রবিবার, ১০ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা

ইসি কেন বিতর্কে

ইভিএমে হলে রাতে ভোটবাক্স ভরে রাখার সুযোগ থাকবে না, সিইসির মন্তব্যে তোলপাড় কমিশনারদের অতিকথন নিয়ে প্রশ্ন বিশেষজ্ঞদের

গোলাম রাব্বানী

ইসি কেন বিতর্কে

ভোট নিয়ে ঢাকঢোল পিটালেও বর্তমান নির্বাচন কমিশনের আমলেও বিভিন্ন নির্বাচন নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে। নির্বাচনের আগের রাতে সিল মারা, জালভোট, ফলাফল পাল্টানোসহ নানা অনিয়মের অভিযোগে বর্তমান কমিশন বিতর্কের মুখে পড়েছে বলে মনে করছেন নির্বাচন বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, ইসি সাংবিধানিক দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে। বর্তমান নির্বাচন কমিশন আস্থাহীনতায় ভুগছে। তাদের ওপর মানুষের আস্থা নেই। ফলে ভোট কেন্দ্রে যাচ্ছে না মানুষ। এ ছাড়া ভোট নিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনাররা ভিন্ন ভিন্ন মত প্রকাশ করছেন। সিইসি ও কমিশনারদের অতিকথন নিয়েও বিতর্ক চলছে রাজনৈতিক মহলে। গত শুক্রবার প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা বলেছেন, ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট চালু হলে রাতে ভোটের বাক্স ভরে রাখার সুযোগ থাকবে না। সম্প্রতি সুনামগঞ্জে গিয়ে একজন নির্বাচন কমিশনার বলেছেন, নির্বাচনের পূর্বরাতে ভোট বাক্সে ব্যালট ভরে দেওয়া কিংবা ভোটের দিন,  ভোট গণনার সময় কোনো অনিয়ম কোনোভাবেই মেনে নেওয়া হবে না। সিইসি ও একজন কমিশনারের এমন বক্তব্য নতুন করে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। অন্যদিকে এবারে দলীয় প্রতীকে ভোট হচ্ছে উপজেলায়। প্রথম ধাপের ভোট আজ। একাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোট ডাকাতির অভিযোগ তুলে উপজেলায় নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না বিএনপি। উপজেলা নিয়েও সিইসি ও অন্য নির্বাচন কমিশনাররা ভিন্ন ভিন্ন মত দিয়েছেন। সিইসি বলেছেন, উপজেলা নির্বাচন প্রতিযোগিতামূলক হবে। প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ভোটের জৌলুস নেই বলে মন্তব্য করেছেন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার। এছাড়া একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাত্র ১১ দিন আগেও প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা ও নির্বাচন কমিশনার (ইসি) মাহবুব তালুকদারের বিরোধিতা প্রকাশ্য রূপ নেয়। নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড বা সমান সুযোগ নিয়ে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য দিয়েছেন দুই কমিশনার। ওই সময় সিইসি সাংবাদিকদের বলেন, ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড আছে। পুলিশ আমাদের কথা মান্য করে।’ পরে সাংবাদিকদের মাহবুব তালুকদার বলেন, ‘আমি মনে করি না নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড বলে কিছু আছে। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড কথাটা এখন অর্থহীন কথায় পর্যবসিত হয়েছে।’ এমন বিপরীত বক্তব্য নিয়েও রাজনৈতিক মহলে নানা আলোচনা-সমালোচনা হয়।

নির্বাচন কমিশন কেন বিতর্কে? : বর্তমান নির্বাচন কমিশনের ওপরে মানুষের আস্থাহীনতা নিয়ে চলছে নানা বিতর্ক। সম্প্রতি কমিশনারদের অতিকথন নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন বিশেষজ্ঞরা। এ বিষয়ে সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেছেন, বর্তমান নির্বাচন কমিশনের আমলে ভোট এমন পর্যায়ে চলে গেছে যে, মানুষ ভোট কেন্দ্রে যাওয়ার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন। একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে বর্তমান কমিশনের হোম ওয়ার্ক না থাকার কারণে এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ইসির কাছে আইন আছে, তারা সেই আইনের সঠিক ব্যবহার করেনি। তিনি বলেন, সিটি ভোটে দেখা গেছে- কোনো কোনো কেন্দ্রে ৩, ৫ ও ৯টি ভোটও পড়েছে। এতেই বোঝা যায়, ভোটের প্রতি মানুষের কোনো আগ্রহ নেই। ঢাকার ভোটে যেখানে কাউন্সিলর ছিল সেখানে কিছুটা ভোট পড়েছে। ৩০ লাখ ভোটের মধ্যে ৯ লাখ ভোট কাস্ট। অনেক হতাশাজনক। তাহলে কি নিজ দলের লোকেরাও ভোট দিতে যায়নি? সাবেক এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, ভোট সুষ্ঠু-শান্তিপূর্ণ করার মধ্য দিয়ে আবারও নির্বাচন কমিশনকে জনগণের আস্থা অর্জন করতে হবে। সব মিলে বর্তমানে ভোটের অবস্থার জন্য ইসি ও স্টেকহোল্ডাররা দায়ী বলে মনে করেন সাবেক এই নির্বাচন কমিশনার।

নির্বাচন বিশ্লেষক ও সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, বর্তমান নির্বাচন কমিশন সাংবিধানিক দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে। একাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। বিভিন্ন অভিযোগের কথা বিদেশি গণমাধ্যম ও বিরোধী দলের পক্ষ থেকে এসেছে। আর সিইসি ও একজন নির্বাচন কমিশনার তাদের বক্তব্যে সেই অভিযোগ স্বীকার করেছেন। এখন নির্বাচন কমিশনকে ভাবতে হবে তারা কী করবেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর