শনিবার, ২৩ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা

থুবড়ে পড়েছে ট্রাফিক সিগন্যাল

ত্রুটির কারণে জ্বলছে না লাইট জলে যাচ্ছে কোটি কোটি টাকা

জয়শ্রী ভাদুড়ী

চালু করার তিন মাসের মাথায় মুখ থুবড়ে পড়েছে রাজধানীর রিমোট কন্ট্রোল ট্রাফিক সিগন্যাল ব্যবস্থা। চালকের অসচেতনতা, মহাসড়কে এলোমেলো রিকশা চলাচল, অতিরিক্ত গাড়ির চাপ, ট্রাফিক পুলিশে দক্ষ জনবলের অভাব এবং যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে হাতের ইশারায় ট্রাফ্রিক নিয়ন্ত্রণ কাজ চলছে। ফলে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) পক্ষ থেকে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কাছে ৬টি ট্রাফিক সিগন্যাল হস্তান্তর করা হলেও তা কার্যকর করা যাচ্ছে না। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, যানজট নিরসনে ২০০১-২০০২ অর্থবছরে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ‘ঢাকা আরবান ট্রান্সপোর্ট’ প্রকল্পের পরিকল্পনা করা হয়। এর আওতায় প্রায় ২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ৬২টি ট্রাফিক ইন্টারসেকশনের ৮৮টি আধুনিক কাউন্টডাউন ট্রাফিক সিগন্যাল বাতি বসানো হয়। পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের নির্মল বায়ু ও টেকসই পরিবেশ (কেইস) প্রকল্পের মাধ্যমে সিগন্যাল বাতিগুলো স্থাপন করে সিটি করপোরেশন। পরবর্তীতে এগুলোকে রিমোট কন্ট্রোল সিস্টেমের আওতায় আনা হয়। কিন্তু নানা ধরনের ত্রুটির কারণে নির্মাণ শেষে এগুলোর ব্যবহার নিশ্চিত করা যায়নি। এতে যে সময় নির্ধারণ করে দেওয়া ছিল তার সঙ্গে বাস্তব যানবাহনের পরিসংখ্যানের কোনো সামঞ্জস্য ছিল না। সে কারণে বেশ কয়েকবার পরীক্ষামূলকভাবে ট্রাফিক বাতি চালু করা হলেও তা সফলতার মুখ দেখেনি। এর আগে ৪ নভেম্বর প্রকল্প পরিচালক ও ডিএসসিসির প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ মো. সিরাজুল ইসলাম নগরীর ৬টি ট্রাফিক সিগন্যালের রিমোট কন্ট্রোল পরিচালনার জন্য বুঝে নিতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনারকে (ট্রাফিক) চিঠি দেন। ওই স্থানগুলোর মধ্যে রয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হল ইন্টারসেকশন, কদম চত্বর ইন্টারসেকশন, মৎস্য ভবন ইন্টারসেকশন, কাকরাইল মসজিদ ইন্টারসেকশন, হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল ইন্টারসেকশন ও শাহবাগ ইন্টারসেকশন। এ ছাড়া আরও চারটি সিগন্যাল বাতি চূড়ান্ত করা হয়েছে। গত বছর ৫ ও ৬ ডিসেম্বর চূড়ান্তভাবে ৬টি সিগন্যাল বাতি পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। কিন্তু পরীক্ষামূলকভাবে চালু করার পরেও এর কোনো সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। সরেজমিন রাজধানীর মৎস্য ভবন সিগন্যালে দেখা যায়, ট্রাফিক সিগন্যালের লাইটের দিকে নজর নেই কারও। রাস্তায় ট্রাফিক পুলিশের হুইসেল আর হাতের ইশারাতেই চলছে যানবাহন। মূল সড়কে বাস, প্রাইভেট কারের ফোকর গলে এগিয়ে চলছে রিকশা। ধীর গতির এসব যানবাহনেও ঘটছে দুর্ঘটনা। বাসস্টপে দাঁড়ানোর নাম নেই রাস্তার মাঝখানে থামিয়ে চলছে যাত্রী ওঠানামা। রাস্তায় চলাচলের সময় রাজধানীর এসব বাসের গেট বন্ধ রাখার নিয়ম রয়েছে। ট্রাফিক পুলিশ দেখলে জরিমানার ভয়ে ওই জায়গাটুকু বন্ধ করে পার হলেই খুলে দেওয়া হচ্ছে গেট। মৎস্য ভবন সিগন্যালের ট্রাফিক পুলিশ সদস্য মনিরুল ইসলাম বলেন, সিগন্যাল নিয়ন্ত্রণে সবচেয়ে বেশি ঝামেলা হয় মোটরসাইকেলের কারণে। অ্যাপসভিত্তিক সেবা চালু হওয়ায় দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে ঢাকায় শুধু মোটরসাইকেল চালাতে অনেক মানুষ এসেছে। এদের অধিকাংশই নিয়ম জানেও না, মানেও না। মূল রাস্তায় রিকশা এবং মোটরসাইকেলের কারণে যানজট বাড়ে। বাস চালকরা সচেতন হলে আমাদের কাজ অনেক সহজ হয়ে যাবে। এ ব্যাপারে ডিএমপির যুগ্ম-কমিশনার, ট্রাফিক (দক্ষিণ) মো. মফিজ উদ্দিন আহমেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে অনেক সময় রিমোট কন্ট্রোল সিগন্যাল নষ্ট থাকছে। এ ছাড়া যাত্রী এবং চালকদের অসচেতনতার কারণে সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। এজন্য এই গ্রুপটিকে সচেতন করতে আমরা কাজ করছি। চালক এবং যাত্রী রিমোট কন্ট্রোল ট্রাফিক সিস্টেমের সঙ্গে অভ্যস্ত হয়ে গেলে কাজ অনেক সহজ হয়ে যাবে। এ ছাড়া রিমোট কন্ট্রোল ট্রাফিক সিস্টেম পরিচালনার জন্য দক্ষ ট্রাফিক পুলিশ তৈরির কাজ চলছে বলেও জানান তিনি। তবে এবার যন্ত্রের মাধ্যমে ট্রাফিক সিগন্যাল নিয়ন্ত্রণের জন্য এরই মধ্যে কন্ট্রোলারের ডায়াগ্রামের পরিবর্তন আনা হয়েছে। রিমোট সিস্টেমের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ডায়াগ্রামের পরিবর্তন করা হয়েছে। এজন্য দেশের বাইরে থেকে ইতিমধ্যেই সোয়া কোটি টাকা ব্যয়ে ১৩৪টি রিমোট কেনা হয়েছে। প্রতিটি ইন্টারসেকশনের জন্য থাকছে দুটি রিমোট। কয়েকটি যন্ত্রও পরিবর্তন করতে হচ্ছে।

এত আয়োজনের পরেও কার্যত কাজে আসছে না রিমোট কন্ট্রোল ট্রাফিক সিস্টেম।

সর্বশেষ খবর