বুধবার, ১৩ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা

এক চুলা ১৩৫০ দুই চুলা ১৪৪০ টাকার প্রস্তাব তিতাসের

নিজস্ব প্রতিবেদক

তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ আবাসিকে এক চুলার গ্যাসের দাম ৭৫০ থেকে বৃদ্ধি করে ১ হাজার ৩৫০ এবং দুই চুলার জন্য ৮০০ থেকে ১ হাজার ৪৪০ টাকা করার প্রস্তাব করেছে।

গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে টিসিবি মিলনায়তনে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) আয়োজিত গ্যাসের দাম বৃদ্ধির ওপর গণশুনানিতে তিতাস কর্তৃপক্ষ এই প্রস্তাব দেয়। শুনানিতে ব্যবসায়ীরা গ্যাসের দাম বৃদ্ধির জন্য যৌক্তিক পূর্বাভাস দেওয়ারও দাবি জানিয়েছেন। তাদের মতে, কিছুদিন পরপর জ্বালানির দাম বৃদ্ধি বিনিয়োগকে নিরুৎসাহিত করে। এতে দেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের মুখ থুবড়ে পড়বে। গণশুনানিতে উপস্থিত ছিলেন বিইআরসি’র চেয়ারম্যান মনোয়ার ইসলাম, সদস্য মিজানুর রহমান, মাহমদুল হক ভূইয়া, রহমান মুর্শেদ ও আবদুল আজিজ খান। শুনানিতে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি প্রতি বিদ্যুতে ঘনমিটার গ্যাসের দাম ৩ দশমিক ১৬ টাকা থেকে বৃদ্ধি করে ৯ দশমিক ৭৪ টাকা, সিএনজিতে ৩২ টাকা থেকে ৪৮ দশমিক ১০ টাকা, প্রিপ্রেইড মিটারে ৯ দশমিক ১০ (প্রতি ঘনমিটার) টাকা থেকে ১৬ দশমিক ৪১ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। সার উৎপাদনে প্রতি ঘনমিটার ২ দশমিক ৭১ টাকা থেকে ৮ দশমিক ৪৪ টাকা, ক্যাপটিভ পাওয়ারে ৯ দশমিক ৬২ টাকা থেকে ১৮ দশমিক শূন্য চার টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। শিল্পে ৭ দশমিক ৭৬ টাকা থেকে বৃদ্ধি করে ২৪ দশমিক শূন্য পাঁচ টাকা। আর বাণিজ্যিকে ১৭ দশমিক শূন্য চার টাকার বদলে ২৪ দশমিক শূন্য পাঁচ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। একই সঙ্গে বিতরণ চার্জ বৃদ্ধির জন্যও প্রস্তাব দিয়েছে তিতাস গ্যাস। অনুষ্ঠানে এফবিসিসিআইর সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন গ্যাসের দাম না বাড়ানোর আবেদন জানিয়ে বলেন, শুধু গ্যাসের দাম বাড়ানোর সময় আমাদের ডাকা হবে। অথচ বিশ্ববাজারে দাম কমলেও কমানোর কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয় না, এটি ঠিক নয়। ২০১৯ সালে বিশ্বে গড় গ্যাসের দাম ছিল ৬ দশমিক ৯ ডলার। গত কয়েক বছরে মজুরি ও অন্যান্য ব্যয় বৃদ্ধির সঙ্গে আমাদের ২৯ ভাগ ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে। এখন আবার গ্যাসের দাম বৃদ্ধি পেলে উদ্যোক্তারা দেউলিয়া হয়ে যাবে। বিজিএমইএর সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, এখন এই দাম বৃদ্ধি কার স্বার্থে করা হচ্ছে? তিতাসের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনারা ৩৫ ভাগ লভ্যাংশ দিতে চাচ্ছেন কিন্তু আমরা তো দুই-তিন ভাগও ব্যবসা করতে পারছি না।

 তিনি গণশুনানিকে হাস্যকর আখ্যা দেন। বিটিএমএ’র সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন বলেন, এখন আবার গ্যাসের দাম বৃদ্ধি পেলে শিল্প প্রতিষ্ঠানের চাবি বিইআরসির কাছে দিয়ে যাওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না। তবে চলতি অর্থবছর সমাপ্তির পর প্রকৃত তথ্যের ভিত্তিতে তিতাসের বিতরণ চার্জ বৃদ্ধি করা যৌক্তিক হবে জানিয়েছে বিইআরসির মূল্যায়ন কমিটি। শুনানিতে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ শামসুল আলম বলেন, আগামী এপ্রিলে এলএনজি আসতে পারবে না। এই বিষয়টি সরকারের সঙ্গে বিইআরসিও বোঝে। কিন্তু তারপরেও যে গ্যাস আসেইনি, সে গ্যাসের ওপর ভিত্তি করে দাম বৃদ্ধি অযৌক্তিক ও অন্যায়। জ্বালানি নিরাপত্তা তহবিলে সাত হাজার ৫০০ কোটি টাকা পড়ে রয়েছে। সরকার যতদিন অর্থ না দেয় ততদিন সে তহবিল থেকে ঋণ দিয়ে এলএনজির ব্যয় নির্বাহের আহ্বান জানান তিনি। একই সঙ্গে গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির প্রস্তাবটি বাতিলের দাবি জানান তিনি।

সর্বশেষ খবর