কখনো জুতোর শুকতলায়, কখনো ইলেকট্রনিক সামগ্রীর ভিতর, কিংবা নানান কায়দায় আসছে সোনার চালান। অবৈধ এসব চালান আনতে গিয়ে প্রতিনিয়তই গ্রেফতার হচ্ছে ক্যারিয়াররা। সোনার জব্দ করার পর মামলাও দায়ের করা হয়। কিন্তু তদন্ত করতে গিয়ে পুলিশ হদিস পায় না চালানের হোতাদের। তাই সিংহভাগ মামলার চার্জশিটে শুধুমাত্র ক্যারিয়ারদের আসামি করা হয়। আর ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যায় সোনা চোরাচালনোর হোতারা।
শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর কাস্টমসের উপ-কমিশনার নুর উদ্দিন মিলন বলেন, ‘সোনার বারসহ যাদের গ্রেফতার করা হয় তাদের সিংহভাগই হচ্ছে ক্যারিয়ার। তারা কার চালান বহন করছে- সে বিষয়ে বিস্তারিত জানে না। তাদের শুধু মোবাইল নাম্বার জানা থাকে। তাই মামলার এজাহারে হোতাদের নাম দেওয়া সম্ভব হয় না। মামলা তদন্ত করার সময় পুলিশ উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে হোতাদের নাম চার্জশিটে অন্তর্ভুক্ত করতে পারে।’
চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ (সিএমপি) সুত্রে জানা গেছে, ২০১০ সাল থেকে ২০১৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সিএমপি’র বিভিন্ন থানায় ৪৩৭টি চোরাচালান মামলা রেকর্ড হয়। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি অংশই হচ্ছে সোনা চোরচালান মামলা। রেকর্ড হওয়া মামলাগুলোর মধ্যে রয়েছে ২০১৮ সালে ৫৯টি, ২০১৭ সালে ৪৪টি, ২০১৬ সালে ৩১টি, ২০১৫ সালে ৪৩টি, ২০১৪ সালে ৫৬টি, ২০১৩ সালে ৩৬টি, ২০১২ সালে ৪১টি, ২০১১ সালে ২৮টি, ২০১০ সালে ৯৯টি। প্রায় সব মামলায়ই আসামি করা হয় শুধুমাত্র সোনা বহনকারীদের। চার্জশিটও দেওয়া হয় শুধুমাত্র বহনকারীদের নামে। ফলে ধরা ছোঁয়ার বাইরে থাকে সোনা সিন্ডিকেটের মূল হোতারা। সিএমপি’র কর্ণফুলী জোনের সহকারী কমিশনার জাহেদুল ইসলাম বলেন, ‘কিছু কিছু মামলা তদন্ত করতে গিয়ে দেখা যায় চালানের ক্যারিয়ার হোতার মোবাইল নাম্বার ও ডাক নাম ছাড়া আর অন্য কোনো তথ্য দিতে পারে না। যে নাম্বার দেওয়া হয় তাও অন্য জনের নামে রেজিস্ট্রেশন করা। তাই কিছু কিছু চালানের হোতার বিষয়ে জানতে পারা যায় না। তাই পুলিশ বাধ্য হয়েই ক্যারিয়ারকে আসামি করে চার্জশিট প্রদান করে।’অনুসন্ধানে জানা গেছে, চট্টগ্রামে আসা সোনা চালানের সবই আসে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরব, আরব আমিরাত, কাতার থেকে। মধ্যপ্রাচ্য থেকে চট্টগ্রামের আসা সোনা চালানের সবই আসে আকাশ পথে। নিত্য নতুন কৌশলে বিমান বন্দর দিয়ে সোনা চোরাচালান যেমন হচ্ছে, তেমনি চালানসহ ধরাও পড়ছে চালান বহনকারীরা। বিশেষ করে লাগেজ পার্টির মাধ্যমে চোরাচালান হওয়ায় মূল হোতারা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে। আর ক্যারিয়াররাও জামিনে মুক্তি পেয়ে যাওয়ায় বন্ধ হচ্ছে না রাজস্ব ফাঁকির এ পন্থা। শুল্ক গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, এখন পর্যন্ত সোনা চালানসহ গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে ৯৫ ভাগই ‘ক্যারিয়ার’। যারা চালান বাংলাদেশে নিয়ে আসার জন্য বিমান ভাড়ার পাশাপাশি প্রতি পিস হিসেবে ৫ হাজার টাকা করে পেয়ে থাকে, তারা কোন সিন্ডিকেটের চালান পরিবহন করছে তা জানে না। কেউ কেউ শুধু হোতাদের ডাক নামই জানে। তাই ক্যারিয়ারদের গ্রেফতার করা গেলেও অনেক সময় হোতাদের বিষয়ে বিস্তারিত জানা যায় না। চালানের হোতাদের বিষয়ে বিস্তারিত নাম না জানার কারণে অনেক সময় সিন্ডিকেট হোতাদের নাম এজাহারে উঠে আসে না।