মঙ্গলবার, ১২ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা
নদী বাঁচাও ৩১

মৃত্যুর পথে প্রমত্তা চিলাই

খায়রুল ইসলাম, গাজীপুর

মৃত্যুর পথে প্রমত্তা চিলাই

ভাওয়াল গড়ের চুইয়ে আসা পানির ধারা থেকে সৃষ্ট ও  বেলাই বিল বিধৌত গাজীপুরের গুরুত্বপূর্ণ একটি নদী চিলাই। শহরের উত্তর-পূর্ব দিক দিয়ে প্রবাহিত চিলাই নদী জেলার অন্যতম প্রধান একটি নদী। চিলাই একসময় আরও প্রশস্ত ও বিশালাকার নদী ছিল। জনশ্রুতি আছে, এ নদী পাড়ি দিতে চিল ক্লান্ত হয়ে পড়ত, যে কারণে এর নাম হয় চিলাই। গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার দক্ষিণ সীমান্তে গাজীপুর সদর উপজেলার ভাওয়াল গড় থেকে শুরু হওয়া নদীটি বিভিন্ন পথ অতিক্রম করে গাজীপুর সদরের পূবাইল এলাকায় বালু নদীতে গিয়ে মিশেছে। একটি ধারা ভাওয়াল গড়, চতরবাজার, বনখরিয়া, দেশীপাড়া, তিতাস ব্রিজ, মার্কাস ব্রিজ, কালা শিকদার ঘাট ও শ্মশানঘাট হয়ে হানকাটা ব্রিজ এলাকায় পতিত হয়েছে। আরেকটি ধারা রাজাবাড়ী বিল, পারুলী নদী ও বেলাই বিলের মাধ্যমে বিভিন্ন পথ অতিক্রম করে হানকাটা ব্রিজ এলাকায় আগের ধারার সঙ্গে মিলিত হয়ে দুটি ধারা গলাগলি করে বালু নদীতে গিয়ে মিশেছে। এ নদীকে স্থানীয়রা অনেকেই চিলাই খাল হিসেবে জানে। খাল বা নদী এ নিয়ে মতভেদ থাকলেও নদীটি যে গাজীপুরের হৃৎপি - এ নিয়ে কারও দ্বিমত নেই। সম্প্রতি এই নদীর বিভিন্ন অংশ পরিদর্শন করে দেখা গেছে, সময়ের সেই প্রমত্তা চিলাই নদী নেই। এটি এখন সরু খাল। দখল ও দূষণে এটি মৃত্যুর পথে ধেয়ে চলেছে। ২৩ কিলোমিটার দীর্ঘ এ নদী দখল করে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন স্থাপনা ও কারখানা। সীমানা নির্ধারিত না থাকায় দখল ও দূষণের গতি বাড়ছেই। নদী দখল করে গড়ে উঠেছে বড় বড় কারখানা, বহুতল ভবন। যেটুকু পানি আছে, তাও কালো দুর্গন্ধযুক্ত। এর মধ্যে নদীর পাড়েই রাস্তা নির্মাণ করছে গাজীপুর সিটি করপোরেশন। শহরের উত্তর পাশের অংশে নদী দখল চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। দখলদাররা নদীর গতিমুখ বদলে দেওয়ার চেষ্টা করছে। বনখরিয়া থেকে হানকাটা ব্রিজ পর্যন্ত নদীর দখলচিত্র চরম আকার ধারণ করেছে। এর সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন দখলদার। প্রতিনিয়ত যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন দখলদার। তিতাস ব্রিজ এলাকায় ভরাটের কারণে নদী একদম সরু  হয়ে গেছে। মার্কাস ব্রিজ এলাকায় নিজের জমি দাবি করে দখল করা হয়েছে চিলাই নদী। কালাশিকদার ঘাট এলাকার দখলের চিত্র একই রকম। এখানকার ব্রিজের গোরা দেখলে মনে হবে যেন এটি নদী নয়, ময়লার ভাগাড়। শ্মশানঘাট এলাকায়ও দখল দূষণের স্পষ্ট ছাপ রয়েছে। এ নদীর সঙ্গে সংযোগ রয়েছে গাজীপুরের বিখ্যাত বেলাই বিলের, যা দেশি মাছের জিন ব্যাংক হিসেবে পরিচিত। নদী মরে গেলে এ বিলও রক্ষা পাবে না। এরই মধ্যে বেলাই বিল দখল করে আবাসন প্রকল্প গড়ে উঠতে শুরু করেছে। তবে স্থানীয় প্রশাসন নদীটি রক্ষায় উদ্যোগী হয়েছে বলে জানা গেছে। নদী উদ্ধার ও খনন করে নদীকেন্দ্রিক পর্যটনকেন্দ্র গড়ে তোলার পরিকল্পনা চলছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক। এ ব্যাপারে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মজিবুর রহমান বলেন, মহানগরের পানি নিষ্কাশন ও বনায়নের লক্ষ্যে নদীটির তিতাস গ্যাস এলাকা থেকে শ্মশানঘাট এলাকা পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার ৬০ ফুট প্রশস্ত করে খনন করা হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে ওই এলাকার নদীর পাড়ের ওপর দিয়ে ওয়াকওয়ে ও সামাজিক বনায়নের মাধ্যমে সবুজ  বেষ্টনী গড়ে তোলা হবে। তাছাড়া নদীর দখলদারদেরও উচ্ছেদ করা হবে। গাজীপুরের জেলা প্রশাসক ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর বলেন, নদীটি দখল ও দূষণের হাত থেকে কীভাবে বাঁচানো যায় সেই চেষ্টা করা হচ্ছে। নদীটি খননের পূর্বে সীমানা নির্ধারণ করা হবে ও অবৈধ স্থাপনা এবং দখলদার উচ্ছেদ করা হবে। নদীটিকে আগের অবস্থায় ফেরাতে এরই মধ্যে বেশকিছু কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে দখল-দূষণ বন্ধ করা হবে। যারা দূষণের জন্য দায়ী থাকবে তাদের বিরুদ্ধেও পরিবেশ অধিদফতরের মাধ্যমে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এরই মধ্যে কিছু জায়গা উদ্ধার করা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর