সোমবার, ৪ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা
কৃষি

নাটোরে মটরশুঁটির চাষ বেড়েছে

নাসিম উদ্দীন নাসিম, নাটোর

নাটোরে মটরশুঁটির চাষ বেড়েছে

নাটোরে কৃষকরা মটরশুঁটি চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছে। বিগত বছরে জেলায় আবাদি জমি ও উৎপাদন উভয়ই বেড়েছে। চলতি বছর জেলায় অন্তত ৭০ কোটি টাকার মটরশুঁটি উৎপাদন হবে বলে আশা করছে কৃষি বিভাগ।  নাটোর জেলায় চলতি মৌসুমে ৯৬০ হেক্টর জমিতে মটরশুঁটি চাষ হয়েছে। এর অধিকাংশই নাটোর সদর উপজেলায়- যা ৭৬৫ হেক্টর। বড়াইগ্রাম উপজেলায় ১১৫ হেক্টর, লালপুরে ৪০ হেক্টর, নলডাঙ্গায় ২৫ হেক্টর এবং সিংড়া উপজেলায় ১৫ হেক্টর জমিতে মটরশুঁটি চাষ হয়েছে। ৯৬০ হেক্টর জমি থেকে ৯ হাজার ৬০০ টন মটরশুঁটি উৎপাদন হবে। মণ প্রতি ৩০০০ টাকা হিসেবে যার আর্থিক মূল্য ৭২ কোটি টাকা। গত বছরে জেলায় ৮১২ হেক্টর জমিতে ৮ হাজার ৮০ টন মটরশুঁটি উৎপাদন হয়। ২০১৬ সালে ৬৮৫ হেক্টর জমি থেকে ৬ হাজার ৮১৫ টন এবং এর পূর্ববর্তী বছরে ১৭৭ হেক্টর জমি থেকে ১ হাজার ৭৭৮ টন মটরশুঁটি উৎপাদন হয়। ডিসেম্বর  মাসে জমি চাষ করে মটরশুঁটির বীজ বপণ করা হয়। বিঘা প্রতি ১২ কেজি বীজের প্রয়োজন হয়। জমিতে শুধু টিএসপি ও পটাশ সারের প্রয়োজন হয়। ক্ষেত্রবিশেষে গোড়াপচা ও পোকাবিরোধী কীটনাশক ব্যবহার করতে হয়। সেচের প্রয়োজন হয় না বললেই চলে।

এক বিঘা জমিতে খরচ পড়ে ১০ হাজার টাকা। প্রতি মণের দর ২৫০০ টাকা হিসেবে ৬২ হাজার টাকা বিক্রি হয়। নাটোর সদর উপজেলার সব গ্রামে মটরশুঁটি চাষ হলেও লক্ষ্মীপুর-খোলাবাড়িয়া ইউনিয়নের হয়বতপুর, কাঁঠালবাড়িয়া এবং লক্ষ্মীপুর গ্রামে মটরশুঁটি চাষের আধিক্য লক্ষ্য করা যায়। বাঙ্গাবাড়িয়া এলাকার কৃষক মজিদুল ইসলাম তার দুই বিঘা জমিতে মটরশুঁটি আবাদ করেছেন। ইতিমধ্যে মটরশুঁটি পেয়েছেন ১৫ মণ। দ্বিতীয় ও তৃতীয় দফায় আরও ১৫ মণ করে পাওয়ার ব্যাপারে তিনি আশাবাদী। নাটোর ছাড়াও ঢাকার ব্যবসায়ীরা মটরশুঁটির ক্রেতা। বটতলা হাটের আড়তদার মোহাম্মদ আলী জানান, তার আড়তে গত রবিবার ২০০ মণ মটরশুঁটি কেনাবেচা হয়েছে গড়ে ২৫০০ টাকা মণ দরে। মৌসুমের শুরুতে এই দর প্রায় দ্বিগুণ ছিল। নলডাঙ্গা উপজেলার মাধনগর ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. সোহেল রানা ও মো. আসরাফুদ্দৌলা খোকন জানান, চাষবিহীন এবং চাষকৃত জমিতে-উভয় পদ্ধতিতে মটরশুঁটি আবাদ হয়। চাষবিহীন জমিতে তুলনামূলকভাবে মটরশুঁটির উৎপাদন কম হলেও আগাম ফলন উঠার ফলে কৃষকরা লাভবান হয়ে থাকেন এবং ওই জমিতে ভুট্টা চাষের সুযোগ পান। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মেহেদুল ইসলাম বলেন, মটরশুঁটির শেকড় ইউরিয়ার ফ্যাক্টরি হিসেবে কাজ করে। তাই মটরশুঁটির জমিতে ইউরিয়া সার তো প্রয়োজন হয়ই না, অধিকন্তু পরবর্তী ফসল চাষাবাদে ওই জমিতে ২০ ভাগ ইউরিয়া কম ব্যবহার করলে চলে। নাটোর কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, মাটির গুণাগুণ বৃদ্ধির পাশাপাশি ফসলের উচ্চমূল্য পাওয়ার কারণে কৃষকরা মটরশুঁটি চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। এই ধারাবাহিকতায় ভবিষ্যতে মটরশুঁটি এই এলাকার অন্যতম অর্থকরী ফসলে পরিণত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

সর্বশেষ খবর