সোমবার, ২৫ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা
নদী বাঁচাও - ৪০

রবিঠাকুরের স্মৃতিবিজড়িত নাগর নদ এখন মরা খাল

আবদুর রহমান টুলু, বগুড়া

রবিঠাকুরের স্মৃতিবিজড়িত নাগর নদ এখন মরা খাল

বগুড়া জেলাজুড়ে নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের উৎসব চলছে। অবাধে প্রতিদিন শত শত ট্রাকে করে এই বালু পরিবহন করা হচ্ছে বিভিন্ন স্থানে। জেলার যমুনা, বাঙ্গালী, করতোয়া, ইছামতী, নাগর, সুখদহসহ বিভিন্ন বিল ও  দিঘি থেকে অবাধে বালু উত্তোলনের ফলে নদী এলাকার আবাদি জমি দেবে গিয়ে ভূমিধসের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। অব্যাহতভাবে বালু উত্তোলনের ফলে বড়ই সংকটে পড়েছে নাগর নদ। নাগর নদজুড়ে বালু উত্তোলন ও মাটি কেটে নিয়ে যাওয়ায় দুই পাড়ে ধস নেমেছে। রবি ঠাকুরের স্মৃতিবিজড়িত নাগর নদ এখন মরা খাল।

নওগাঁর আত্রাই উপজেলায় নাগর নদের কোল ঘেঁষে উত্তর পাড়ে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিবিজড়িত পতিসর গ্রামে জমিদারবাড়ি অবস্থিত। জমিদারবাড়িটি এখনো রয়েছে। বিশ^কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এই নদ ঘিরেই রচনা করেছিলেন- ‘আমাদের ছোট নদী চলে বাঁকে বাঁকে / বৈশাখ মাসে তার হাঁটুজল থাকে’। রবি ঠাকুরের স্মৃতিবিজড়িত নাগর নদ এখন মরা খাল। পানি নেই। মাটি ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। উভয় পাশের অধিবাসীরা হেঁটে এপার-ওপারে তাদের নিত্যনৈমিত্তিক কাজ সারেন। লোকজন নদীর বুকে বোরো ধান ফলাচ্ছেন।

ইতিহাস থেকে জানা যায়, এই নাগর নদটি বগুড়া জেলার শিবগঞ্জের করতোয়া নদী থেকে বের হয়ে প্রথমে দক্ষিণ-পশ্চিমে প্রবাহিত হয়েছে। পরে দক্ষিণে বাঁক নিয়ে নাটোর জেলার সিংড়ায় আত্রাই নদীতে এসে মিশেছে। নদটির দৈর্ঘ্য ১০৫ কিলোমিটার। চলার পথে নদটি বগুড়া জেলার শিবগঞ্জ থেকে উৎপত্তি হয়ে দুপচাঁচিয়া, কাহালু, আদমদীঘি, নন্দীগ্রাম এবং নওগাঁ জেলার রানীনগর ও আত্রাই উপজেলার সীমানা নির্দেশ করে। সেই সময় নাগর নদের নাব্যতা ছিল অনেক।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে বগুড়ার শিবগঞ্জ, কাহালু, দুপচাঁচিয়া ও আদমদীঘি উপজেলায় নাগর নদের অন্তত ৩০ স্থানে অবৈধভাবে বালু তোলা হচ্ছে। এই নদের আরও বেশ কিছু স্থানে মাটি কেটে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ইটভাটায়।

প্রভাবশালী অবৈধ বালু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে এলাকাবাসী কেউ মুখ খোলার সাহস পাচ্ছেন না। ওই সব অবৈধ বালু ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় নানাভাবে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও উপজেলা প্রশাসনকে অভিযোগ করেও কোনো লাভ হয়নি। ক্ষমতাসীন দলের প্রভাব খাটিয়ে অজ্ঞাত খুঁটির জোরে তারা অবৈধভাবে নদ থেকে বালু উত্তোলন অব্যাহত রেখেছেন। জানতে চাইলে বগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) জেসমিন প্রধান বলেন, নাগর নদ থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়েছে।। ভ্রাম্যমাণ আদালতের উপস্থিতি টের পেয়ে তারা দ্রুত সটকে পড়ে। অবৈধ বালু ব্যবসা বন্ধ করতে তাদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা করা প্রয়োজন। এ জন্য তিনি এলাকাবাসীকে সহযোগিতা করার আহ্বান জানান।

সর্বশেষ খবর