বৃহস্পতিবার, ৭ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা

ক্রেডিট কার্ড নয় কথার যন্ত্র

মির্জা মেহেদী তমাল

ক্রেডিট কার্ড নয় কথার যন্ত্র

দেখতে একদম ব্যাংকের ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ড; কিন্তু এ কার্ড দিয়ে ব্যাংকের বুথ থেকে টাকা তোলা যায় না। আসলে এটি ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ড নয়, এটি হলো কথার যন্ত্র। কার্ডের প্রলেপ দেওয়া একটি বিশেষ ইলেকট্রনিক ডিভাইস। এ ডিভাইসের ভিতরে থাকে মোবাইল সিম। এর মাধ্যমে বাইরে থেকে আসা কল রিসিভ করা গেলেও ওই ডিভাইস দিয়ে কল করা যায় না। ডিভাইসটির সঙ্গে আছে একটি ছোট্ট বল্টুর মতো ইয়ারপিন, যা কানে লাগিয়ে ওই ডিভাইসে আসা কল রিসিভ করে কথা শোনা  যায়, বলাও যায়। কল করার কোনো অপশন নেই। তবে কী কাজে ব্যবহৃত হয় এই ডিভাইস? ক্রেডিট কার্ডের অবিকল দেখতে এই ডিভাইসটি দেখলে এমন প্রশ্ন আসতে পারে যে কোনো মানুষের মধ্যে। এমন প্রশ্ন এসেছিল দেশের গোয়েন্দাদের মাঝে। তারা তদন্ত করে যা জানতে পারে তাতে করে নিজেরাই হতবাক। গোয়েন্দারা জানতে পারে, এই ডিভাইস ব্যবহার করা হয় বিভিন্ন পরীক্ষা কেন্দ্রে। শিক্ষার্থীরা এই ডিভাইস নিয়ে প্রবেশ করে পরীক্ষা কেন্দ্রে। পরীক্ষা শুরুর পর সেই ডিভাইসে চলে আসে কল। রিসিভ করার পরই ওপাশ থেকে একে একে প্রশ্নের উত্তর বলতে থাকে। শিক্ষার্থীরা মনের আনন্দে পরীক্ষায় শতভাগ জবাব দিয়ে বেরিয়ে আসে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এসব ডিভাইস ব্যবহার করেই বিসিএস, মেডিকেল, বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা ও সরকারি ব্যাংকসহ বিভিন্ন সরকারি চাকরির পরীক্ষায় জালিয়াতির মাধ্যমে চাকরি প্রার্থীকে পাস করিয়ে দেয় একটি জালিয়াত চক্র। গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হয়ে যাওয়া সরকারি ব্যাংকগুলোতে নিয়োগ পরীক্ষায় এরকম জালিয়াতি করে অনেককেই পাস করিয়েছে চক্রটি। এ চক্রের সঙ্গে জড়িত রয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ বিভিন্ন সরকারি ব্যাংকের কিছু অসাধু ব্যক্তি, ইঞ্জিনিয়ার ও বিভিন্ন প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। গোয়েন্দাদের দাবি, এ চক্রটি একটি শক্তিশালী চক্র। ঢাকাকেন্দ্রিক এ চক্রের ১৫ জনকে শনাক্ত করতে পেরেছেন তারা। এ ছাড়াও মাঠপর্যায়ে এ চক্রের শতাধিক সদস্য কাজ করছে। যারা দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে জালিয়াতির মাধ্যমে পরীক্ষায় পাস করতে চাওয়া প্রার্থীদের মোটা অঙ্কের বিনিময়ে চুক্তির মাধ্যমে নিয়োগ পরীক্ষায় পাস করিয়ে থাকে। গোয়েন্দাদের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে এ সিন্ডিকেটের বেশ কয়েকজন ডিভাইস জালিয়াতির মাধ্যমেই সোনালী, পূবালী ও কৃষি ব্যাংকে চাকরি নিয়েছে। বেশ কিছু দিন ধরেই একটি চক্র বিভিন্ন ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষাসহ বিভিন্ন পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস করে আসছিল। এসব ঘটনা সামনে রেখে প্রশ্ন ফাঁসকারীদের ধরতে অভিযানে নামে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। কিছু দিন অনুসন্ধানের পর গোয়েন্দারা এই জালিয়াত চক্রের সন্ধান পান, যারা বিশেষ ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার করে মোবাইল সিমের মাধ্যমে পরীক্ষার সময় উত্তর সরবরাহ করে। জানা গেছে, প্রথমে চক্রের সদস্যরা বিভিন্ন পরীক্ষার্থীর সঙ্গে যোগাযোগ করে চুক্তি করত। চুক্তিকৃত অর্থের পরিমাণ ক্ষেত্রবিশেষে আড়াই থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকা পর্যন্ত হতো। নির্দিষ্ট পরীক্ষার দিনে চুক্তিবদ্ধ পরীক্ষার্থীদের বাহুতে বিশেষ কায়দায় মাস্টার কার্ডসদৃশ ইলেকট্রনিক ডিভাইসটি স্থাপন করত। এরপর কানে লাগিয়ে দিত অতিক্ষুদ্র ইয়ারপিন, যার মাধ্যমে পরীক্ষার্থী কেবল কল রিসিভ করতে পারবে। কোনো কল দিতে পারবে না। পরীক্ষার্থী কেন্দ্রে ঢোকার পর বাইরে থেকে ডিভাইসটিতে ফোন করা হতো। পরীক্ষার্থী কৌশলে সেই কল রিসিভ করে প্রশ্ন জানিয়ে দেয় বাইরে থাকা এ চক্রের সদস্যদের। এরপর বাইরে থেকে ওই প্রশ্নের দ্রুত উত্তর বের করে ডিভাইসের মাধ্যমে পরীক্ষার্থীদের সরবরাহ করা হতো।

সর্বশেষ খবর