সোমবার, ৪ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা

পতাকার মান রক্ষা সৈনিকের পবিত্র দায়িত্ব

রাজশাহীতে পতাকা প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

পতাকার মান রক্ষা সৈনিকের পবিত্র দায়িত্ব

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল রাজশাহী সেনানিবাসে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৭, ৮, ৯ এবং ১০ বীর এর জাতীয় পতাকা প্রদান অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন -পিআইডি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, পতাকা হলো জাতির স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, সম্মান এবং মর্যাদার প্রতীক। তাই পতাকার মান রক্ষা করা সব সৈনিকের পবিত্র দায়িত্ব। তিনি বলেন, পেশাদারিত্বের কাক্সিক্ষত মান অর্জনের জন্য সেনাবাহিনীর সবাইকে দক্ষ, সামাজিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধে উদ্বুদ্ধ হয়ে সৎ এবং মঙ্গলময় জীবনের অধিকারী হতে হবে। পবিত্র সংবিধান এবং দেশমাতৃকার সার্বভৌমত্ব রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ থেকে অভ্যন্তরীণ কিংবা বাহ্যিক যে কোনো হুমকি মোকাবিলায় সদা প্রস্তুত থাকতে হবে।

গতকাল দুপুরে রাজশাহী সেনানিবাসে সেনাবাহিনীর ৭, ৮, ৯ এবং ১০ বীর-এর ন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড (জাতীয় পতাকা) প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতার পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও একটি শক্তিশালী সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। তার নির্দেশেই ১৯৭২ সালে কুমিল্লা সেনানিবাসে গড়ে তোলা হয় বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমি। বঙ্গবন্ধু ১৯৭৪ সালে শান্তিরক্ষা নীতি প্রণয়ন করেন। তার সুদূরপ্রসারী এ প্রতিরক্ষা নির্দেশনার আলোকেই সেনাবাহিনীর আধুনিকায়নের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।

একটি আধুনিক ও চৌকস সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তুলতে তার সরকার বদ্ধপরিকর জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আধুনিক বাহিনী গড়ে তুলতে ‘ফোর্সেস গোল ২০৩০’ প্রণয়ন করে পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এর আওতায় সেনাবাহিনীর নতুন নতুন পদাতিক ডিভিশন, ব্রিগেড, ইউনিট ও প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে আমরা তিনটি নতুন ডিভিশন প্রতিষ্ঠা করেছি। প্রথমবারের মতো প্যারা কমান্ডো ব্যাটালিয়ন গঠন করা হয়েছে। দেশের আকাশ প্রতিরক্ষাকে আরও সুসংহত করতে সংযোজিত হয়েছে এমএলআরএস ও মিসাইল রেজিমেন্ট।

দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেনাবাহিনীর প্রশংসা করে বলেন, সেনাবাহিনী তার মূল কার্যক্রমের পাশাপাশি সব সময়ই জাতির গঠনমূলক কর্মকান্ডে নিজেদের নিয়োজিত করেছে। বহুল প্রত্যাশিত পদ্মা সেতু নির্মাণের কাজ তদারকি, যোগাযোগের জন্য কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়ক প্রকল্প, ফেনির মহিপাল ফ্লাইওভার নির্মাণসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বভার আপনাদের ওপর ন্যস্ত করা হয়েছে। বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় সেনাসদস্যরা আত্মত্যাগ, কর্তব্যনিষ্ঠা ও পেশাদারিত্বের মাধ্যমে বাংলাদেশের জন্য বয়ে আনছে সম্মান ও মর্যাদা, যা বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করছে। বর্তমান সরকার সেনাবাহিনীর সদস্যদের নানা সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করেছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, অবসরপ্রাপ্ত সেনাসদস্যদের চিকিৎসাসেবা ও আবাসনসহ বিভিন্ন কল্যাণমূলক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা হয়েছে। রেশন বৃদ্ধি করেছি। ভাতা ও ক্ষতিপূরণ অনুদান উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি করেছি। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও সেনাবাহিনীর ভূমিকার প্রশংসা করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, নির্বাচনে সেনাবাহিনীর সদস্যরা নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে দেশের গণতান্ত্রিক ধারা সমুন্নত রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সীমান্ত বিরোধ নিষ্পত্তি করে আমরা ছিটমহলের সমস্যার সমাধান করেছি। আমরা সমুদ্রসীমা জয় করেছি। জলে, স্থলে ও আকাশসীমায় বর্তমানে আমাদের অবস্থান সুষ্পষ্ট ও সুর্নিদিষ্ট হয়েছে। তিনি বলেন, জনগণের সেবা করার জন্য আমরা সব সময় সেনাবাহিনীর সহযোগিতা পেয়েছি। বর্তমান সরকারের রাষ্ট্র পরিচালনার সময় যখনই প্রয়োজন হবে তখনই সেনাবাহিনী জনগণের পাশে এসে দাঁড়াবে, এটা আমার দৃঢ় বিশ্বাস। এর আগে বেলা সোয়া ১১টার দিকে একটি হেলিকপ্টারযোগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজশাহী সেনানিবাসে পৌঁছেন। সেখানে সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ তাকে স্বাগত জানান। এরপর প্রধানমন্ত্রী শহীদ কর্নেল আনিস প্যারেড গ্রাউন্ডে ইনফ্যান্ট্রি রেজিমেন্টের ৭, ৮, ৯ এবং ১০ বীর-এর ন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড জাতীয় পতাকা কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে অভিবাদন গ্রহণ করেন। পরে তিনি কুচকাওয়াজ পরিদর্শন করেন এবং ওই চার বীরকে জাতীয় পতাকা প্রদান করেন। অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তাবিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, নৌবাহিনীর প্রধান ভাইস অ্যাডমিরাল এএমএমএম আওরঙ্গজেব চৌধুরী, বিমান বাহিনীর প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল মাসিহুজ্জামান সেরনিয়াবাত, রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন প্রমুখ।

সর্বশেষ খবর