শিরোনাম
রবিবার, ৩ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা
তৃণমূলে স্বাস্থ্যসেবা

শেষ নেই সমস্যার

পটুয়াখালী জেনারেল হাসপাতাল

সঞ্জয় কুমার দাস লিটু, পটুয়াখালী

আড়াইশ শয্যা বিশিষ্ট পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডাক্তারসহ জনবল সংকটের অজুহাত তুলে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে যেনতেন ভাবে। ফলে রোগীদের নামকাওয়াস্তে সেবা নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে। খোঁজ নিতে গিয়ে জানা গেছে, যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন অসংখ্য চর ও দ্বীপবেষ্টিত ৮টি উপজেলা নিয়ে গঠিত পটুয়াখালী জেলা। প্রায় ১৬ লাখ মানুষের উপকূলীয় জনপদে চিকিৎসা সেবার জন্য রয়েছে পটুয়াখালীতে ২৫০ শয্যার একটি মাত্র হাসপাতাল। চরাঞ্চলে রয়েছেন প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ। জেনারেল হাসপাতালটি মেডিকেল কলেজে রূপ দেওয়া হলেও শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা ছাড়া চিকিৎসা সেবায় সুযোগ-সুবিধা বাড়েনি। নিজস্ব অবোকাঠামো নেই, তাই ২৫০ শয্যা হাসপাতালের আইসিসিইউ ভবনেই চলছে মেডিকেল কলেজের কার্যক্রম। হাসপাতাল সূত্রে প্রকাশ, পটুয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসক সংকট দূর করতে কর্তৃপক্ষ বারবার উদ্যোগ নিলেও এর নিরসন হয়নি এখনো। হাসপাতালটি ২৫০ শয্যায় উন্নীতের পর নতুন জনবল কাঠামো অনুযায়ী হাসপাতালটিতে তত্ত্বাবধায়কসহ ৫৮ জন চিকিৎসকের পদ থাকলেও কর্মরত আছেন মাত্র ২০ জন। এর মধ্যে সহাকারী পরিচালকের পদটি শূন্য। সিনিয়র কনসালটেন্ট ১০টি পদ থাকলেও শুধু শিশু, সার্জারি ও অ্যানেসথেসিয়া ছাড়া অন্য সাতটি পদই শূন্য। এগুলো হচ্ছে মেডিসিন, গাইনি, ইএনটি, চক্ষু, চর্ম ও যৌন, কার্ডিওলোজি ও অর্থোপেডিক। জুনিয়ার কনসালটেন্ট ১১টি পদে কর্মরত আছেন সাতজন। চারটি পদ শূন্য রয়েছে দীর্ঘদিন থেকে। এই পদগুলো হচ্ছে- চক্ষু, এনেসথেসিয়া, প্যাথলজি ও শিশু। আবাসিক ফিজিশিয়ান ও আবাসিক মেডিকেল অফিসার পদ দুটি শূন্য। প্যাথলজিস্ট ও রেডিওলজিস্ট পদও শূন্য। আর এনেসথেটিস্ট তিনটি পদ থাকলেও তার দুটি পদই শূন্য। মেডিকেল অফিসারের ১০টি পদ থাকলেও কর্মরত আছেন মাত্র তিনজন। সহকারী রেজিস্ট্রার ১১টি পদে কর্মরত আছেন মাত্র দুজন। জরুরি বিভাগে মেডিকেল অফিসারের চারটি পদই শূন্য রয়েছে। তবে ভর্তিকৃত রোগীর সেবাদানে হাসপাতালে চাহিদা অনুযায়ী নার্স দায়িত্ব পালন করছেন। সেখানে ১২৪ জন সিনিয়র স্টাফ নার্সের স্থলে দায়িত্ব পালন করছেন ১২১ জন। সহকারী নার্স আছে চারজন।

রোগীর স্বজনদের অভিযোগ, দূর-দূরান্ত থেকে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা রোগী চরম ভোগান্তিসহ কাক্সিক্ষত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। রোগীদের অভিযোগ, ঠিক সময়ে ডাক্তার পাওয়া যায় না। চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী সরকারি ওষুধ দেওয়া হয় না তাদের। আন্তবিভাগে ভর্তি হওয়া রোগীদের তেমন কোনো ওষুধ দেওয়া হয় না। এমনকি গজ, লিকোপ্লাস্ট, ডিসপোজাবল সিরিঞ্জ, তুলাসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র রোগীদের জন্য সরকারি ববাদ্দ থাকলেও তা পায়না রোগীরা।

এ ছাড়া রোগীর তালিকা অনুযায়ী খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে না বলেও অভিযোগ করেছেন হাসপাতালে সপ্তাহব্যাপী ভর্তি থাকা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক রোগী ও তাদের স্বজনরা। নিয়মানুযায়ী জনপ্রতি রোগীর পাউরুটি, দুধ, চিনি, দেশি মোরগ-মুরগি, খাসির মাংস ও সবজি বরাদ্দ থাকলেও রোগীরা পাচ্ছেন পরিমাণে কম। মঙ্গল ও বৃহস্পতিবার দেশি মোরগ-মুরগি এবং রবি ও বুধবার খাসির মাংস দেওয়ার কথা থাকলেও রোগীরা তা ঠিকভাবে পাচ্ছেন না। শিশু বিশেষজ্ঞ ডাক্তার সিদ্ধার্থ শংকর দাস জানান, প্রতিদিন শিশু ওয়ার্ডে ধারণ ক্ষমতার চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি রোগী ভর্তি থাকে। এসব রোগীদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হয়। হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. সাইদুজ্জামান বলেন, আমি সদ্য যোগদান করেছি। আমার সহকারী পরিচালক (এডি)-এর পদটিও শূন্য। চিকিৎসক সংকটে রোগীর সেবা দিতে ডাক্তাররা হিমশিম খাচ্ছেন। এ ছাড়া কর্মকর্তা, কর্মচারী সংকট রয়েছে। চিকিৎসকসহ জনবল সংকটের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজড়ে রয়েছে। ২৫০ বেড থাকলেও ভর্তিকৃত রোগীর সংখ্যা থাকে গড়ে চার শতাধিক। সবচেয়ে বেশি রোগীর চাপ শিশু ওয়ার্ডে। বেডপ্রতি হিসেবে বরাদ্দকৃত খাবার থাকে, কিন্তু ভর্তিকৃত রোগী অনেক বেশি।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর