বুধবার, ১৩ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা

দেশি-বিদেশি দেড় শতাধিক সিন্ডিকেট

মুহাম্মদ সেলিম, চট্টগ্রাম

দেশি-বিদেশি দেড় শতাধিক সিন্ডিকেট

দেশের সোনা চোরাচালান নিয়ন্ত্রণ করছে দেশি-বিদেশি দেড় শতাধিক শক্তিশালী সিন্ডিকেট। এ সিন্ডিকেটে বাংলাদেশি ছাড়াও রয়েছে পাকিস্তান, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ভারত, নেপাল, মিয়ানমারসহ বিভিন্ন দেশের নাগরিক। মাঝেমধ্যে দু-একটি চালানে বাহক গ্রেফতার হলেও সিন্ডিকেটের হোতারা থাকেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। এমনকি পুলিশ তদন্তে তাদের টিকিটিও ছুঁতে পারে না। চট্টগ্রাম মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের বন্দর জোনের উপকমিশনার এস এম মোস্তাইন হোসেন বলেন, ‘অনেকের বিরুদ্ধে অভিযোগ আসে আমাদের কাছে। কিন্তু কোনো তথ্য-প্রমাণ নেই। তাই অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও আমরা চাইলেও কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারি না।’ নাম প্রকাশ না করার শর্তে সিএমপির এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘সোনা চোরাচালানের সিন্ডিকেটগুলোর হোতাদের গ্রেফতার করতে গেলে অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তি বাধা হয়ে দাঁড়ায়। এমনকি গ্রেফতার করতে যাওয়া পুলিশ সদস্যকে উল্টো বেকায়দায় পড়তে হয়। তাই পুলিশ সদস্যরা সোনা চোরাচালানের হোতাদের গ্রেফতার করতে চান না।’ অনুসন্ধানে জানা যায়, বাংলাদেশে সোনা চোরাচালানে জড়িত রয়েছে দেড় শতাধিক সিন্ডিকেট। এর মধ্যে দেশে সক্রিয় রয়েছে শতাধিক। দেশীয় সিন্ডিকেটগুলোর মধ্যে ২৫টির মতো মানি এক্সচেঞ্জ ও ট্রাভেল এজেন্সি রয়েছে। দেশি সিন্ডিকেট ছাড়াও সংযুক্ত আরব আমিরাত, ওমান, সৌদি আরব, পাকিস্তান, কাতার, কুয়েত, মালয়েশিয়া, ভারত, নেপাল, মিয়ানমার ও সিঙ্গাপুরকেন্দ্রিক বেশ কিছু সিন্ডিকেট সক্রিয় রয়েছে বাংলাদেশে সোনা চোরাচালানে। এরই মধ্যে বিভিন্ন সময় গ্রেফতার হওয়া সোনা চোরাচালানকারীদের গ্রেফতারের পর বেশ কিছু সিন্ডিকেট ও হোতার নাম পেয়েছে প্রশাসন। এই সিন্ডিকেট ও হোতাদের অন্যতম হচ্ছে সংযুক্ত আরব আমিরাতভিত্তিক পিয়াস আল মারহাবি, রামাতুল ফারাজি, হাম্মাম আল হাবিব, রসুল আমিন জুব্বা, সিঙ্গাপুরের এনডি ও স্টিফেন সিন্ডিকেট, পাকিস্তানের আবদুর রহিম জিন্নাহ, আসিফ মোর্শেদি, আজমল হেলাল, গিয়াস হাজারি, নেপালের গৌরাঙ্গ রোশান, ভারতের বিজন হালদার, কৃষ্ণকুমার দাস, রাতুল বাবু, শ্যামল সাহা, আসিফ আহমেদ, সুরেশ, অজিত ও গোবিন্দ। পুরো বাংলাদেশে বিচরণ রয়েছে এমন সিন্ডিকেটগুলোর মধ্যে রয়েছে আবু আহমেদ, মতিয়ার রহমান খলিল, নিজাম, রেজাউল, রবিউল, রেজাউল করিম, মোহাম্মদ আলী, মাসুদ করিম, মিন্টু, হামীম, নাছির, গোল্ডেন মনির, দেলোয়ার ও এমরান হোসেন। সোনা চোরাচালানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র বলেন, বেশির ভাগ সোনা চোরাচালান সিন্ডিকেট তিনটি গ্রুপে সমন্বিত হয়ে কার্যক্রম চালিয়ে থাকে। প্রথম গ্রুপ মধ্যপ্রাচ্য থেকে বিমানে করে সোনার চালান বাংলাদেশে পাঠায়। বিমানবন্দর থেকে চালান গ্রহণ করে দেশীয় সিন্ডিকেট। চালান দেশে আসার পর বৃহৎ একটি অংশ চলে যায় ভারতে। এ ক্ষেত্রে তৃতীয় গ্রুপটি ভারতে সোনার চালান পৌঁছে দেওয়ার কাজ করে। অনেক ক্ষেত্রে সোনা চোরাচালানের বড় সিন্ডিকেটগুলো মধ্যপ্রাচ্য থেকে বাংলাদেশ হয়ে ভারতে পৌঁছানো পর্যন্ত সব কাজ নিজেদের সিন্ডিকেট সদস্যদের দিয়েই করায়।

সর্বশেষ খবর