভেইল্যান্স সিস্টেম স্থাপনের কার্যক্রম চলছে। বিজিবি কর্মকর্তা বলেছেন, সীমান্ত সুরক্ষিত না করা গেলে ইয়াবা পাচার বন্ধ করা কঠিন। এর কারণ হিসেবে তারাও বলছেন, বঙ্গোপসাগরে হাজার হাজার জেলে ২৪ ঘণ্টা মাছ শিকার করছে। কোনো জেলে ট্রলারে করে ইয়াবা পাচার করছে, সুনির্দিষ্ট তথ্য ছাড়া শনাক্ত করা কঠিন। স্থলসীমান্তের চোরাগলি সবচেয়ে বেশি চেনা টেকনাফ-উখিয়ার স্থানীয় পাচারকারীদের। বিজিবি সূত্র জানায়, প্রাথমিকভাবে দেশের ৩২৮ কিলোমিটার সীমান্তে বর্ডার সার্ভেইল্যান্স অ্যান্ড রেসপন্স সিস্টেম বাস্তবায়নের পরিকল্পনা রয়েছে। এতে ভূ-প্রকৃতিগত বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী স্থানভেদে সুউচ্চ টাওয়ার, রাডার, উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন দিবা-রাত্রিকালীন ক্যামেরা, সেন্সর ইত্যাদি স্থাপন করা হচ্ছে। এ ছাড়াও বর্ডার সার্ভেইল্যান্স সিস্টেমের মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে সীমান্ত অপরাধ সংঘটনের স্থানে দ্রুততম সময়ের মধ্যে পৌঁছানোর লক্ষ্যে সবধরনের স্থল সীমান্তে চলাচলের উপযোগী ‘অল টেরেইন ভেহিকেল’ এবং জল/নৌ সীমান্তে চলাচল উপযোগী হাইস্পিড বোট সরবরাহের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

সর্বশেষ খবর