বৃহস্পতিবার, ৭ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা
কৃষি সংবাদ

তাজুলের নেশা তালগাছ রোপণ

কামরুজ্জামান সোহেল, ফরিদপুর

তাজুলের নেশা তালগাছ রোপণ

বয়স ৮২ বছর। ঠিকমতো চলাফেরা করতে পারেন না। চোখেও কিছুটা কম দেখেন। কিন্তু একটি মহৎ নেশা তাকে এই বয়সেও দমিয়ে রাখতে পারেনি। নিজের আয়ের টাকা দিয়েই রোপণ করছেন তাল গাছের চারা। সরকারি জমি কিংবা কারও ব্যক্তিগত জমির আইলে রোপণ করে যাচ্ছেন তাল গাছের চারা। কেউ তাকে গাছ পাগল হিসেবেও আখ্যা দিয়েছেন। তার এ মহতী কাজে অনেকেই উৎসাহ দিচ্ছেন। ইচ্ছা আর সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা থাকলে বয়স কোনো বাধা নয়, তা প্রমাণ করেছেন তাজুল ইসলাম পাটোয়ারি।  বালিয়াকান্দি উপজেলার সদর ইউনিয়নের পূর্ব মৌকুড়ি গ্রামের মৃত আবদুল নওয়াব আলীর ছেলে তাজুল ইসলাম। বজ্রপাতে অহরহ মানুষ মারা যাচ্ছে এই বিষয়টি বৃদ্ধ তাজুলকে বেশ কষ্ট দিয়েছে। বজ্রপাত রোধে তাল গাছ লাগানোর উদ্যোগ নেন তিনি। গ্রামাঞ্চলের মানুষকে বজ্রপাতের মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচাতে তাজুলের এই উদ্যোগের কথা এখন বালিয়াকান্দির মানুষের মুখে মুখে।

ইতিমধ্যে তাজুল ইসলাম তিন শতাধিক তাল গাছের চারা রোপণ করেছেন। বালিয়াকান্দির গাদারগাড়া মাঠের হালটের রাস্তা, বালিয়াকান্দি-মধুখালী সড়কের পাশে এবং আমতলা মসজিদ থেকে পশ্চিমের রাস্তার দুই পাশে এক পায়ে দাঁড়িয়ে আছে তাজুলের লাগানো তাল গাছের চারাগুলো। বয়সের ভারে নিজে ঠিকমতো চলতে না পারলেও তার লাগানো তাল গাছের চারাগুলোকে নিয়মিতভাবে পরিচর্যা করছেন তিনি। সন্তানদের কাছ থেকে তিনি যে টাকা খরচ হিসাবে পান সেই টাকা খরচ করছেন তাল গাছের চারা রোপণের কাজে।

তাজুল ইসলাম পাটোয়ারি জানান, তার নিজস্ব কোনো জায়গা-জমি নেই। তিনি প্রায় ৫-৭ বছর ধরে অন্যের জমির আইলের ওপর তাল গাছের চারা রোপণ করে আসছেন। এ পর্যন্ত তিনি প্রায় তিন শতাধিক তাল গাছের চারা রোপণ করেছেন। প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যা গাছগুলোর যত্ন নেন। নিজের সন্তানদের যেমন তিনি ¯ন্ডেœহ করেন ঠিক তেমনি তাল গাছের চারাগুলোকেও তিনি ¯ন্ডেœহ করেন। আক্ষেপ করে তাজুল ইসলাম বলেন, মানুষ এখনো অনেক অসচেতন। বজ্রপাতে যে হারে মানুষ প্রাণ দিচ্ছে তাতে তাদের নিজেদেরই তাল গাছের চারা রোপণ করা উচিত। অথচ তারা তো রোপণ করছেই না বরং আমি যে লাগিয়ে দিচ্ছি সেগুলোও তারা মেরে ফেলছেন। আমার লাগানো অনেক চারা নষ্ট হয়ে গেছে। যেখানে নষ্ট হয়ে গেছে বা মারা গেছে সেখানে নতুন করে আবার রোপণ করছি। তাজুল ইসলামের এমন উদ্যোগের কথা ছড়িয়ে পড়ায় অনেক তরুণ সংগঠিত হয়ে তাল গাছের চারা রোপণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

বালিয়াকান্দি সদর ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য মো. জাকির হোসেন জানান, তাজুল ইসলাম এ পর্যন্ত অন্যের জমির আইলের ওপর তিন শতাধিক চারা রোপণ করেছেন। বিষয়টি সময়োপযোগী এবং খুবই ইতিবাচক। বর্তমান সময়ে বজ্রপাতে মানুষ ও গবাদি পশুর ব্যাপক প্রাণহানি ঘটছে। এ পরিস্থিতিতে মৃত্যুর সংখ্যা কমিয়ে আনার জন্য তাল গাছের চারা রোপণের কোনো বিকল্প নেই।

উপজেলা কৃষি অফিসার মো. সাখাওয়াত হোসেন জানান, তাজুলের তাল গাছের চারা রোপণকে আমরা সাধুবাদ জানাই। বজ্রপাত যেহেতু উঁচু জায়গায় আঘাত করে, সে হিসেবে তাল গাছ মৃত্যু কমাতে সহায়ক হবে। তাই শুধু তাজুলই নয় বজ্রপাতের হাত থেকে নিজেদের রক্ষা করতে হলে এখন থেকেই প্রচুর পরিমাণ তাল গাছের চারা রোপণ করতে হবে সবাইকে। তাজুল ইসলামকে সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়া হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর