বুধবার, ১৩ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা
তৃণমূলে স্বাস্থ্যসেবা

নামেই ৫০ শয্যা জনবল নেই ৩১ শয্যারও

শ্রীমঙ্গল স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

দীপংকর ভট্টাচার্য লিটন, শ্রীমঙ্গল

খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। ২০১২ সালে ৩১ শয্যার জনবল দিয়ে এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৫০ শয্যায় কার্যক্রম চালু হয়। কিন্তু দীর্ঘ ছয় বছরেও ৫০ শয্যার জনবলের নতুন পদ সৃষ্টি করা হয়নি। বর্তমানে কেবল নামেই ৫০ শয্যা, বাস্তবে ৩১ শয্যার জনবলও এখানে নেই। এছাড়া উপজেলার ৯ ইউনিয়নের ৬ টি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে সহকারী সার্জনের পদ শূন্য রয়েছে। ১টি ইউনিয়নের উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে মেডিকেল অফিসার নিয়োগ থাকলেও তাকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এনে ইমার্জেন্সি ডিউটি করানো হচ্ছে। এতে করে এ উপজেলা শুধু স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেই নয়, তৃণমূলে স্বাস্থ্যসেবাও ব্যাহত হচ্ছে। সরেজমিন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দেখা যায়, এখানে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরঞ্জাম নেই। বিশেষজ্ঞ না থাকায় অকেজো হয়ে আছে আল্ট্রাসনোগ্রাফি মেশিনটি। জনবল সংকটের কারণে প্যাথলজি টেষ্টও সঠিকভাবে হচ্ছে না। এক্স-রে ও ইসিজি মেশিন দীর্ঘদিন ধরে নষ্ট। ইনডোর, আউটডোর ও জরুরি বিভাগে ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারী সংকট থাকায় দুর্গন্ধে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের সৃষ্টি হয়ে আছে। মুমুর্ষু রোগীদের আনা নেওয়ার জন্য নেই পর্যাপ্ত ট্রলি। সংকট রয়েছে ব্লাড প্রেসার মেশিনের। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নেই ডিজিটাল এক্স-রে মেশিন, এনালাইজার মেশিন, ইনকিউবেটর, মাইক্রোস্কোপ, অটোক্লেব মেশিন। জেনারেটরটি আট মাস ধরে বিকল। বিদ্যুৎ চলে গেলে প্রসূতি মায়েদের অস্ত্রোপচার (সিজার) করার সময় সোলারের আলোই ভরসা। আর ব্লাড ব্যাংক না থাকায় অস্ত্রোপচারের সময় রক্ত আনতে হয় বাহির থেকে। জরুরি মেডিসিন ও ইকুইপমেন্ট প্রয়োজনের তুলনায় একেবারেই অপ্রতুল। ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে আছে রোগিদের বিছানা, চাদর ও পর্দা। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কোনো নিরাপত্তার ব্যবস্থা না থাকায় চোরের উপদ্রব নিত্যদিনের। ডিজিটাল যুগে এসেও মান্ধাতা আমলের আসবাবপত্র দিয়েই চলছে চিকিৎসা সেবা। এসব কারণে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে চিকিৎসা নিতে আসা রোগিদের। জানা যায়, এখানে ৩১ শয্যার জন্য ১১ জন ডাক্তার থাকার কথা। কিন্তু আছেন ৭ জন । ৪টি পদ শূন্য রয়েছে। এর মধ্যে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ব্যস্ত থাকেন প্রশাসনিক কাজ নিয়ে। সার্জারি জুনিয়র কনসালট্যান্ট ও ডেন্টাল ডাক্তার না থাকায় এ দুটি বিভাগে সেবা পাচ্ছে না রোগিরা। জুনিয়র কনসালট্যান্ট (এনেসথেসিয়া) ডা. এম সাজ্জাদ হোসেন চৌধুরী  ও মেডিকেল অফিসার ডা. রোকসানা পারভীন যে রাতে ইমারজেন্সি ডিউটি করেন তার পরের দিন আর প্রসূতি মায়েদের সিজার করতে পারেন না। আর আবাসিক মেডিকেল অফিসারের দায়িত্ব পালন করছেন জুনিয়র কনসালট্যান্ট (মেডিসিন) ডা. মোহাম্মদ মহসীন। একই সঙ্গে তিনি করছেন ইমারজেন্সি ডিউটি ও মেডিসিন বিভাগ। মেডিক্যাল অফিসার প্রেষণে ঢাকায় আছেন। তিনি সাপ্তাহে এক দিন এসে রোগি দেখেন। ভারপ্রাপ্ত আবাসিক মেডিকেল অফিসার ও জুনিয়র কনসালট্যান্ট (মেডিসিন) ডা. মোহাম্মদ মহসীন বলেন, ‘আমি একাই তিনটি দায়িত্ব পালন করছি।  এভাবে কোনো হাসপাতাল চলতে পারে না। এখানে সব ক্ষেত্রে সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। তাই পর্যাপ্ত জনবল ও প্রয়োজনীয় সব যন্ত্রপাতি সরবরাহ করতে হবে। তাহলে রোগিদের কাক্সিক্ষত সেবা দিতে পারবো।’ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. শাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘এক মাস হলো যোগদান করেছি। এক সপ্তাহের মাথায় ডাক্তার চেয়ে সিভিল সার্জন অফিসে চিঠি পাঠিয়েছি। সম্প্রতি শ্রীমঙ্গল সফরে এলে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ও স্থানীয় সংসদ সদস্যকে বিষয়টি অবহিত করেছি। মৌখিকভাবে আশ্বাস দেওয়া হয়। কিন্তু কোনো ডাক্তার নিয়োগ হচ্ছে না।’

সর্বশেষ খবর