শনিবার, ২৩ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা
নদী বাঁচাও ৩৮

মোহাম্মদপুরের সেই জমি খনন করে হচ্ছে নদ

শামীম আহমেদ

মোহাম্মদপুরের সেই জমি খনন করে হচ্ছে নদ

দখল-দূষণে মৃতপ্রায় তুরাগের প্রাণ ফিরিয়ে আনতে উদ্ধার করা ভূমি খনন করে ফের সৃষ্টি করা হচ্ছে পানিপ্রবাহ। সেই সঙ্গে জোরকদমে চলছে দখলদার ও অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান। রাজধানীর পাশ দিয়ে বহমান নানা দিক দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ এ নদটিকে বাঁচাতে এবারই প্রথমবারের মতো উচ্ছেদের পাশাপাশি খনন কাজ চালাচ্ছে বিআইডব্লিউটিএ। গত বৃহস্পতিবার নদের বসিলা অংশে আমিন-মোমিন হাউজিংয়ে গিয়ে দেখা গেছে, নদীতীর থেকে প্রায় ৩০০ ফুট দূরে ছয়টি এক্সাভেটর দিয়ে চলছে খনন কাজ। উপস্থিত বিআইডব্লিউটিএ কর্মকর্তারা জানান, এ পুরো এলাকাটাই ছিল নদী। ভরাট করে হাউজিং গড়ে তোলা হয়েছে। খনন করে আবারও তুরাগকে স্বরূপে ফেরানো হবে। বিআইডব্লিউটিএ’র যুগ্ম-পরিচালক এ কে এম আরিফ উদ্দিন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আগে শুধু উচ্ছেদ করা হতো। পরে আবার দখল হয়ে যেত। অবৈধ দখলদারদের কারণে নদীটি আজ মৃতপ্রায়। এবার উচ্ছেদের পাশাপাশি খননের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আমিন-মোমিন হাউজিংয়ের দখল ও ভরাটকৃত জমি লম্বায় প্রায় ২৮শ ফুট ও চওড়ায় কোথাও ২৫০ ফুট, কোথাও ৪০০ ফুট। তুরাগের একটি চ্যানেল বন্ধ করে নদীর জায়গা দখল করে গড়ে উঠেছিল হাউজিং কোম্পানিটি। পুরোটা খনন করতে প্রায় ছয় কোটি টাকা খরচ হবে। আশা করছি আগামী এক মাসের মধ্যে খনন শেষ হবে। এই হাউজিং দিয়ে খনন কাজ শুরু করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে তুরাগ দখল করে গড়ে ওঠা সব আবাসন উচ্ছেদ ও খনন করা হবে। এসব খননে যে টাকা খরচ হবে মামলা করে তা দখলকারীদের থেকে আদায় করা হবে। এদিকে ধারাবাহিক অভিযানের অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবারও বসিলা অংশে মিরপুর জহুরাবাদ, পালপাড়া ও কাউন্দিয়া এলাকায় তুরাগ নদের উভয় পাড়ে উচ্ছেদ অভিযান চালায় বিআইডব্লিউটিএ। এ সময় ৩২টি দালানসহ ১৭৩টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। সরেজমিন আমিন-মোমিন হাউজিংয়ে দেখা গেছে, প্রকল্পের দুই পাশে নদের মধ্যে দুটি ড্রেজার অবস্থান করছে। আর উপরে নদীতীর থেকে প্রায় ৩০০ ফুট দূরে আটটি এক্সাভেটর দিয়ে চলছে খনন কাজ। কয়েকটি স্থানে এরই মধ্যে বালু ফুঁড়ে পানি বের হয়েছে। খননে তদারককারী এক কর্মকর্তা বলেন, এক্সাভেটর দিয়ে খনন করে নদীর সমতলে আনার পর ড্রেজার বসানো হবে। ২৫ ফুট গভীর করে খনন করা হবে। এদিকে হাউজিংয়ের সব স্থাপনা উচ্ছেদ ও নদীতীর থেকে ৩০০ ফুট দূরে খনন কাজ চললেও তীরের ১০ ফুটের মধেই একটি সিরামিক কারখানা বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মতো মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। স্থাপনাটির এক পাশে তুরাগ, অপরপাশে চলছে খনন কাজ। জানতে চাইলে এ কে এম আরিফ উদ্দিন বলেন, ওই স্থাপনাটির দুই পাশ দিয়েই তুরাগ বয়ে যাবে। কারখানাটি নিয়ে আমরাও ঝামেলায় আছি। নদীর মাঝখানে একটা স্থাপনা থাকবে দ্বীপের মতো। কিন্তু, সিএস দাগে ওই জমি ব্যক্তি সম্পত্তি। তাই আমাদের কিছু করার নেই। কারখানাটি রেখে চারপাশে খনন করব। স্থানীয় কয়েকজনের সঙ্গে আলাপ করলে তারা জানান, এই পুরো এলাকায়ই ছিল পানিপ্রবাহ। জায়গাটি ভরাটও হয়েছে বেশি দিন হয়নি। এখনো বালু ঠিকমতো বসেনি। নদীর ভিতরের জমি মানুষের নামে রেকর্ড হওয়া নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন অনেকে। প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একনেক বৈঠকে ঢাকার চারপাশের নদী ও চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর দূষণ বন্ধ ও নাব্য ফিরিয়ে এনে নদী রক্ষায় টাস্কফোর্স গঠন করে দেন। সম্প্রতি এক রায়ে তুরাগ নদকে লিগ্যাল/জুরিস্টিক পারসন (আইনগত ব্যক্তি) তথা জীবন্ত সত্তা হিসেবে ঘোষণা করে হাই কোর্ট। আদালত বলেছে, নাব্য ও বেদখলের হাত থেকে নদীকে রক্ষা করা না গেলে বাংলাদেশ তথা মানবজাতি সংকটে পড়তে বাধ্য।

সর্বশেষ খবর