বৃহস্পতিবার, ৭ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা

কোথাও নেই জাতীয় পার্টি

উপজেলা নির্বাচনে নেই, প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী চলে গেল নীরবে, পার্টি অফিসে নীরবতা নেতারা দলবিমুখ

শফিকুল ইসলাম সোহাগ

জাতীয় সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি চলমান উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে নামেমাত্র। গত ১ জানুয়ারি দলটির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী চলে গেল নীরবে। জাতীয় নির্বাচনের আগে পার্টির কাকরাইলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় নেতা-কর্মীদের আনাগোনায় মুখর থাকলেও এখন আর তেমনটা দেখা যায় না। পার্টি চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদের বনানীর কার্যালয়েও অনেকটা সুনসান নীরবতা। জাতীয় নির্বাচনের পর থেকেই দলের কেন্দ্রীয় নেতারা দলবিমুখ হয়ে পড়েছে। পার্টির পক্ষ থেকে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি পিলখানা হত্যাকান্ডে  নিহতদের আত্মার মাগফিরাত কামনায় শ্রদ্ধা নিবেদন করতে কেউ যাননি। যাননি পুরান ঢাকায় অগ্নিকাণ্ডে  হতাহতদের প্রতি সমাবেদনা জানাতে। পার্টির নেতা-কর্মীরা বলছেন, এইচ এম এরশাদ পুরোপুরি সুস্থ থাকলে দল এমন কর্মসূচিবিমুখ হতো না। এভাবে দল চলতে থাকলে সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি প্যাডসর্বস্ব দলে পরিণত হতে খুব বেশি সময় লাগবে না। জানতে চাইলে পার্টির কো-চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদের নেতৃত্বেই দল চলে। এ ছাড়া আমরা এখন সংসদের কার্যক্রমে ব্যস্ত রয়েছি। সংসদের অধিবেশন শেষ হলেই পার্টির চেয়ারম্যানের অনুমোদন সাপেক্ষে বেশ কিছু কর্মসূচি হাতে নেওয়ার ইচ্ছা রয়েছে। নেতা-কর্মীরা বলছেন, ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ায় ১ জানুয়ারি সভা-সমাবেশ না করার বাধ্যবাধকতা ছিল। কিন্তু এক সপ্তাহ বা ১৫ দিন পর এই সমাবেশ করা যেত। ২০ জানুয়ারি পুরান ঢাকায় হতাহত হয়েছে। প্রতিটি দলের পক্ষ থেকে সেখানে যাওয়া হয়েছে। জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে পার্টির সিনিয়র  কো-চেয়ারম্যান বেগম রওশন এরশাদ, কো-চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের ও মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গাসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের একটি টিমের স্পটে এসে মানুষের পাশে দাঁড়ানো উচিত ছিল বলে মনে করেন নেতা-কর্মীরা। তবে ২৩ ফেব্রুয়ারি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আহতদের খোঁজ নিতে যান জি এম কাদেরসহ কেন্দ্রীয় নেতারা। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের অসুস্থ হওয়ার দিনই বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ কেন্দ্রীয় নেতারা হাসপাতালে যান। জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের পরদিন ওবায়দুল কাদেরকে দেখতে গেলেও দেখা পাননি। এর আগেই সিঙ্গাপুরের উদ্দেশে ওবায়দুল কাদেরকে নিয়ে হাসপাতাল ত্যাগ করা হয়। নেতা-কর্মীরা বলছেন, জাতীয় পার্টি সবকিছুতেই ঝিমিয়ে পড়েছে। উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জাতীয় পার্টি প্রার্থীকে এতিমের মতো মাঠে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। দলীয় প্রার্থী হিসেবে শুধু শাফিন আহমেদকে লাঙ্গল প্রতীকটাই দেওয়া হয়েছে; আর কিছু নয়। দলের শীর্ষ নেতারা কেউ শাফিন আহমেদের প্রচারণায় অংশ নেননি। কেন্দ্র থেকেও কোনো খোঁজ নেওয়া হয়নি। পার্টির কেন্দ্রীয় যুগ্ম আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক হাসিবুল ইসলাম জয়ের প্রচেষ্টায় পার্টির একটি অংশকে মাঠে নামিয়েছিলেন। বাকিটা শাফিন আহমেদের ব্যক্তি ইমেজে ভোট পেয়েছেন। হাসিবুল ইসলাম জয় বলেন, এখানে শাফিন কোনো বিষয় নয়। বিষয় হচ্ছে লাঙ্গল। এ লাঙ্গল প্রতীককে জয়যুক্ত করতে সবাই যদি সম্মেলিতভাবে মাঠে নামত তাহলে ফলাফল আরও ভালো করতে পারতাম। নেতা-কর্মীরা বলছেন, সারা দেশে উপজেলা পরিষদ নিয়ে নির্বাচনী হাওয়া বইছে। বিএনপি এতে অংশ নিচ্ছে না। জাতীয় পার্টি শক্তভাবে মাঠে অবস্থান নিয়ে ভালো ফলাফল করতে পারত। কিন্তু নির্বাচনী মাঠে নেই জাপার প্রার্থীরা। জাতীয় পার্টির যুগ্ম দফতর সম্পাদক রাজ্জাক খান জানিয়েছেন, দলীয় মনোনয়ন পেতে মাত্র ১৩০ জন ফরম উত্তোলন করেছেন। এইচ এম এরশাদ বর্তমানে অনেকটা সুস্থ থাকলেও সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার সুস্থতা কামনায় তিনটি মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানে উপস্থিত হননি দলের কোনো কেন্দ্রীয় নেতা। তবে ওই সময়ে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি এবং গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণে ঠিকই অংশ নিয়েছিলেন নেতারা। শুধু অংশই নেননি, প্রথম কাতারে বসার জন্য সকাল সকাল রওনা হয়েছিলেন। কেন্দ্রের কোনো কর্মসূচি না থাকায় পার্টির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোও ঝিমিয়ে পড়েছে। নেতা-কর্মীরা বলছেন, এইচ এম এরশাদ অসুস্থ হওয়ার পর নতুন নেতৃত্ব আসার পর থেকেই পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান বেগম রওশন এরশাদসহ দলের একটি বড় গ্রুপ দলে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে। তারা বলছেন, এইচ এম এরশাদ ইতিমধ্যে জানিয়েছেন, তার অবর্তমানে পার্টির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করবেন তার ভাই পার্টির কো-চেয়ারম্যান জি এম কাদের। তাহলে বেগম রওশন এরশাদের অবস্থান পার্টিতে কোথায়। এ অবস্থার উত্তরণ না ঘটাতে পারলে সম্ভাবনাময় দলটি আগামীতে টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে পড়বে। সার্বিক বিষয়ে জানতে মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গার মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর