শনিবার, ২৩ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা
কৃষি সংবাদ

সৌর সেচযন্ত্র কৃষিতে বিপ্লব

আবদুল লতিফ লিটু, ঠাকুরগাঁও

সৌর সেচযন্ত্র কৃষিতে বিপ্লব

সূর্যের আলো কাজে লাগিয়ে কৃষিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছেন সদর উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের মোলানী গ্রামের কৃষক সুলেমান। কয়েকটি সোলার সেচ পাম্প দিয়ে মৎস্য হ্যাচারির পানি, ভ্রাম্যমাণ সোলার সেচ পাম্প দিয়ে পুকুরের পানিসহ বোরো ধানের সেচ কাজ চালাচ্ছেন তিনি। ডিজেল কিংবা বিদ্যুৎ নয়, সূর্যের আলো ব্যবহার করে ভূগর্ভের পানি দিয়ে সেচ কাজ করা হয়। কৃষককে বাঁচাতে অপেক্ষাকৃত স্বল্পমূল্যের ভ্রাম্যমাণ সৌরবিদ্যুৎনির্ভর সেচযন্ত্র উদ্ভাবন করেছেন ঠাকুরগাঁওয়ের কৃষক সুলেমান আলী। তিনি এ পর্যন্ত নিজের চাহিদা পূরণ করে ৩০টি সোলার সেচ পাম্প তৈরি করে বিক্রি করেছেন যা এখন ঠাকুরগাঁওসহ অন্য জেলায়ও ব্যবহার হচ্ছে। বোরো মৌসুমে ডিজেল বা বিদ্যুতের চেয়ে ৪-৫ হাজার টাকা কমে সেচ দিতে পেরে চাষিরাও খুশি।

সুলেমান আগে সোলার আইপিএস তৈরি করতেন। সৌর সেচযন্ত্র চালু হওয়ার পর তিনি এই প্রযুক্তি আরও সহজলভ্য করতে কাজ শুরু করেন। তিনি নিজের উদ্ভাবনী শক্তি কাজে লাগিয়ে তৈরি করেন সৌর সেচ পাম্প। ১০টি সৌরকোষ একত্রে সংযুক্ত করে তৈরি করা হয়েছে সৌর প্যানেল। প্রতিটি সৌরকোষের ধারণক্ষমতা ২৫০ ওয়াট। ওই সৌর প্যানেলের ওপর সূর্যের আলো পড়তেই ভোল্টেজ তৈরি হয় এবং সংযুক্ত তারের মাধ্যমে এটি থেকে পাওয়া যায় বিদ্যুৎ। সেই বিদ্যুৎ দিয়ে চলে ৩ হর্স পাওয়ারের একটি পাম্প। এই যন্ত্র দিয়ে সকাল ৭টা  থেকে বিকাল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত জমিতে সেচ দেওয়া যায়। সূর্যের তাপ যত বাড়ে পানির গতি ততই বাড়ে। ২৫০০ ওয়াটের সৌর প্যানেল দিয়ে মিনিটে ৭০০ লিটার পানি ওঠে। ১ ওয়াট সৌরকোষের দাম পড়ে ৪০ টাকা। সে হিসাবে ২৫০০ ওয়াটের দাম পড়ে ১ লাখ টাকা। পানির পাম্প ও সোলারের অবকাঠামো তৈরিতে ব্যয় ৩০ হাজার টাকা। একটি সৌর সেচযন্ত্র তৈরিতে খরচ পড়ে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা। তিনি প্রতিটি পাম্প বিক্রি করছেন ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা। চাষিরা জানান, বিদ্যুৎচালিত নলকূপ দিয়ে সেচ দিতে কার্ডে অগ্রিম টাকা রিচার্জ করতে হয়। লোডশেডিংয়ের কারণে সেচ দিতে না পারলে বোরো ধানের ক্ষতি হতো। সোলার পাম্পে পানি তুলতে এক টাকাও লাগে না। একবার ক্রয় করলে আর কোনো খরচ নেই। উদ্ভাবক সুলেমান জানান, সরকার যদি আমার সৌর সেচযন্ত্র কৃষকদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে পারে, তাহলে বিদ্যুৎ ও ডিজেলের ওপর কৃষককে নির্ভর করতে হবে না। এতে পরিবেশও ঠিক থাকে। সরকার ঋণের ব্যবস্থা করলে আমি সারা দেশে কমমূল্যে সৌর সেচযন্ত্রটি বাজারজাত করতে পারব। আগে ডিজেলচালিত শ্যালো মেশিন দিয়ে বোরো ধান আবাদ করতে একর প্রতি খরচ হতো ৭-৮ হাজার টাকা। এখন একর প্রতি ৩ হাজার টাকা ব্যয় হবে। ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক আফতাব হোসেন জানান, সুলেমান আলীর উদ্ভাবনটা আমাকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। এই সৌর সেচযন্ত্রটি কৃষক ব্যবহার শুরু করেছে।

এতে ডিজেল বা বিদ্যুৎ লাগে না। কম খরচে কৃষক তার উৎপাদিত পণ্যের সঠিক ব্যবহার করতে পারছে। বিষয়টি কৃষি মন্ত্রণালয়ে লিখিতভাবে জানানো হবে।

সর্বশেষ খবর