সোমবার, ৪ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা
তৃণমূলে স্বাস্থ্যসেবা

পদে পদে দুর্ভোগ রোগীদের

গফরগাঁও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

সৈয়দ নোমান, ময়মনসিংহ

গফরগাঁওয়ের প্রায় সাড়ে চার লাখ মানুষের জন্য সরকারি স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র হিসেবে রয়েছে ৫০ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। কিন্তু চরম অব্যবস্থাপনা, জনবল ও ওষুধ সংকটের পাশাপাশি চিকিৎসকের অনুপস্থিতির কারণে এটি একটি ভঙ্গুর চিকিৎসাসেবা কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। ফলে প্রতিদিন স্বাস্থ্যসেবা নিতে আসা শত শত রোগী অসহনীয় দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন।

সূত্র মতে, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসকের ২০টি পদ থাকলেও দায়িত্ব পালন করছেন মাত্র পাঁচজন। এরমধ্যে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা একজন, জুনিয়র কনসালটেন্ট দুজন, মেডিকেল অফিসার ও ইনডোর মেডিকেল অফিসার রয়েছেন একজন করে। অবেদনবিদ সহকারী (এনেসথেসিয়ান) না থাকায় নেই কোনো ধরনের অস্ত্রোপচারের সুযোগ। এ ছাড়াও সংকট রয়েছে ওয়ার্ড বয়, ঝাড়ুদার ও নাইট গার্ডের। আর যে কয়জন চিকিৎসক রয়েছেন তাদের মধ্যেও কেউ না কেউ প্রতিদিন অজ্ঞাত কারণে অনুপস্থিত থাকেন। আর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, একজন চিকিৎসকের রাতে দায়িত্ব পালন করার পরদিন তার পক্ষে সেবা দেওয়া সম্ভব নয়। এ ছাড়াও জেলা এবং ঢাকায় বিভিন্ন মিটিংয়ের কারণে অনেক সময় অনেকেই অনুপস্থিত থাকেন। তবে একেবারেই ভিন্ন তথ্য মিলেছে সহকারী সার্জন ডা. আরিফুর রহমান ও সার্জারি কনসালটেন্ট ডা. আফরোজা ইসলামের বিরুদ্ধে। ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে তিন দিনের নৈমিত্তিক ছুটি নেওয়ার পর লাপাত্তা ডা. আরিফুর রহমান। তার খোঁজ কেউ জানেন না। আর ডা. আফরোজা ইসলাম গত বছরের অক্টোবরে তিন দিনের ছুটি নিয়ে ১১ জানুয়ারি এসে চাকরি থেকে অব্যাহতির আবেদন করেন।  সব মিলিয়ে দায়িত্বে অবহেলা, ফাঁকিবাজি এবং চিকিৎসক সংকটে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি এখন ‘নামমাত্র’ সেবাদান প্রতিষ্ঠান হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে। চিকিৎসক সংকটের কারণে কোনো ধরনের অস্ত্রোপচার হচ্ছে না স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে। সর্দি-কাশি আর জ¦রের ওষুধ ছাড়া অন্যকিছু মিলছে না। সরেজমিন গিয়ে দেখা মেলে চিকিৎসকদের কক্ষের সামনে শত শত রোগীর ভিড়। রোগী সামলাতে মোটামুটি গলদঘর্মই হচ্ছেন তারা। অথচ প্রতিদিন বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসছেন প্রায় দুই থেকে আড়াইশ রোগী। আর ইনডোরে ভর্তি থাকেন ৩০ জনের মতো। সব মিলিয়ে তিন থেকে পাঁচজন চিকিৎসক রোগী সামলাতে মোটামুটি হিমশিমই খাচ্ছেন। এ অবস্থায় উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে আসা অনেক  রোগীকেই হাসপাতালে ডাক্তার না পেয়ে হতাশ হয়ে ফিরে যেতে দেখা যায়। হাসপাতালটিতে চিকিৎসা নিতে আসা কলেজ রোডের সুভা মিয়া (৪৮) জানান, চলতি সপ্তাহে দুই দিন এসেও চিকিৎসক না থাকায় তাকে চিকিৎসা না নিয়ে ফিরে যেতে হয়েছে। অস্ত্রোপচারের সুযোগ না থাকায় সংকটাপন্ন প্রসূতিরা বিপত্তিতে পড়ছেন বলে জানান সালেহা আক্তার (৩৭) নামে চিকিৎসা নিতে আসা আরেক রোগী। হাসপাতালটির প্রধান সহকারী ও হিসাবরক্ষক মীর গোলাম রব্বানি জানান, চরম চিকিৎসক সংকট রয়েছে এখানে। চিকিৎসক স্বল্পতার কারণে কোনো ধরনের অস্ত্রোপচারও হয় না। তবে কিছু কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়। তিনি আরও জানান, এসব বিষয় জেলা সিভিল সার্জন অফিসে বেশ কয়েকবার জানানো হয়েছে। দ্রুতই তারা ব্যবস্থা নিচ্ছেন বলে জানা গেছে। এসব বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা সিভিল সার্জন ডা. মো. আবদুর রব জানান, ডা. আরিফুর রহমানের দীর্ঘদিন অনুপস্থিত থাকার বিষয়টি মন্ত্রণালয়ে জানানো হয়েছে। বাকি বিষয়েও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

সর্বশেষ খবর