বুধবার, ৬ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা
তৃণমূলে স্বাস্থ্যসেবা

অবকাঠামো আছে নেই শুধু সেবা

চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে মোট শয্যা সংখ্যা ২৫০টি। ভবনও আছে প্রয়োজনীয়। কিন্তু প্রতিনিয়ত এ হাসপাতালে রোগী ভর্তি থাকে ১৪০ থেকে ১৮৬ জন। ফলে প্রায় দেড় কোটি মানুষের এই চট্টগ্রামের দ্বিতীয় বৃহত্তম সরকারি হাসপাতালের শয্যাগুলো রোগী শূন্যই পড়ে থাকে। অবকাঠামো থাকলেও সেবা না থাকায় রোগীরা এ হাসপাতালে যায় না বলে অভিযোগ। রোগী ভর্তিতে নাজুক অবস্থায় রয়েছে মেডিসিন, শিশু ও চক্ষু বিভাগে। চক্ষু ওয়ার্ডে টানা পাঁচ দিন কোনো রোগীই ভর্তি হয়নি। জানা যায়, বর্তমানে হাসপাতালে ৪০ শয্যার মেডিসিন ওয়ার্ড, ১০ শয্যার কার্ডিওলজি, ৫০ শয্যার সার্জারি, ১২ শয্যার অর্থোপেডিক, ৫০ শয্যার শিশু, ২৪ শয্যার নাক কান গলা, ২ শয্যার চক্ষু, ১০ শয্যার কেবিন এবং ১৫ শয্যার পেয়িং বেড (টাকার বিনিময়ে) আছে। গত ৩ মার্চ হাসপাতালে মোট রোগী ভর্তি ছিল ১৫১ জন, ২ মার্চ ১৬৫, ২৮ ফেব্রুয়ারি ১৭২, ২৭ ফেব্রুয়ারি ১৮৬ এবং ২৬ ফেব্রুয়ারি ১৮১ জন। কিন্তু সম্পূর্ণ বিপরীত চিত্র এ হাসাপতাল থেকে অনতিদূরের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের। এক হাজার ৩১৩ শয্যার এ হাসপাতালে প্রতিনিয়তই গড়ে রোগী ভর্তি থাকে ৩ হাজার ৩১ জন। আর গড়ে প্রতিদিন ভর্তি হচ্ছে ৬২১ জন। সেবা না পাওয়ায় রোগীরা এ হাসপাতালে যায় না বলে অভিযোগ। জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. অসীম কুমার নাথ বলেন, ‘প্রয়োজনের তুলনায় কম জনবল, হাসপাতালের আন্তবিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা রোগীবান্ধব না হওয়া, আন্তবিভাগে সার্বক্ষণিক চিকিৎসক না থাকাসহ নানা কারণে রোগীরা এ হাসপাতালে সেবা নিতে কম আসছেন। তাছাড়া এ হাসপাতালে কঠিন কিছু রোগের প্রয়োজনীয় সেবা দেওয়ার ব্যবস্থা নেই। সবচেয়ে বড় কথা হলো এখান থেকে মাত্র ১৫ মিনিটের দূরত্বে চমেক হাসপাতাল। সেখানে সব ধরনের রোগের জরুরি সেবা বিদ্যমান। তাই এ হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা কম।’ হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ৪০ শয্যার মেডিসিন ওয়ার্ডে গত ৩ মার্চ রোগী ভর্তি ছিল ১৮, ২ মার্চ ২৫, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২৭ ও ২৭ ফেব্রুয়ারি ২৮ জন। অতি জরুরি ৫০ শয্যার শিশু ওয়ার্ডে গত ৩ মার্চ রোগী ভর্তি ছিল ১৮, ২ মার্চ ১৭, ২৮ ফেব্রুয়ারি ১৩ ও ২৭ ফেব্রুয়ারি ১৫ জন। ৫০ শয্যার সার্জারি ওয়ার্ডে গত ৩ মার্চ রোগী ভর্তি ছিল ৩৫, ২ মার্চ ৩৪, ২৮ ফেব্রুয়ারি ৪০ ও ২৭ ফেব্রুয়ারি ৪৪ জন। ৫০ শয্যার গাইনি ওয়ার্ডে গত ৩ মার্চ রোগী ভর্তি ছিল ৩৩, ২ মার্চ ৩৭, ২৮ ফেব্রুয়ারি ৪৪ ও ২৭ ফেব্রুয়ারি ৪১ জন। গত রবিবার দুপুরে হাসপাতালের মেডিসিন, কার্ডিওলজি ও শিশু ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, অনেক শয্যা খালি পড়ে আছে। ভর্তি রোগীদের স্বজনরা অন্যান্য শয্যায় বসে আড্ডা দিচ্ছেন। কার্ডিওলজি ওয়ার্ডে আনোয়ার নামে রোগীর এক স্বজন বলেন, ‘আমরা কয়েকদিন ধরে ওয়ার্ডে আছি। এখানে এ শয্যাগুলো খালি দেখছি।’ অভিযোগ আছে, চট্টগ্রামের অন্যতম এ সেবা কেন্দ্র থেকে রোগীরা আশানুরূপ সেবা পায় না। সাধারণ কোনো রোগ নিয়েও জরুরি বিভাগে এলে রোগীকে সরাসরি চমেক হাসপাতালে পাঠানো হয়। তাছাড়া, আন্তবিভাগে রোগীদের সেবা না পাওয়া, চিকিৎসক না থাকা, নার্সদের যথা সময়ে ওয়ার্ডে রোগীর প্রয়োজনীয় সেবা না দেওয়া, রোগীদের ওষুধ না দেওয়াসহ রয়েছে নানা অভিযোগ। অন্যদিকে, সন্ধ্যার পর পরই পাহাড়ের ওপর থাকা ওয়ার্ডগুলোর বাইরে বিরাজ করে ভুতুড়ে অন্ধকার। এ সময় নানা অঘটনও ঘটেছে বলে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। জানা যায়, ১৯০১ সালে ১০ একর জায়গায় ৮০ শয্যার জনবল ও অবকাঠামো নিয়ে প্রতিষ্ঠা করা হয় চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল। ২০০৩ সালে আগের জনবল অপরিবর্তিত রেখেই হাসপাতালকে ১৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। সর্বশেষ ২০১২ সালের ২৯ জানুয়ারি বর্তমান জনবল ঠিক রেখে হাসপাতালটিকে ২৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। বর্তমানে ১৫০ শয্যার জনবল দিয়েই চলছে ২৫০ শয্যার জেলা সদর হাসপাতাল।

সর্বশেষ খবর