বুধবার, ২৭ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা
তৃণমূলে স্বাস্থ্যসেবা

সমস্যা রোগে ধুঁকে মরছে

মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতাল

মেহেরপুর প্রতিনিধি

মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতাল নিজেই রোগী। আর এ রোগের নাম ‘সমস্যা রোগ’। হরেকরকম সমস্যার কারণে ধুঁকে মরছে এ হাসপাতাল। পর্যাপ্ত ডাক্তার নেই, ওষুধ নেই, যন্ত্রপাতি নেই, সিট নেই- ইত্যাদি সব সমস্যায় ডুবে আছে ২৫০ শয্যার এ হাসপাতাল। যে কারণে মানুষে চিকিৎসা এখানে অসম্ভব হয়ে পড়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানান, মেহেরপুর জেলাবাসীর উন্নত চিকিৎসার জন্য ১৯৯৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ১০০ শয্যার মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতাল। ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বরে তা ২৫০ বেডে রূপান্তর করা হয়। কিন্তু ২৫০ শয্যার সুযোগসুবিধা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে অনুমোদিত না হওয়ায় আগের ১০০ শয্যার কাঠামোতেই জোড়াতালি দিয়ে চালানো হচ্ছে সবকিছু। হাসপাতালে ৪১ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও আছেন মাত্র ১১ জন। নেই আবাসিক মেডিকেল অফিসার, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের ১২টি পদের মধ্যে ৬টি পদ শূন্য রয়েছে। ১৮ জন মেডিকেল অফিসারের মধ্যে আছেন মাত্র দুজন। নেই অ্যানেসথেটিস্ট, ডেপুটি নার্সিং সুপারিনটেনডেন্টও। এ হাসপাতালে গড়ে প্রতিদিন ১ হাজার থেকে দেড় হাজার রোগী আসেন চিকিৎসাসেবার আশায়। এজন্য ভর্তিও থাকেন ২০০ থেকে ২৫০ জন রোগী। কিন্তু তারা স্বচক্ষে দেখেন হাসপাতাল নিজেই রোগী হয়ে কাতড়াচ্ছে। জানা গেছে, হাসপাতালে ৫টি অত্যাধুনিক অপারেশন থিয়েটার ২৪ ঘণ্টা চালু থাকার কথা থাকলেও ডাক্তার ও নার্স না থাকায় চালু আছে মাত্র ২টি। বছরের পর বছর ধরে নেই বিশেষজ্ঞ ডাক্তার। বেডের অভাবে মেঝেতে কাটান রোগীরা। চাপ বাড়লে হাসপাতালের বারান্দায় ময়লা-আবর্জনা ও কুকুর-বিড়ালও সঙ্গী হয় রোগীর। সব মিলিয়ে অসুস্থতায় চিকিৎসা নিতে এসে রোগীসহ তাদের স্বজনরাও রোগী হয়ে ফেরেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইন্টারনেটের মাধ্যমে রোগীর রোগ নিয়ে বিশ্বের যে কোনো বিশেষজ্ঞের সঙ্গে যোগাযোগ করার পদ্ধতিসংবলিত অত্যাধুনিক ইকো-কার্ডিও আল্ট্রাসনোগ্রাফি মেশিন ২টি সরবরাহের সময় থেকে অকেজো হয়ে পড়ে আছে। প্রায় ৩৫ লাখ টাকা মূল্যের ১টি সেন্ট্রাল ভ্যাকুয়াম প্লান্ট মেশিন আচল হয়ে আছে। ৪২ লাখ টাকা মূল্যের ৩টি স্ট্রিম স্টেরিলাইজার অটোক্লেভ মেশিন, ২টি চক্ষু অপারেটিং মাইক্রোসকোপ ও ২টি স্প্রিট ল্যাম্প মেশিন বিশেষজ্ঞ না থাকায় গৃহবন্দী হয়ে পড়ে আছে দীর্ঘকাল। এখানে হৃদযন্ত্রে আক্রান্ত মুমূর্ষু রোগীকে কৃত্রিমভাবে সচল রাখতে ২টি প্যাথলজি মাইক্রোসকোপ ও ২টি ডি-ফ্রেবিলেটর মেশিন থাকলেও তা অচল হয়ে আছে। স্বয়ংক্রিয় বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য ৫০ লাখ টাকা মূল্যের উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ১টি জেনারেটর থাকলেও জ্বালানি বাজেট ও অপারেটর না থাকায় তা আজও চালু হয়নি। এসব ব্যাপারে মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালের যন্ত্রপাতি বিভাগের প্রধান ডা. তাপস কুমার পাল জানান, অনেক পত্র চালাচালির পর সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান কিছু যন্ত্রপাতি চালু করে দিয়েছে। অন্য যন্ত্রপাতিগুলো চালু করা গেলে রোগীদের আধুনিক অনেক চিকিৎসা এখানেই করা সম্ভব। হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. তাহাজ্জেল হোসেন বলেন, ‘দয়া করে রোগী রাখছি। তাদের ঘাড়ে ধাক্কা না দিয়ে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছি। এর পরও হাসপাতাল সম্পর্কে আপনারা এত খোঁজখবর নেন কেন?’

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর