পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া এবং সদর উপজেলার বেশ কয়েকটি নদীর গতি প্রবাহ বন্ধ করে পাথর উত্তোলন করার ফলে হুমকির মুখে পড়েছে কয়েকটি নদ-নদী। প্রায় দুই শতাধিক প্রভাবশালী ব্যবসায়ী জেলার কয়েকটি প্রধান নদীর গতিপ্রবাহ বন্ধ করে পাথর উত্তোলন করছেন। এসব নদীর কোনো কোনোটির বুক এখন পানিশূন্য। অন্যগুলোর মরে যাওয়ার মতো অবস্থা। কোনো কোনো নদীর অস্তিত্বই বোঝা মুশকিল। এভাবে পাথর উত্তোলন চলতে থাকলে মানচিত্র থেকে অচিরেই হারিয়ে যাবে এসব নদী। তেঁতুলিয়া উপজেলার ডাহুক, করোতোয়া এবং ভেরসা নদীর গতি প্রবাহ বন্ধ করে অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন চলছে। ভারত থেকে বাংলাদেশের প্রবেশ মুখ থেকে শুরু করে মাঝিপাড়া পর্যন্ত প্রায় ১৫ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ডাহুক নদীর স্বাভাবিক গতিপ্রবাহ আটকে দিয়ে পাথর উত্তোলন চলছে। পাথর উত্তোলনের ফলে এই নদীটি বিলীন হয়ে যাচ্ছে। কোথাও কোথাও নদীটির অস্তিত্বই বোঝা যায় না এখন। গত কয়েক বছর ধরেই এই নদীতে পাথর উত্তোলন করছেন প্রভাবশালীরা। স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন থেকে গত বছর ভ্রাম্যমাণ আদালতে কয়েকজন ব্যাবসায়ীকে কয়েক মাসের সাজা প্রদান করা হয়। কিন্তু তবুও থেমে নেই নদী হত্যা। ভজনপুর এলাকার ভদ্রেশ্বর, কালিয়ামনী, ময়নাগুড়ি, ঝালিংগী সদর উপজেলার ভেলকুজোতসহ বেশ কিছু এলাকায় করোতোয়া নদীতে চলছে পাথর উত্তোলন। সদর উপজেলার ভেলকুজোত এলাকায় বনবিভাগের জমি কেটে পাথর উত্তোলন করা হচ্ছে। পাথর উত্তোলনের মাটি ও বালি ফেলা হচ্ছে করোতোয়ায়। এখানে নদীটি মরে যাচ্ছে। বোমা মেশিন দিয়ে পাথর উত্তোলনের ফলে নদীটি স্বাভাবিক গতি প্রবাহও হারিয়েছে। এসব এলাকার প্রভাবশালী ব্যবসায়ীরা রাতের অন্ধকারে বোমামেশিন দিয়ে পাথর উত্তোলন করে থাকে। সম্প্রতি ড্রেজার মেশিনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দুর্নীতি ধরার জন্য দুর্নীতি দমন কমিশন মাঠে নামলে আপাতত ড্রেজার মেশিন দিয়ে পাথর উত্তোলন বন্ধ রয়েছে। কিন্তু তেঁতুলিয়া উপজেলার ভদ্রেশ্বর, কালিয়ামনী, ময়নাগুড়ি, ঝালিংগী, সদর উপজেলার মিড়গড়, খাটিয়াগজসহ বেশ কিছু এলাকায় করোতোয়া প্রায় শীর্ণ হয়ে গেছে। করতোয়া নদীর তীরবর্তী সমতল এলাকা কেটেও নদী ভরাট করে পাথর উত্তোলন করা হচ্ছে। ফলে নদীর বুকে জমা হচ্ছে বালি। বালি দিয়ে ভরাট হওয়ায় গতিপথ বদলে যাচ্ছে। প্রশস্ত নদীটির আকৃতি কমে আসছে। ফলে যে কোনো সময় এই নদীটিও হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তেঁতুলিয়া উপজেলার ভূতিপুকুর গ্রামে উৎপত্তি হয়েছে ভেরসা নামের আরেকটি নদী। এই নদী প্রায় ১৬ কিলোমিটার প্লাবিত করেছে। নদীটি বর্তমানে মৃত। এই নদীর দুই পাড়ে খুনিয়াগজ এবং কাটাপাড়া এলাকায় পাথর উত্তোলন করছে ব্যবসায়ীরা। পাথর উত্তোলনের সময় পানির সঙ্গে প্রচুর বালি এই নদীতে ফেলা হয়। এ ছাড়া নদীর পাড় কেটে পাথর উত্তোলন চলছে। নদীটি বর্তমানে পানিশূন্য। সদর উপজেলার তালমা, চিলকা, চাওয়াই নদীতে বোমা মেশিন দিয়ে পাথর উত্তোলন করা হয়। জাগ্রত তেঁতুলিয়া নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের মুখপাত্র মোহাম্মদ রনি জানান, অবৈধভাবে ড্রেজার মেশিন দিয়ে পাথর উত্তোলনের ফলে করোতোয়া নদী শীর্ণ হয়ে গেছে। হুমকির মুখে পড়ছে পরিবেশ। তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সানিউল ফেরদৌস বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ডাহুক নদী বন্ধ করে ব্যবসায়ীরা ব্যাপোরোয়াভাবে পাথর তুলছে। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে গত বছর ছয়জনের দুই মাস করে কারাদ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তারপরও পাথর উত্তোলন চলছে। তবে অচিরেই আবারও ভ্রাম্যমাণ আদালতসহ নানা প্রশাসনিক উদ্যোগ নেওয়া হবে। জেলা প্রশাসক সাবিনা ইয়াসমিন জানান, জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে অভিযান চলছে। নদী হত্যা বন্ধে আরও কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।