মঙ্গলবার, ২৬ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা

অবশেষে রওশনই বিরোধীদলীয় উপনেতা কাদের আউট

শফিকুল ইসলাম সোহাগ

অবশেষে রওশনই বিরোধীদলীয় উপনেতা কাদের আউট

নানা নাটকীয়তার পর বিরোধীদলীয় উপনেতা হয়েছেন জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান বেগম রওশন এরশাদ। আর দলের কো-চেয়ারম্যানসহ বিরোধীদলীয় উপনেতা থেকে আউট হয়েছেন পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদের ছোট ভাই গোলাম মোহাম্মদ কাদের। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ২৩ মার্চের পত্রের পরিপ্রেক্ষিতে বিরোধীদলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদেরের স্থলে বেগম রওশন এরশাদকে উপনেতা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন স্পিকার। নেতা-কর্মীরা বলছেন, ২১ মার্চ বৃহস্পতিবার রাতে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করেন বেগম রওশন এরশাদ। এর পরই দলে ও সংসদে রওশন এরশাদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হয়। সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে গণভবনে যান রওশন এরশাদ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে একান্তে ৩০ মিনিট কথা বলেন। এর পরই রওশন এরশাদের পাল্লা ভারী হতে থাকে। নেতা-কর্মীরা বলছেন, এইচ এম এরশাদ বা গোলাম মোহাম্মদ কাদেরের চেয়ে রওশন এরশাদই ক্ষমতাসীন সরকারের কাছে বেশি আস্থাভাজন। এইচ এম এরশাদ যেহেতু অসুস্থ জিএম কাদেরই জাতীয় পার্টির কার্যত নেতৃত্বে ছিলেন। এদিকে এরশাদের অবর্তমানে জি এম কদেরকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ঘোষণার পর থেকেই রওশন এরশাদের নেতৃত্বাধীন বলয়টি দলের কর্মসূচি বয়কট করতে থাকে এবং তারা নেতৃত্বের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার জন্য পর্দার আড়ালে থেকে পলিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করতে থাকে। নেতা-কর্মীরা বলছেন, ২০১৪ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত যেভাবে রওশন এরশাদের নেতৃত্বে সংসদ ও সংসদের বাইরে কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে, সরকার চাইছে এবারও জাতীয় পার্টি সেভাবেই কার্যক্রম পরিচালনা করুক। এ জন্য প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর জিএম কাদেরকে সরিয়ে রওশন এরশাদকে নেতৃত্বে আনা হয়েছে। 

জানা যায়, ২২ মার্চ রাতে পার্টির কো-চেয়ারম্যানের পদ থেকে নিজের সহোদর জি এম কাদেরকে অব্যাহতি দেওয়ার পর মাত্র ১৮ ঘণ্টার মাথায় সংসদের বিরোধী দলের উপনেতার পদ থেকেও তাকে অব্যাহতি দেন এরশাদ। একই সঙ্গে তার স্ত্রী বেগম রওশন এরশাদকে বিরোধীদলীয় উপনেতা হিসেবে মনোনীত করেন। শনিবার বিকালে গণমাধ্যমে পাঠানো এক সাংগঠনিক নির্দেশনায় কাদেরের অব্যাহতি ও রওশনের এ পুনর্নিয়োগের কথা জানান এরশাদ। এর আগে শুক্রবার মধ্যরাতে আরেক সাংগঠনিক নির্দেশনায় তিনি জি এম কাদেরকে কো-চেয়ারম্যানের পদ থেকে সরিয়ে দেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগমুহূর্তে কোনো ধরনের সুনির্দিষ্ট কারণ ছাড়াই মহাসচিবের পদ থেকে এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদারকে বাদ দেওয়ার মধ্য দিয়ে এরশাদের জাপায় শুরু হয় অস্থিরতা। এই অস্থিরতা নতুন মাত্রা পায় জিএম কাদেরকে কো-চেয়ারম্যান থেকে অব্যাহতি দেওয়ার মধ্য দিয়ে। প্রেস রিলিজে সাংগঠনিক নির্দেশে এরশাদের উদ্ধৃতি দিয়ে আরও জানানো হয়, ইতঃপূর্বে এরশাদ তার ছোট ভাই জি এম কাদেরকে পার্টির ভবিষ্যৎ উত্তরাধিকারী ঘোষণা করেছিলেন। এরশাদের অবর্তমানে পার্টির সব সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা প্রদান করেন জি এম কাদেরকে। কিন্তু জি এম কাদের তার দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছেন বলে জাপা চেয়ারম্যান এরশাদ তার নির্দেশনায় জানান। আর সেই কারণে দলের কো-চেয়ারম্যানের পদ থেকে জি এম কাদেরকে তিনি অব্যাহতি দিয়েছেন বলে উল্লেখ করেছেন। হঠাৎ করে এরশাদের এই নির্দেশনা গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পর থেকেই পার্টির তৃণমূল পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।

এর আগে ১ জানুয়ারি এরশাদ এক বিবৃতিতে দলে তার উত্তরসূরি হিসেবে জি এম কাদেরকে মনোনীত করার কথা জানিয়েছিলেন। এরপর এরশাদের অনুপস্থিতিতে কাদেরের দায়িত্ব গ্রহণের পর ‘রওশনপন্থি’ হিসেবে পরিচিত নেতারা নাখোশ মনোভাবও দেখিয়েছেন বিভিন্ন সভায়। বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে জি এম কাদেরও সেই শীতল সম্পর্কেরই আভাস দিয়েছিলেন। এর আগে ২০১৬ সালেও ছোট ভাই কাদেরকে কো-চেয়ারম্যান করলে দলের একটি অংশ ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। পরে দলের সিনিয়র কো-চেয়ারম্যানের পদ সৃষ্টি করে তাতে স্ত্রী রওশনকে বসান এরশাদ। নেতা-কর্মীরা বলছেন, ‘পার্টির চেয়ারম্যান যে সিদ্ধান্ত নেবেন, যাকে দায়িত্ব দেবেন, তা-ই আমরা মেনে নেব।’

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে পার্টির মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা বলেন, ‘এইচ এম এরশাদ তার ভাইকে সরিয়ে স্ত্রীকে মনোনয়ন দিয়েছেন। এটা পারিবারিক বিষয়। এ নিয়ে মন্তব্য করতে চাই না।’

সর্বশেষ খবর