ছেলেটির সঙ্গে ফেসবুকে পরিচয়। একটানা দেড় বছর কথা হয় ফেসবুকে। হয় প্রেম, ভালোবাসা। একদিন ছেলেটা জানায়, সে খুব অসুস্থ। হাসপাতালে ভর্তি। প্রেমের টানে মেয়েটি একা কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রামে ছুটে যায়। সেখানে গিয়েই প্রথম জানতে পারে, ফেসবুকে যার সঙ্গে প্রেম, প্রোফাইলে যে ছবি, তার সঙ্গে বাস্তবে দেখা ছেলেটির কোনো মিল নেই। এস কে আরিফ নামের যে ছেলেটির সঙ্গে প্রেম, আসলে সে আবদুল্লাহ।
গত বছর নভেম্বরে দুপুরের পর রাজধানীর সায়েদাবাদে শ্যামলী বাস কাউন্টারে মেয়েটিকে পাওয়া যায়। সে সময় তার গায়ে ছিল কালো একটি বোরকা। পরনে ছিল লাল বিয়ের শাড়ি। মাথায় টিকলি, গলা ও কানে সিটি গোল্ডের বড় বড় গয়না। মেয়েটি প্রায় অচেতন অবস্থায় ছিল। শুধু বুক চাপড়াচ্ছিল, মুখ ফুটে কিছু বলতে পারছিল না। এভাবেই সেদিন মেয়েটিকে উদ্ধারের বর্ণনা দিলেন যাত্রাবাড়ী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মোহাম্মদ জহুরুল ইসলাম। পুলিশের তথ্যমতে, মেয়েটির সঙ্গে একটি ব্যাগ ও একটি লাগেজ ছিল। তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করার পর চিকিৎসকরা তার পাকস্থলী ওয়াশ করে জানান, হাসপাতালে নিতে দেরি হলে বড় কোনো অঘটনও ঘটে যেতে পারত। হাসপাতালে মেয়েটিকে ভর্তি করা হয়। দীর্ঘ চিকিৎসার পর সুস্থ হয় মেয়েটি। সে জানায়, আবদুল্লাহ (ফেসবুকেও এ নামে আইডি আছে) নামের এক ছেলেকে বিয়ে করতে বাধ্য হয়। ফেসবুকে পরিচয়ের সূত্রে প্রেম। প্রেমিকের অসুস্থতার খবরে তাকে দেখতে গিয়ে ফাঁদে পড়ে সে। বন্ধুর বাসায় চার দিন মেয়েটিকে আটকে রেখে শারীরিক সম্পর্ক করতে বাধ্য করে ছেলেটি। চার দিন পর মেয়েটি বাড়ি ফেরে। এ সময় ছেলেটিও সঙ্গে ছিল। মেয়েটির ছিল পরিবারে সমস্যা। বাবা মারা গেছেন। দুই ভাই আলাদা থাকেন। মা আর ছোট এক বোনকে নিয়েই মেয়েটির সংসার। ছেলেটির সঙ্গে বাড়ি ফিরলে এলাকার লোকজন ছেলেটির সঙ্গেই বিয়ের আয়োজন করেন। এটা তিন-চার মাস আগের ঘটনা। ছেলেটিও বিয়েতে রাজি হয়। তারপর বিয়ে করা বউকে নিয়ে ছেলেটি চট্টগ্রামে ফিরে যায়। ছেলের মা যৌতুক ছাড়া মেয়েটিকে বাড়ির বউ বলে মেনে নিতে রাজি হননি। ছেলেটি মেয়েকে নিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে যেতে বাধ্য হয়। পরে মেয়েটিকে নিয়ে আরেক বাসায় ওঠে সে। যৌতুকের জন্য চাপ দেয়। চলে নির্যাতন। এরপর একদিন কিছু না বলে ছেলেটি হাওয়া। ছেলেটি উধাও হয়ে যাওয়ার পর বিচার ও শালিসের আশ্বাসে এগিয়ে আসা একজন মেয়েটিকে তার বাসায় নিয়ে যান। ওই লোক মেয়েটির সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্ক গড়তে চান। মেয়েটি মাকে ফোন করে জানান ঘটনা। আবার ছেলেটির বাসায় ঢোকার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয় মেয়েটি। তারপর মেয়েটি অনেক সংগ্রাম করে আবার কক্সবাজারে ফিরে যায়। এর দুই সপ্তাহের মাথায় ছেলেটি আবার ফোন করে বলে, মা আটকে রাখায় এত দিন সে যোগাযোগ করতে পারেনি। আবার সে সংসার শুরু করতে চায়। মেয়েটি আবার ছেলেটির ফাঁদে পা দেয়।
ছেলের কথা অনুযায়ী সাজগোজ করে লাগেজ নিয়ে বাড়িতে কাউকে না বলে বেরিয়ে পড়ে মেয়েটি। মেয়েটি জানত, তাকে চট্টগ্রামে নিয়ে যাচ্ছে স্বামী। তবে পরে জানতে পারে, সে ঢাকায় এসেছে। পথে মেয়েটিকে স্বামী জোর করে অনেক কিছু খাওয়ায়। বাসস্ট্যান্ডে নামার পর ছেলেটি কৌশলে আবার উধাও হয়ে যায়। মেয়েটি ব্যাগ খুলে দেখে, তার মুঠোফোন আর সঙ্গে করে আনা ১৩ হাজার টাকাও নিয়ে গেছে স্বামী। এরপরই মেয়েটি বুঝতে পারে, তার চোখের সামনে সবকিছু ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে। এরপর আর কিছু মনে নেই। হাসপাতালে জ্ঞান ফেরার পরও অনেক কথাই সে মনে করতে পারেনি। তবে আস্তে আস্তে তার সবকিছু মনে পড়ছে। মেয়েটি জানায়, আর কোনো মেয়ে যাতে তার মতো ফেসবুকে প্রতারণার শিকার না হয়। একইভাবে মেয়েটি চায়, তাকে বিয়ে করা ছেলেটির কঠোর শাস্তি হোক, যাতে সে আর অন্য কোনো মেয়েকে ফাঁদে ফেলতে না পারে।