বুধবার, ২৭ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা

সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদে সরকারের জিরো টলারেন্স : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আজকের শিশু আগামী দিনের কর্ণধার। আজকের শিশুদের মধ্যেই কেউ প্রধানমন্ত্রী হবে, মন্ত্রী হবে, বড় বড় চাকরি করবে। তারা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। তিনি বলেন, আমরা একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়ার চেষ্টা করছি, যেখানে শিশুরা সুন্দর, নিরাপদ ও সমৃদ্ধ জীবন যাপন করতে পারবে।

গতকাল মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে শিশু-কিশোর সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় ও ঢাকা জেলা প্রশাসন এর আয়োজন করে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই বাংলাদেশ হবে দক্ষিণ এশিয়ার উন্নত, শান্তিপূর্ণ ও সমৃদ্ধ একটি দেশ। আমরাই জাতির পিতার এ স্বপ্ন পূরণ করব। তিনি শিশুদের উদ্দেশে বলেন, তোমরা বাবা-মার কথা শুনবে, শিক্ষকদের কথা শুনবে, নিয়মশৃঙ্খলা মেনে চলবে, সুন্দরভাবে জীবনযাপন করবেÑ সেটাই আমরা কামনা করি। মাদক, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সরকারের জিরো টলারেন্স নীতির উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও মাদকের হাত থেকে আমরা দেশকে মুক্ত করতে চাই। এ ক্ষেত্রে শিশু-কিশোর, অভিভাবক, ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাসহ সবাইকে মাদক, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদের কুফল সম্পর্কে শিশুদের জানাতে হবে। এর হাত থেকে শিশু-কিশোরদের রক্ষা করতে হবে। এ সময় তিনি কার সন্তান কোথায় যায়, কার সঙ্গে মেশে, বিদ্যালয় বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সে নিয়মিত কিনা এসব বিষয়ে লক্ষ্য রাখার জন্য অভিভাবক ও সংশ্লিষ্ট শিক্ষক ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের নজর রাখার আহ্বান জানান। শেখ হাসিনা বলেন, স্বাধীন দেশে প্রতিটি মানুষ সুন্দরভাবে বাঁচবে এবং একটি উন্নত জীবন পাবেÑ এটাই ছিল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন। আজকে আমরা একটি লাল-সবুজ পতাকা পেয়েছি। একটা দেশ পেয়েছি, একটা জাতি হিসেবে আত্মমর্যাদা পেয়েছি। এ মর্যাদাকে আরও উন্নত করা- সেটাই ছিল জাতির পিতার লক্ষ্য। মাতৃভাষা বাংলায় কথা বলার অধিকার আদায়ে সেই ১৯৪৮ সালে জাতির পিতা যে যাত্রা করেছিলেন, সেটাই ’৭১ সালে তাঁর নেতৃত্বে চূড়ান্ত বিজয় অর্জনের মধ্য দিয়ে একটি সফল পরিণতি লাভ করে। তিনি বলেন, যখনই জাতির পিতা যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়ে তুলে দেশকে উন্নয়নের পথে ধাবিত করা শুরু করেন, দুর্ভাগ্যক্রমে তখনই ’৭৫-এর ১৫ আগস্টের কালরাতে তাঁকে সপরিবারে নির্মমভবে হত্যা করা হয়। এ হত্যাকাে র মধ্য দিয়েই বাংলাদেশে হত্যা, ক্যু, ষড়যন্ত্র ও অবৈধভাবে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলের পালা শুরু হয়। মানুষের বেঁচে থাকার এবং প্রতি রাতে কারফিউ দিয়ে কথা বলার অধিকার পর্যন্ত কেড়ে নেওয়া হয়।

শিশু-কিশোরদের মেধা ও মনন গঠনে শিক্ষার পাশাপাশি খেলাধুলা, শরীরচর্চা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাে  অংশগ্রহণকে অপরিহার্য উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা ১৯৭৪ সালে আমাদের জন্য শিশু অধিকার আইন করে দিয়ে যান। এরই আলোকে আমরা নীতিমালা গ্রহণ করেছি এবং শিশুদের জন্য শিক্ষার পাশাপাশি খেলাধুলা ও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা আয়োজনের মাধ্যমে তাদের মেধা বিকাশের সুযোগ করে দিচ্ছি। তিনি বলেন, যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের সন্তানরা যাতে আধুনিক প্রযুক্তি শিক্ষায় দক্ষ হয়ে গড়ে উঠতে পারে তার পদক্ষেপ আমরা নিচ্ছি। আমরা ২০২০ সালে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদ্যাপন করব। ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী। আমরা ২০২০ থেকে ২০২১ পর্যন্ত সময়কে মুজিববর্ষ হিসেবে ঘোষণা দিয়েছি। সমাবেশ উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামের গ্যালারিকে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু, জাতীয় চার নেতা, মুক্তিযুদ্ধের সাত বীরশ্রেষ্ঠ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি ও বাংলাদেশের প্রাকৃতিক দৃশ্যাবলি দিয়ে সুসজ্জিত করা হয়। এর আগে সকাল ৮টায় প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছালে সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত পরিবেশিত হয়। প্রধানমন্ত্রী কোমলমতি শিশু-কিশোরদের কুচকাওয়াজ পরিদর্শন ও সালাম গ্রহণ করেন। কুচকাওয়াজের পর শিশু-কিশোর সমাবেশে এবারের থিম সং ‘নোঙর তোলো তোলো’ পরিবেশিত হয়। এ সময় একটি দৃষ্টিনন্দন নৌকা স্টেডিয়ামে প্রবেশ করে চারপাশে ঘুরে বেড়ায় এবং এর সঙ্গে গাড়িবহরের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকা  তুলে ধরা হয়। প্রধানমন্ত্রী সারা দেশের বিভিন্ন বিদ্যালয়ের শিশু-কিশোরদের পরিবেশনায় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও ডিসপ্লে উপভোগ করেন। প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে দেশব্যাপী স্কুলপর্যায়ে অনুষ্ঠিত শুদ্ধ সুরে জাতীয় সংগীত প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করেন। প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক এ তিন ক্যাটাগরিতে বিজয়ী ৯০ জনকে পুরস্কৃত করা হয়। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক ও ঢাকা জেলা প্রশাসক মো. আবু সালেহ মোহাম্মদ ফেরদৌস খান অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

সর্বশেষ খবর