বৃহস্পতিবার, ২১ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা

অনলাইন বাজারের অফলাইন মোবাইল

মির্জা মেহেদী তমাল

অনলাইন বাজারের অফলাইন মোবাইল

আশিকুর রহমান। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লেখাপড়া শেষ করে সবেমাত্র চাকরিতে ঢুকেছেন। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরি। তাও সেটি পেতে কম কষ্ট করতে হয়নি তাকে। আশিক ভাবছিলেন, নতুন চাকরিতে ঢুকেছেন। হাতের মোবাইল ফোনটি অনেক পুরানা হয়ে গেছে। নিজের কাছেই দেখতে খারাপ লাগে। লোকসমাজে এমন রং উঠে যাওয়া মোবাইল বের করতে মন চায় না তার। এবার একটি নতুন মোবাইল ফোন কিনতে হবে। তার অনেক দিনের ইচ্ছা,ভালো একটি স্মার্ট ফোন কিনবে। কিন্তু অত টাকা পাবে কোথায় আশিকুর! এমন ভাবতে ভাবতে তার হঠাৎ মনে পড়ল অনলাইনে বিভিন্ন মোবাইল ফোন বিক্রির খবর থাকে। সেখানে পুরনো মোবাইল ফোনের বিজ্ঞাপনও তার চোখে পড়েছিল। এমন চিন্তা মাথায় আসতেই পত্রিকা ঘাঁটতে শুরু করে আশিকুর। কিন্তু পেল না। এবার বিক্রয় ডটকমে দেখতে শুরু করেন তিনি। হ্যাঁ পেয়ে গেলেন। তার সাধ্যের মধ্যেই বাজেট। নম্বর নিয়ে ফোন দিল আশিকুর। ওপর প্রান্ত থেকে এক ব্যক্তি মোবাইল ফোনের আদ্যপান্ত বলল। দুজনের কথাবার্তা এগিয়ে যায়। এক পর্যায়ে আশিকুর ফোনটি কেনার সিদ্ধান্ত নেয়। ফোনের মালিক আদাবরে আসতে বলেন আশিকুরকে। আশিকুর নির্ধারিত দিনে আদাবরে যেয়ে মোবাইল মালিকের কাছ থেকে সেটটি কিনে নেন। মোবাইল ফোনটি তাকে ভালোই সার্ভিস দেয়। দিন পনেরো পরে একদিন রাতে আশিকুর রহমানের বাসায় পুলিশ আসে। দরজা খুলে দিলে পুলিশ ঘরের ভিতর ঢুকে পড়ে। মোবাইল ছিনতাইয়ের অভিযোগে তাকে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। আশিকুর যতই পুলিশকে বোঝানোর চেষ্টা করেন, পুলিশ কোনো কিছুই বেুঝতে চাচ্ছে না। পুলিশ তাকে জানায়, অভিযোগের ভিত্তিতে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। থানায় নিয়ে যাওয়া হয় আশিকুরকে। পরদিন রাত পর্যন্ত থানায় আটকে রাখা হয় আশিকুরকে। কিন্তু এ খবর পৌঁছে যায় আশিকুরের অফিসে। নতুন চাকরি তার থাকে না। আশিকুর পুলিশকে তার মোবাইল ফোন কেনার পুরো ঘটনাটি জানায়। কিন্তু পুলিশ তাদের অপারগতা প্রকাশ করে। যেহেতু অভিযোগ রয়েছে মোবাইলের বিষয়ে, সেহেতু এ বিষয়ে তাদের কিছু করার নেই। পুলিশ তাকে জানায়, ফোনটি ছিনতাই হয়েছিলা যার ফোন, তিনি থানায় এসে অভিযোগ করেছে। ফোনের ইএমআই নম্বরের সূত্র ধরে মোবাইল ফোনের অবস্থান জানতে পারে তারা। চোরাই মোবাইলটি যার কাছে পাওয়া যাবে, তাকেই অভিযুক্ত করা হয়ে থাকে। সে ক্ষেত্রে আশিকুরের ব্যাপারে পুলিশ বুঝতে পারায় পুলিশ তাকে আটক করেনি। অনলাইনে বিজ্ঞাপন দিয়ে চোরাই মোবাইল ফোন বিক্রির ঘটনা ঘটছে। একটি চক্র চোরাই এসব মোবাইল হ্যান্ডসেট বিক্রির জন্য অনলাইল মার্কেটপ্লেস বিক্রয় ডটকমে বিজ্ঞাপন দিচ্ছে। চোরাই মোবাইল কিনে সাধারণ মানুষ পড়ছেন নানা ঝামেলায়। এমন ঘটনা ঘটছে অহরহ। এভাবে মোবাইল ফোন না কেনার ব্যাপারে পরামর্শ দেন সংশ্লিষ্টরা। পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) এমন বেশ কয়েকটি ঘটনা অনুসন্ধান করেছে। পিবিআইয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে একটি চোরাই মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়। বিক্রয় ডটকমে বিজ্ঞাপন দিয়ে ওই ফোনটি বিক্রি করা হয়েছিল। হ্যান্ডসেটটি উদ্ধারের পর এর মূল মালিকের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। পিবিআই সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীর শেরেবাংলানগর থানার অধীন গণভবনের সামনে থেকে ইশতিয়াক ইমন নামের একজনের মোবাইল ফোন হারিয়ে যায়। শাওমি নোট ৪ মডেলের ওই হ্যান্ডসেটটি হারানোর পর শেরেবাংলানগর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) দায়ের করেন ইমন। ওই জিডির ভিত্তিতেই তদন্ত করে মোবাইল সেটটি উদ্ধার করে পিবিআই। পিবিআই জানিয়েছে, একটি জিডির ভিত্তিতে হারানো মোবাইল সেটটির সন্ধান শুরু হয়। সেটের আইএমইআই নম্বরের সহায়তায় হারিয়ে যাওয়া সেটের ব্যবহারকারীর লোকেশন ও নম্বরের কল ডিটেইল রেকর্ড (সিডিআর) বের করা হয়। পরে সেটটির পরের ব্যবহারকারীকে জানানো হয়, তার কেনা মোবাইলটি চোরাই।

তিনি বলেন, ‘ওই সেটটি যিনি পরে কিনেছিলেন, তাকে চোরাই সেটের বিষয়ে জানানোর পরই তিনি তা পিবিআই সদর দফতরে এসে ফেরত দিয়ে যান। ওই সময় তিনি জানান, বিক্রয় ডটকমে বিজ্ঞাপন দেখে ১২ হাজার টাকা দিয়ে ফোনটি কেনেন তিনি। কিন্তু তার জানা ছিল না যে, এটি চোরাই সেট। এ বিষয়ে তাকে অভিযোগ দিতে বলা হয়েছে।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর