বুধবার, ২০ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা
আইনজীবীদের খালেদা জিয়া

চার বছরেও কেন অব্যাহতির আবেদন করা হয়নি

নিজস্ব প্রতিবেদক

নাইকো দুর্নীতি মামলায় অভিযোগ গঠনের শুনানি চলাকালে চার বছরেও কেন অব্যাহতি চেয়ে আবেদন করা হয়নি, তা নিজের আইনজীবীদের কাছে জানতে চেয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। গতকাল রাজধানীর পুরাতন কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থাপিত অস্থায়ী এজলাসে এ মামলার শুনানি শেষে আইনজীবীদের এমন প্রশ্ন করেন তিনি। এ সময় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আইনজীবীদের উদ্দেশে বলেন, কী যে করেন আইনজীবীরা। এত দিন হলো, এখনো অব্যাহতির আবেদন দিতে পারেননি। এর আগে এ মামলার অভিযোগ গঠনের পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী ১ এপ্রিল দিন ঠিক করেছেন ঢাকার ৯ নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক শেখ হাফিজুর রহমান। আদালতে খালেদা জিয়াকে হুইল চেয়ারে হাজির করা হয়। শুনানি শেষে বেলা ১টার দিকে আবারও কারাগারে নেওয়া হয় তাঁকে। নাইকো মামলার অভিযোগপত্রে প্রায় ১৩ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকার রাষ্ট্রীয় ক্ষতির অভিযোগ আনা হয়। শুরুতেই রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল আদালতে বলেন, ‘মামলার চার্জ শুনানির জন্য দিন ধার্য আছে। এ মামলার সব আসামির চার্জ শুনানি শেষ হয়েছে। শুধু একজনের বাকি আছে (খালেদা জিয়ার)। আজ শুরু করলে মামলার কার্যক্রম এগিয়ে যায়।’ এ সময় খালেদা জিয়ার আইনজীবী মাসুদ আহমেদ তালুকদার বলেন, ‘আদালতের কাছে দুটি দরখাস্ত দেওয়া হয়েছে। একটি হচ্ছে আজকের মতো মামলা মুলতবির, অন্যটি মামলার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সরবরাহ করার জন্য। কাগজপত্রের জন্য সংশ্লিষ্ট আদালতে যোগাযোগ করলে এখনো তা পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে আদালত আপনি দেখবেন। কাগজপত্র ছাড়া এ মামলার শুনানি করা যায় না।’

এরপর মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, ‘২৪১ ধারায় চার্জ শুনানির জন্য যেসব কাগজ দেওয়ার কথা ছিল সেগুলো দেওয়া হয়েছে। ১২ বছর ধরে মামলাটি চলছে। এ মামলার জন্য আপনারা (আইনজীবীরা) হাই কোর্ট, সুপ্রিম কোর্ট গিয়েছেন। কিছু কিছু মামলা কাগজ ছাড়াও শুনানি করা যায়। আমার মনে হচ্ছে বিলম্ব করার জন্য এসব করা হচ্ছে।’ এ সময় বিচারক বলেন, ‘চার বছর ধরে মামলাটির চার্জ গঠনের শুনানি চলছে। আপনারা তো এর আগে বেগম জিয়ার পক্ষে অব্যাহতি চেয়ে কোনো আবেদন দেননি। আমি তো দেশের সর্বোচ্চ কোর্ট নই। এর আগে তো নিষ্পত্তির আদেশ দিয়েছি। আপনারা চার্জ শুনানি করতে পারেন।’ এরপর খালেদা জিয়ার আরেক আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী আদালতে ২৪১ ধারায় চার্জ শুনানির বিষয়ে আইনি ব্যাখ্যা দেন। শুনানিতে তিনি বলেন, ‘প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ছাড়া চার্জ শুনানি করা যায়। মামলাটি গ্রাউন্ডলেস, গোঁজামিলভাবে দায়ের করা হয়েছে। এজন্য ওইসব কাগজ শুনানির জন্য লাগবে।’ উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আদালত সময়ের আবেদন মঞ্জুর করে। আর মামলার অন্যান্য কপির আবেদন নামঞ্জুর করে পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী ১ এপ্রিল দিন ঠিক করে।

জামিন স্থগিত চেয়ে আপিল : কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম থানায় দায়ের করা হত্যা মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে হাই কোর্টের দেওয়া জামিন স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। গতকাল আবেদনের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ড. মো. বশির উল্লাহ। তিনি জানান, কুমিল্লায় গাড়িতে আগুন দিয়ে মানুষ পোড়ানোর ঘটনায় দায়ের করা হত্যা মামলায় হাই কোর্টের দেওয়া জামিন স্থগিত চেয়ে আবেদন করা হয়েছে। আগামী ২৫ মার্চ এ বিষয়ে চেম্বার আদালতে শুনানি হতে পারে বলে তিনি জানান। এর আগে ৬ মার্চ এ মামলায় খালেদা জিয়াকে ছয় মাসের জামিন দেয় বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি এস এম মুজিবুর রহমানের হাই কোর্ট বেঞ্চ।

বিএনপি-জামায়াতের ডাকা অবরোধ চলাকালে ২০১৫ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের জগমোহনপুরে ঢাকাগামী আইকন পরিবহনের একটি বাসে পেট্রলবোমা নিক্ষেপ করে দুর্বৃত্তরা। এতে আট যাত্রী পুড়ে মারা যান। আহত হন আরও ২০ জন। এ ঘটনায় দায়ের করা হত্যা মামলায় খালেদা জিয়াকে হুকুমের আসামি দেখানো হয়েছে।

সর্বশেষ খবর