শিরোনাম
বুধবার, ১৩ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা
নদী বাঁচাও ৩২

হারিয়ে যাচ্ছে ধলেশ্বরী

মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি

হারিয়ে যাচ্ছে ধলেশ্বরী

মুন্সীগঞ্জ শহরঘেঁষা ধলেশ্বরী নদীর স্বচ্ছ টলটলে পানি এখন দূষিত হয়ে পড়েছে। শহরের উপকণ্ঠ চরমুক্তারপুরে বিভিন্ন টেক্সটাইল মিলের কেমিক্যাল মিশ্রিত তরল বর্জ্য সরাসরি নদীতে ফেলায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। অন্যদিকে মুন্সীগঞ্জ পৌরসভার বিভিন্ন পয়েন্টের ড্রেনের ময়লা পানি সরাসরি নদীতে গিয়ে পড়ছে। এতে টলটলে পানি তার রূপ হারাচ্ছে। মুক্তারপুর ও চরমুক্তারপুরে সিমেন্ট ফ্যাক্টরির অ্যাশ, ডাইং ও প্রিন্টিংসহ অংসখ্য শিল্প প্রতিষ্ঠানের বিষাক্ত বর্জ্যে দূষিত হয়ে পড়েছে ধলেশ্বরী নদী ও আশপাশের শাখা নদীর পানি। এর সঙ্গে জোয়ার-ভাটায় যুক্ত হয়েছে একদিকে বুড়িগঙ্গা, অন্যদিকে শীতলক্ষ্যা নদীর বিষাক্ত পানি। ফলে ইতিমধ্যেই ধলেশ্বরী নদীর পানি দূষিত হয়ে নিকষ কালো রং ধারণ করেছে। এ অবস্থায় ঢাকার বুড়িগঙ্গা এবং নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীর পর এবার মুন্সীগঞ্জের ধলেশ্বরী নদী বিপন্ন হতে চলেছে। মুন্সীগঞ্জের মিরকাদিম নদীবন্দর ঘাট থেকে শুরু করে শহরের কাছে চরকিশোরগঞ্জ এলাকা পর্যন্ত দীর্ঘ দুই কিলোমিটার এলাকায় পানি পচে গিয়ে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে প্রাকৃতিক পরিবেশ দূষিত করে তুলেছে। শহরের উপকণ্ঠ মুক্তারপুর এলাকায় ধলেশ্বরী নদীর দুই পাড় ঘেঁষে গড়ে ওঠা একাধিক টেক্সটাইল ও ডাইং মিলের নির্গমনকৃত বিষাক্ত বর্জ্য গিয়ে পড়ছে ধলেশ্বরীর বুকে। এভাবেই কারখানার বর্জ্য ও সিমেন্টের অ্যাশ ধলেশ্বরীকে বিপন্ন করে তুলেছে। এদিকে শহরের উত্তর ইসলামপুর ও চরকিশোরগঞ্জ এলাকার ধলেশ্বরীর শাখা নদী কালীদাস সাগরের পানি থেকে দুর্গন্ধ বের হচ্ছে। আগের মতো মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। তাই অলস সময় পার করছেন এ এলাকার জেলে সম্প্রদায়ের লোকজন। পশ্চিম মুক্তারপুর এলাকা ঘুরে আরও দেখা গেছে, শহরের উপকণ্ঠ মুক্তারপুর এলাকায় গড়ে ওঠা টেক্সটাইল, ডাইং মিল ও সিমেন্ট তৈরির ফ্যাক্টরিগুলোর বিষাক্ত বর্জ্য নির্গমনের পরিবেশবান্ধব কোনো ব্যবস্থা নেই। ফ্যাক্টরিগুলোতে বর্জ্য পরিশোধিত ট্রিটমেন্ট প্লান্ট না থাকায় সরাসরি ওই বিষাক্ত বর্জ্য ফেলা হচ্ছে নদীতে। এ ছাড়া সিমেন্ট ফ্যাক্টরিগুলোর অ্যাশ উড়ে সরাসরি নদীতে গিয়ে পড়ছে। সিমেন্ট ফ্যাক্টরিতে খোলামেলাভাবে ক্লিঙ্কার ও অ্যাশ জাহাজে লোড-আনলোড করা হচ্ছে। এ ছাড়া সিমেন্টের অ্যাশ উড়ে এসে শহরঘেঁষা ধলেশ্বরীর তীরবর্তী হাটলক্ষ্মীগঞ্জ, নয়াগাঁও, মিরেশ্বরাই, মুক্তারপুর, চরমুক্তারপুরসহ আশপাশ এলাকার পরিবেশ দূষণ করে চলেছে। অন্যদিকে ধলেশ্বরী নদীর তীরে গড়ে ওঠা ফ্যাক্টরিগুলো তীর দখল করে নিচ্ছে। স্থাপিত একাধিক ফ্যাক্টরি নদী দখল করে নেওয়ায় ধলেশ্বরী এখন সরু খালে পরিণত হয়েছে। দক্ষিণ বঙ্গের ছোট-বড় লঞ্চসহ বিভিন্ন নৌযান রাতে ঝুঁকি নিয়ে চলছে। গোসল করার ক্ষেত্রেও সৃষ্টি হচ্ছে সমস্যা। নদীতে মাছ না থাকায় এখন আর আসছেন না জেলেরা। এ ব্যাপারে নদী বাঁচাও কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট মজিবুর রহমান বলেন, নৌ-পরিবহনমন্ত্রীর সভাপতিত্বে একটি টাস্কফোর্স রয়েছে। সেখানে ধলেশ্বরী নদীর বর্তমান চিত্র উত্থাপন করা হয়েছে। শুধু যে সিমেন্ট ফ্যাক্টরির কারণে ধলেশ্বরীর পানি নষ্ট হচ্ছে তা নয়, বুড়িগঙ্গা নদীর পানিও দূষিত হচ্ছে। তিনি বলেন, নদীতে যে ভেসেলগুলো চলে, সেখানেও তারা নষ্ট তেল, মবিল ও বর্জ্য ফেলে নদীর পরিবেশ নষ্ট করছে। এসব বিষয়ে সবাইকে সচেতন হতে হবে। নদীকে কীভাবে বাঁচানো যায় সেদিকে সবাইকে দৃষ্টি রাখতে হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর