বুধবার, ২৭ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা

আধুনিকতার ছোঁয়া বিচারাঙ্গনে

১৪০০ ই-আদালত কক্ষ, রায়ের কপি মিলবে অনলাইনে

আরাফাত মুন্না

বিচারপ্রার্থীদের দুর্ভোগ লাঘবে বিচারাঙ্গনকে ব্যাপক আধুনিকায়নের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এই আধুনিকায়নের মূল মাধ্যম হবে প্রযুক্তির ব্যবহার ই-জুডিশিয়ারি প্রকল্পের আওতায় সারা দেশে এক হাজার ৪০০ এজলাসকে ই-আদালত কক্ষে রূপান্তর করা হবে। সুপ্রিম কোর্টে কেন্দ্রীয় ডাটা সেন্টার স্থাপনের পাশাপাশি ৬৩ জেলায় স্থাপন করা হবে মাইক্রো ডাটা সেন্টার। এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে মামলা দায়ের থেকে শুরু করে রায়ের কপি পর্যন্ত সবই মিলবে অনলাইনে। অনলাইনেই জানা যাবে মামলার যাবতীয় তথ্য। আইন মন্ত্রণালয় ও সুপ্রিম কোর্ট সূত্র এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে। সূত্রগুলো জানায়, দুই হাজার ২১০ কোটি টাকার এ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য সম্প্রতি পরিকল্পনা কমিশনের প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি (পিইসি) সুপারিশ করেছে। শিগগিরই এটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (একনেক) সভায় অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে। অনুমোদন পেলে ২০২২ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কথা রয়েছে। সারা দেশে সাড়ে ৩৫ লাখ মামলা বিচারাধীন আছে। অথচ মামলা নিষ্পত্তির জন্য উচ্চ আদালতে ১০৩ জন এবং নিম্ন আদালতে ১ হাজার ৭৫০ জনের মতো বিচারক কর্মরত রয়েছেন। এ প্রেক্ষাপটে মামলাজট নিরসনে সরকার ও আইন মন্ত্রণালয় দীর্ঘমেয়াদে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। এর মধ্যে ‘ই-জুডিশিয়ারি’ ব্যবস্থা চালুর বিষয়টি উল্লেখযোগ্য। এর আগে ২০১৬ সালের মার্চে ইউএনডিপির অর্থায়নে সিলেট জেলা আদালতে সাক্ষ্য গ্রহণে ‘ভয়েস রেকর্ডিং’ ব্যবস্থা চালু করা হয়। এরপর সুপ্রিম কোর্টের পরামর্শ অনুসারে আইন মন্ত্রণালয় বিচার বিভাগে ‘ই-জুডিশিয়ারি’ চালুর বিষয়ে উদ্যোগ গ্রহণ করে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্মতিক্রমে এ প্রকল্প বাস্তবায়নের কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়। আইন মন্ত্রণালয় থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, প্রকল্পটির মূল কার্যক্রমে ১৪টি বিষয় নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছেÑ বিচার ব্যবস্থার জন্য এন্টারপ্রাইজ আর্কিটেকচার উন্নয়ন, এন্টারপ্রাইজ রিসোর্স প্ল্যানিং (ইআরপি) সফটওয়্যার উন্নয়ন, বিচার ব্যবস্থার সব অফিসের জন্য ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক (ভিপিএন) স্থাপন, আইন ও বিচার বিভাগের ডাটা-সেন্টার আপগ্রেডেশন এবং নেটওয়ার্ক অপারেশন সেন্টার স্থাপন, সুপ্রিম কোর্টের ডাটা সেন্টার আপগ্রেডেশন এবং নেটওয়ার্ক অপারেশন সেন্টার স্থাপন। প্রকল্পের আওতায় দেশের ৬৪ জেলায় মোট এক হাজার ৪০০টি আদালত কক্ষকে ই-আদালত কক্ষে রূপান্তর, ঢাকা জেলা ব্যতীত ৬৩ জেলায় মাইক্রো ডাটা সেন্টার স্থাপন, আইন ও বিচার বিভাগ এবং সুপ্রিম কোর্টের কেন্দ্রীয় ডাটা সেন্টারের সঙ্গে আন্তসংযোগ স্থাপন করা হবে। ই-জুডিশিয়ারি প্রকল্পের আওতায় আরও রয়েছে বিচারকদের জন্য দুই হাজার ট্যাব/ল্যাপটপ সরবরাহ, আগের মামলার রেকর্ড ও রায় ডিজিটাল পদ্ধতিতে সংরক্ষণ, ভিডিও কনফারেন্সিং সিস্টেমের মাধ্যমে সাক্ষ্যগ্রহণ এবং ডিজিটাল এভিডেন্স রেকর্ডিং, বায়োমেট্রিক অ্যাটেনডেন্স সিস্টেম স্থাপন, ই-কোর্ট রুম বাস্তবায়নের জন্য নতুন আইন প্রণয়ন ও প্রচলিত আইনসমূহের প্রয়োজনীয় সংশোধন, বিচার ব্যবস্থার কর্মকর্তাদের ডেস্কটপ কম্পিউটার সরবরাহ এবং বিচার ব্যবস্থার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ প্রদান। এ বিষয়ে আইন ও বিচার বিভাগের প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা যুগ্ম সচিব (প্রশাসন) বিকাশ কুমার সাহা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়নের বিষয়ে সম্প্রতি পরিকল্পনা কমিশনের প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি (পিইসি) সুপারিশ করেছে। আমরা এখন ডিপিপি সংক্রান্ত কিছু কাজ করছি। সব কাজ শেষ হলে শিগগিরই এটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (একনেক) সভায় অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে। প্রকল্পের বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের মুখপাত্র স্পেশাল অফিসার ব্যারিস্টার সাইফুর রহমান বলেন, ই-জুডিশিয়ারি প্রকল্পের মাধ্যমে বিচার বিভাগে আমূল পরিবর্তন আসছে। এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে বিচার প্রার্থীরা মামলার সব তথ্যই ঘরে বসে পাবেন। মামলা দায়ের থেকে রায়ের কপি সবই পাওয়া যাবে অনলাইনে। অনলাইনে ফি পরিশোধ করে রায়ের নকল সরবরাহেরও ব্যবস্থা থাকবে।

সর্বশেষ খবর