শনিবার, ২৩ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা

সাহায্যকারী নয় খুনি

মির্জা মেহেদী তমাল

সাহায্যকারী নয় খুনি

রামপুরার একটি বাসা থেকে সাবেক এক সরকারি কর্মকর্তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ডাকাত দল তাকে হত্যা করে মালামাল লুটে নিয়ে গেছে। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর পুলিশ প্রশাসনে তোলপাড়। পুলিশ ও গোয়েন্দারা খুনি চক্রকে গ্রেফতারে মাঠে নামে। কিন্তু কোনোভাবেই পুলিশ খুনিদের নাগাল পায় না। দীর্ঘ তদন্তের পর পুলিশ জানতে পারে ঘরের ভিতরেই দীর্ঘদিন ধরে ঘাপটি মেরে ছিল খুনি চক্র। সুযোগমতো বাড়ির মালামাল তারা লুটে নিয়ে যায়। রামপুরা-৩৪৭, টিভি রোডে কর কমিশনার আবু তাহেরের বাসার গ্রিল কেটে ভিতরে ঢুকে তাকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে। পরে স্বর্ণালঙ্কার ও টাকা-পয়সা হাতিয়ে নেয়। যাওয়ার সময় তারা গৃহকর্তা তাহেরের হাতের রগ কেটে দেয়। এতে রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু ঘটে। ঘটনার সময় বাসার দুই গৃহকর্মী ছিল রান্নাঘরে। পুলিশ আসে। তদন্ত শুরু হয়। পুলিশ দুই গৃহকর্মীকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চাইলে তাহেরের স্ত্রী পুলিশকে বাধা দেন। তাহেরের স্ত্রী পুলিশকে জানান, ওরা তাদের মেয়ের মতো। তারা এ ঘটনায় জড়িত নয়। পুলিশ তাদের আর জেরা করতে পারে না। পুলিশ তদন্ত করে জানতে পারে তাহেরের পুরনো গাড়িচালক নাসির তাদের হুমকি দিয়েছিল। আর এ জন্য থানায় একটি জিডিও করেছিলেন তাহের। পুলিশ এ সূত্র ধরে তদন্ত এগিয়ে নিয়ে যায়। পুলিশ এবার শত বাধা সত্ত্বেও কাজের দুই মেয়ে সেলিনা ও নূরজাহানকে জেরা করে। তাদের মোবাইল ফোন জব্দ করে। পুলিশ মোবাইল ফোনের কললিস্ট দেখে নিশ্চিত হয় এরাও জড়িত। নাসিরের নম্বর তাদের কললিস্টে রয়েছে। একপর্যায়ে তাদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তারা ঘটনার সঙ্গে জড়িত বলে স্বীকার করে। নাসিরের সঙ্গে নূরজাহানের সম্পর্ক ছিল। নাসির ডাকাতির পরিকল্পনা করে। ঘটনার রাতে সেলিনা ও নূরজাহান দরজা খুলে দেয়। নাসিরের নেতৃত্বে আটজন পেশাদার ডাকাত ওই বাসায় ঢুকে বাসার সবাইকে জিম্মি করে ফেলে। এরপর মালামাল লুটে নেয়। যাওয়ার আগে তাহেরকে হত্যা করে যায়। পুলিশ তাদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী নাসিরসহ প্রত্যেককে গ্রেফতার করে। আদালতে চার্জশিট দাখিল করে। সাবেক কর কমিশনার আবু তাহেরকে হত্যার দায়ে পাঁচজনকে মৃত্যুদ- দেয় আদালত।

রাজধানীর হাজারিবাগের টালী অফিস রোডের ২৯১/বি নম্বর বাসা। স্বামী এনামুল হক বিদেশে থাকায় তাসলিমা আক্তার তার ৭ বছরের ছোট্ট ছেলেকে নিয়ে বাসায় একাই থাকেন। দীর্ঘদিন ধরে ওই বাসায় কাজ করছেন গৃহকর্মী আশা। রাতের কোনো এক সময়ে জেসমিনকে চেতনানাশক খাইয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করে গৃহকর্মী আশাসহ তার সহযোগীরা। এরপর ওই বাসা থেকে নগদ ৭০ হাজার টাকা ও ৪ ভরি স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে পালিয়ে যায় তারা। এ ঘটনায় জড়িত কাউকেই গ্রেফতার করা যায়নি।

সর্বশেষ গত ১০ ফেব্রুয়ারি এলিফ্যান্ট রোডের নিজ বাসায় ইডেন কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মাহফুজা চৌধুরী পারভীন হত্যা মামলায় ওই বাসার দুই গৃহকর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পুলিশের রমনা বিভাগের উপকমিশনার মারুফ হোসেন সরদার গণমাধ্যমকে জানান, তদন্তে জানা গেছে, গৃহকর্মী রেশমা ও স্বপ্না এ হত্যাকা- ঘটিয়েছে। হত্যার পর ওই বাসা থেকে স্বর্ণালঙ্কার ও টাকা-পয়সা লুট করে নিয়ে গেছে তারা।

রাজধানীতে এমন ভয়ঙ্কর ঘটনার সংখ্যা অনেক। সংসারের কাজে সাহায্য করার জন্য কাজের বুয়া নিয়ে থাকেন সবাই। কিন্তু সচেতনতার অভাবে অনেক সময় এই সাহায্যকারী কাজের মানুষটি হয়ে ওঠে জীবনের কাল। ‘দুর্ধর্ষ পারভীন’! তার কথা অনেকেরই জানা। সে অভিজাত এলাকায় কাজের বুয়া হয়ে বাড়ির লোকদের নেশাদ্রব্য খাইয়ে অজ্ঞান করে সর্বস্ব লুট করে নিয়ে যেত। ডিএমপির গোয়েন্দা বিভাগ তাকে গ্রেফতার করে।

বাসায় যাতে এমন কোনো পারভীন, রেশমা বা স্বপ্নার মতো ভয়ঙ্কর খুনি ঘাঁটি গাড়তে না পারে সে জন্য কয়েকটি সতর্কতা অবলম্বন করতে বলেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ-ডিএমপি। ডিএমপির উপকমিশনার (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান বলেন, কাজের বুয়া বা কাজের লোক নিয়োগের আগে তার কাছ থেকে জাতীয় পরিচয়পত্র, সদ্য তোলা রঙিন ছবি, শনাক্তকারী ব্যক্তি, ব্যক্তির পরিচয় ও তার জাতীয় পরিচয়পত্র নিতে হবে। সব তথ্য নেওয়ার পর নিকটস্থ থানায় কাজের বুয়ার তথ্য দিতে হবে। এক কপি রাখতে হবে নিজের কাছে। তাতে করে সে যদি আগে কোনো অপরাধ করে থাকে তাহলে পুলিশ তাকে সহজে শনাক্ত করতে পারবে। আগে কোথায় কাজ করেছে তার বিস্তারিত তথ্য নিন এবং কাজ ছাড়ার কারণ জানার চেষ্টা করুন। প্রয়োজনে আগের কাজের ঠিকানায় যোগাযোগ করে তার তথ্য সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারেন। কাজের বুয়ার পরিবারে তথ্য নিন। তার স্থায়ী ঠিকানা ও পরিবারে কে কে আছে তা জানার চেষ্টা করুন। প্রয়োজনে তার স্থায়ী ঠিকানায় যোগাযোগ করে দেখতে পারেন, সে আসলে ওই ঠিকানায় বসবাস করে কি না। এত কিছু খোঁজখবর অনাবশ্যক মনে হতে পারে। কিন্তু সমস্যা সৃষ্টি হলে তখন আফসোসের অন্ত থাকবে না।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর