মঙ্গলবার, ২৬ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা

স্কুল পালিয়ে ওরা পার্কে

মির্জা মেহেদী তমাল

স্কুল পালিয়ে ওরা পার্কে

স্বনামধন্য একটি স্কুলের মেধাবী ছাত্রী শিউলি (ছদ্মনাম)। তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু সুমন। সমবয়সী। এক স্কুলে না পড়লেও এক ক্লাসেই ওরা পড়ে। এতটাই ঘনিষ্ঠ যে স্কুল ফাঁকি দিয়ে  দুজন দেখা করে। বিভিন্ন পার্কে। এক দিন নয়, দিনের পর দিন। একপর্যায়ে লেখাপড়ায় অমনোযোগী হয়ে পড়ে দুজনই। ক্লাসের সবচেয়ে মেধাবী ছাত্রীটি ফেল করে বসে। তার বাবা-মা কিছুতেই বুঝতে পারছিলেন না কেন তাদের মেয়ে ফেল করে বসল। খোঁজ নিয়ে তারা জানতে পারেন, তাদের মেয়ে স্কুল ফাঁকি দিত। বন্ধুদের সঙ্গে পার্কে আড্ডা দিয়েই সময় পার করত। এতে নিজেই নিজের ক্ষতি করেছে; যা বাবা-মা ঘুণাক্ষরেও জানতে পারেননি।

শুধু শিউলি বা সুমন নয়, রাজধানীর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা স্কুল-কলেজ পালিয়ে পার্কে গিয়ে আড্ডা দিচ্ছে। কেউ করছে প্রেম। যে বয়সে স্কুলে গিয়ে লেখাপড়ার কথা, সে বয়সে ‘প্রেমিক-প্রেমিকা’ হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে তারা। নজর নেই অভিভাবকসহ সংশ্লিষ্টদের। নগরীর বিনোদন কেন্দ্রগুলোয় গেলেই দেখা যায়, শিক্ষার্থীর অনেকেই স্কুল-কলেজ ফাঁকি দিয়ে বন্ধুবান্ধব, ‘প্রেমিক-প্রেমিকা’ নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। স্কুল পোশাক পরেই ছেলেমেয়েরা বলধা গার্ডেন, রমনা পার্ক, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও টিএসটির মতো স্থানে ঘোরাঘুরি করছে। অনেকে নিরিবিলি পরিবেশ পেলে একে-অন্যকে জড়িয়ে ধরছে। স্কুল-কলেজ ছুটির সময় হলে আবার সময়মতো বাড়ি রওনা দিচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অনেক পার্কে স্কুল পোশাক পরে প্রবেশ নিষেধ থাকায়, তারা বাসা থেকে ব্যাগে আলাদা পোশাক নিয়ে বের হয়। সুযোগ-সুবিধামতো পোশাক পাল্টে নেয়। ছেলেরা টি-শার্ট পরে নেয়। মেয়েদের অনেকেই আবার স্কুল পোশাকের ওপর বোরকা পরে। এতে পার্ক কর্তৃপক্ষ কিছুই করতে পারছে না। আবার দেখা যাচ্ছে অনেকে স্কুল ফাঁকি দিয়ে পোশাক পরেই পার্কে ঘুরে বেড়াচ্ছে।

গত সপ্তাহে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দেখা যায়, এক মেয়ে শিক্ষার্থী ‘ক্লাস চলার সময়’ তার ছেলেবন্ধুর হাত ধরে হাঁটছে। পার্ক ও বিনোদন কেন্দ্রগুলো ঘুরে দেখা গেল এমন বহু চিত্র। পুরান ঢাকার একটি ঐতিহাসিক স্থান হিসেবে বেশ পরিচিত বলধা গার্ডেন। ওয়ারীর নবাব স্ট্রিটে এটি অবস্থিত। সৌন্দর্যপিপাসু মানুষ সপরিবারে বলধা গার্ডেনে বেড়াতে যায়। মাদক সেবন আর অসামাজিক কাজের কারণে বলধা গার্ডেনের ঐতিহ্য প্রায় ধ্বংসের মুখে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক সমাজবিজ্ঞানী তৌহিদুল আলম বলেন, ‘স্কুল চলার সময় ছাত্রছাত্রীরা যেন বাইরে ঘোরাঘুরি না করে সেজন্য প্রশাসনের দায়িত্বের সঙ্গে অভিভাবকদেরও সচেতন হতে হবে। প্রতি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের উচিত অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলা। পরিবার থেকেই শিক্ষার্থীদের এসব বিষয়ে নৈতিক ও অনৈতিক শিক্ষা দেওয়া দরকার। পরিবার থেকেই সন্তানকে সুসন্তান হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।’

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর