শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ১৪ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা

নৌকার চ্যালেঞ্জ বিদ্রোহীরা

দ্বিতীয় ধাপের ভোট ১৮ মার্চ, ১২২ উপজেলায় বিদ্রোহী প্রার্থী ১২৭

রফিকুল ইসলাম রনি

দ্বিতীয় ধাপের উপজেলা নির্বাচন আগামী ১৮ মার্চ। প্রথম ধাপের মতোই আওয়ামী লীগের নৌকার প্রার্থীদের চ্যালেঞ্জ নিজ দলের বিদ্রোহীরা। দলীয়ভাবে বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করায় ১৬ জেলার ১২২ উপজেলায় নিজ দলের বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন ১২৭ জন। কেন্দ্রীয়ভাবে বিদ্রোহী প্রার্থীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় বিদ্রোহী প্রার্থীর সংখ্যা বেড়েছে দ্বিতীয় ধাপে। ফলে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে আওয়ামী লীগ বনাম আওয়ামী লীগে। মাঠপর্যায়ে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রার্থী মনোনয়নে ভুল, এমপি-মন্ত্রীদের পছন্দের প্রার্থীদের প্রাধান্য দেওয়ায় উপজেলায় আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীর সংখ্যা বেশি। আবার কিছু উপজেলায় এমপির পছন্দের প্রার্থী দলীয় মনোনয়ন না পাওয়ায় তারা বিদ্রোহীদের দাঁড় করিয়েছেন। যে কারণে অনেক উপজেলায় দলীয় প্রার্থীর জন্য চ্যালেঞ্জ  হয়ে দাঁড়িয়েছেন নিজ দলের বিদ্রোহী প্রার্থীরা।

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী ফোরামের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলা নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণ না থাকায় দলীয় বিদ্রোহীদের ব্যাপারে নমনীয় দলের হাইকমান্ড। নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক ও উৎসবমুখর করতে এ উদ্যোগ নিয়েছে দলটি। আওয়ামী লীগ নেতারা বলেছেন, ‘বিভিন্ন উপজেলায় যদি আমরা বিদ্রোহীদের বিষয়ে কঠোর অবস্থান নিতে যাই, তাহলে সেখানেও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দলের প্রার্থীরা জয়লাভ করবেন। এ ধরনের নির্বাচন আমরা চাই না। তাই নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক করতে দলের বিদ্রোহীদের বিষয়ে কোনো ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হবে না।’ এদিকে দলের এ ধরনের মনোভাবের কারণে বেশিরভাগ উপজেলায় এখন ভোটযুদ্ধ হতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ বনাম আওয়ামী লীগের মধ্যে। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান বলেন, ‘আমরা অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চাই। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির ভরাডুবির পর তারা (বিএনপি) উপজেলায় অংশগ্রহণ করছে না। সে কারণে আমরা দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের ব্যাপারে আগের অবস্থান থেকে কিছুটা নমনীয়। স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দেওয়ার মাধ্যমে স্থানীয় জনগণ তাদের পছন্দের প্রার্থীকে বিজয়ী করবেন। যিনি গ্রহণযোগ্য তাকেই তারা বেছে নেবেন।’

জানা গেছে, দ্বিতীয় ধাপে অনুষ্ঠেয় বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী রেজাউল আশরাফ জিন্না। তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে লড়ছেন একই দলের আজিজার রহমান। কাহালু উপজেলায় আবদুল মান্নানের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী হয়ে লড়ছেন মোশফেকুর রহমান কাজল ও আল হাসিবুল হাসান সুরুজ। ধুনট উপজেলায় আবদুল হাই খোকনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী হয়ে লড়ছেন মাসুদুল হক বাচ্চু। দুপচাঁচিয়া উপজেলায় মিজানুর রহমান খান সেলিমের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী হয়ে লড়ছেন ফজলুল হক। সারিয়াকান্দি উপজেলায় মুনজিল আলী সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে লড়ছেন একই দলের শাজাহান আলী ও আবদুস সামাদ।

সিলেটের সদর উপজেলায় আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান আশফাক আহমদ। বিদ্রোহী হয়েছেন অ্যাডভোকেট নুরে আলম সিরাজী। কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার প্রতিদ্বন্দ্বী ৯ প্রার্থীর ছয়জনই আওয়ামী লীগের। কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম। বিদ্রোহী হয়েছেন বর্তমান চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল বাছিত, সাধারণ সম্পাদক আফতাব আলী কালা মিয়া, আওয়ামী লীগ নেতা ইয়াকুব আলী, ইসলামপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি শামীম আহমদ। গোয়াইনঘাটে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী গোলাম কিবরিয়া হেলাল। বিদ্রোহী হয়েছেন যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা গোলাপ মিয়া, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ফারুক আহমদ। বিয়ানীবাজার উপজেলায় নৌকার প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান। বিদ্রোহী হয়ে মাঠে আছেন উপজেলা সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ জাকির হোসেন, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আবুল কাশেম পলব। কানাইঘাটে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন সিলেট মহানগর কৃষক লীগের সভাপতি আবদুল মোমিন চৌধুরী। বিদ্রোহী প্রার্থী জেলার উপপ্রচার সম্পাদক মোস্তাক আহমদ পলাশ, সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতা আবুল খায়ের চৌধুরী। ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা, সাংবাদিক শাহ মুজিবুর রহমান নৌকা প্রতীক নিয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন। তবে দলের বিদ্রোহী সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা নূরুল ইসলাম নির্বাচন করছেন। দক্ষিণ সুরমায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবু জাহিদ। এখানে বিদ্রোহী প্রার্থী মইনুল ইসলাম।

ফরিদপুরের সদরপুরে আওয়ামী লীগের প্রার্থী এইচ এম শায়েদীদ গামাল লিপু। এখানে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন উপজেলা সভাপতি কাজী শফিকুর রহমান। নগরকান্দায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী মনিরুজ্জামান সরদার। এখানে বিদ্রোহী প্রার্থী আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক উপ-সম্পাদক কাজী শাহজামান বাবুল। সালথায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী দেলোয়ার হোসেন। এখানে দলের বিদ্রোহী প্রার্থী ওয়াদুদ মাতব্বর।

সর্বশেষ খবর