বুধবার, ২৭ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা

কেন্দ্রে ভোটার বাড়ানোর চ্যালেঞ্জে ইসি

উপজেলা ভোট চতুর্থ ধাপ ৩১ মার্চ

গোলাম রাব্বানী

২০১৪ সালে সর্বশেষ চতুর্থ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ৬২ থেকে ৬০ শতাংশ ভোট পড়লেও এবারে ভোটার উপস্থিতি ধাপে ধাপে কমে যাচ্ছে। প্রথম ধাপে ৪৩ শতাংশ ভোটার ভোটকেন্দ্রে আসলেও দ্বিতীয়-তৃতীয় ধাপে ভোটার উপস্থিতি হয়েছে ৪১ শতাংশ। এদিকে আগামী ৩১ মার্চ অনুষ্ঠিতব্য চতুর্থ ধাপের ভোটে কেন্দ্রে ভোটার আনা নিয়ে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন বিশ্লেষকরা মনে করছেনÑ কারসাজিপূর্ণ প্রক্রিয়ার কারণে মানুষ ভোটের ওপর আস্থা হারিয়েছে, ভোটকেন্দ্রে যাচ্ছে না। এজন্য মূলত নির্বাচন কমিশন ও স্টেকহোল্ডাররা দায়ী বলে মন্তব্য করছেন সুজন-সুশাসনের জন্য নাগরিক- সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার। তিনি বলেন, জাতীয় নির্বাচন থেকেই মানুষের আস্থাহীনতা সৃষ্টি হয়েছে। মানুষ ভোট দিতে গেলেও ভোট দিতে পারবে কি না? আবার ভোট দিলেও কোনো লাভ হবে কি না? এমন প্রশ্ন রয়েছে মানুষের মধ্যে। এজন্য ভোটের প্রতি মানুষের আস্থা বাড়াতে কারসাজিমুক্ত নির্বাচন করতে হবে। ইসির কর্মকর্তারা বলেছেন, ২০১৪ সালে সর্বশেষ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে গড়ে ৬১ শতাংশ  ভোটগ্রহণ হয়েছিল। ওই বার প্রথম পর্বে ৬২ দশমিক ৪৪ শতাংশ, দ্বিতীয় পর্বে ৬৩ দশমিক ৩১ শতাংশ, তৃতীয় পর্বে ৬৩ দশমিক ৫২ শতাংশ, চতুর্থ পর্বে ৫৬ দশমিক ১২ শতাংশ ও পঞ্চম পর্বে ৬০.৮৯ শতাংশ ভোট পড়ে। ২০০৯ সালে একদিনে সারা দেশে ভোট হয়। তাতে ৪৭৫টি উপজেলার মোট ভোটের হার ছিল ৬৭ দশমিক ৬৯ শতাংশ। 

এবার উপজেলার ভোট হচ্ছে পাঁচ ধাপে। এর মধ্যে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধাপের ভোট শেষ হয়েছে ১০ মার্চ, ১৮ মার্চ ও ২৪ মার্চ। দলীয় প্রতীকে এই প্রথম উপজেলা পরিষদ নির্বাচন হলেও বিএনপিসহ বেশিরভাগ দলের বর্জনের কারণে ভোটে লড়াইয়ের আমেজ দেখা যায়নি। প্রথম ধাপে ৪৩ শতাংশ, দ্বিতীয়-তৃতীয় ধাপে ৪১ শতাংশ ভোট পড়েছে। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী না থাকায় প্রথম ধাপে ২৮ জন বিনা ভোটে নির্বাচিত হন। দ্বিতীয় ধাপে নির্বাচিত হলেন ৪৮ জন। তৃতীয় ধাপে ৫৫ জন পার হন বিনা ভোটে। ইসির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ৩১ মার্চ চতুর্থ ধাপের উপজেলাগুলোতে হবে ভোট। পঞ্চম ও শেষ ধাপের ভোট হবে ১৮ জুন।

তৃতীয় ধাপে ৪১.৪১ শতাংশ : উপজেলা ভোটের তৃতীয় ধাপে ৪১.৪১ শতাংশ  ভোট পড়েছে। এর মধ্যে তৃতীয় ধাপে ১২২ উপজেলার মধ্যে ২৭ উপজেলায় ৫০ ভাগের বেশি ভোট পড়েছে। এ ধাপে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় সর্বোচ্চ ভোট পড়েছে ৭২.৯১ শতাংশ। আর সর্বনিম্ন ভোট পড়েছে লক্ষ্মীপুর সদরে ১৯.২৬ শতাংশ। ইসির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন,  গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় ভোট পড়েছে ৬২.২২ ভাগ, ঝিনাইদহের হরিণাকুে  ৬১.৯৩ শতাংশ, শরীয়তপুরের গোসাইরহাটে ৬০.৭৭ শতাংশ। এ ছাড়া ৫৯.৩৯ শতাংশ ভোট পড়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলায়, সাতক্ষীরার কলারোয়ায় ভোট পড়েছে ৫৯.৮১ শতাংশ। এ ধাপে আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান হয়েছেন ৮৩ জন ও স্বতন্ত্র-আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী ৩৮ জন, জাতীয় পার্টির একজন। এর মধ্যে ভোট ছাড়াই (বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায়) আওয়ামী লীগের ৩১ জন চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। 

দ্বিতীয় ধাপে ৪১.২৫ শতাংশ : ১৮ মার্চ অনুষ্ঠিত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপে ভোটার শূন্য ভোটকেন্দ্র থাকলেও গড়ে ৪১.২৫ শতাংশ ভোট পড়েছে। এর মধ্যে খাগড়াছড়ির মহালছড়ি উপজেলায় সর্বোচ্চ ৭৯.৬৭ শতাংশ ভোট পড়েছে। সিলেটের দক্ষিণ সুরমা উপজেলায় সর্বনিম্ন ভোট পড়েছে ৮.৬৩ শতাংশ, এ উপজেলায় ১ লাখ ৭০ হাজার ৪৫৯ ভোটের মধ্যে মাত্র ভোট দিয়েছেন ১৪ হাজার ৭০৪ জন। সেইসঙ্গে সিলেটের জৈন্তাপুরে ভোট পড়েছে ৯.৩৮ শতাংশ, গোয়াইনঘাটে ১৬.৫৩ শতাংশ এবং বগুড়া সদর উপজেলায় ভোট পড়েছে ১৩.১৩ শতাংশ। এ ছাড়া খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় ভোট পড়েছে ৭৮.১২ শতাংশ; ঠাকুরগাঁওয়ে বালিয়াডাঙ্গিতে ৭১.৪১ শতাংশ ভোট পড়েছে।

প্রথম ধাপে ৪৩ দশমিক ৩২ শতাংশ ভোট : উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপে ৪৩ দশমিক ৩২ শতাংশ ভোট পড়েছে। এর মধ্যে রাজশাহীর বাগমারা উপজেলায় সর্বনি¤œ ভোট পড়েছে ১৩.১৯ শতাংশ। আর পঞ্চগড়ের আটোয়ারী উপজেলায় সর্বোচ্চ ৭১.১৬ শতাংশ ভোট পড়েছে বলে জানিয়েছেন ইসির কর্মকর্তারা। এ ছাড়া ৭৮ উপজেলায় ভোট হয়েছে রবিবার আর তিন উপজেলায় আগেই সব পদে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়। সব মিলে ৮১ উপজেলার চেয়ারম্যান পদের ফলাফলে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন ৫৮টি এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী ২৩টিতে, তবে স্বতন্ত্রের মধ্যে অধিকাংশই আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ছিলেন।

সর্বশেষ খবর